বাগেরহাটের চিতলমারীতে গৃহবধু সাদিয়া বেগমকে (২২) হত্যাকারীদের আটক ও বিচারের দাবীতে বৃহস্পতিবার বিক্ষোভ মিছিল, পথসভা, মানববন্ধন ও স্থানীয় প্রশাসনের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেছে এলাকাবাসি। পাঁচ শতাধিক মানুষের বিক্ষোভ মিছিলে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে চিতলমারী উপজেলা পরিষদ চত্ত্বর, থানা সহ গোটা বাজার এলাকা। বিক্ষোভস্থলে কাঁদতে কাঁদতে বার বার মূর্ছা যান সাদিয়ার পিতা দরিদ্র কৃষক হেদায়েত তালুকদার। বিক্ষোভকারীদের আশ্বস্ত করেন পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায়, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অশোক কুমার বড়াল, থানার পরিদর্শক অনুকূল সরকার।
সাদিয়া বেগমের পিতা পাটরপাড়া গ্রামের কৃষক মোঃ হেদায়েত তালুকদার জানান, তার মেয়ের স্বামী জাকারিয়া শেখ মালয়েশিয়া থাকে। এই সুযোগে দীর্ঘদিন ধরে তার মেয়ের উপর শ্বশুর বাড়ির লোকজন নানামুখি নির্যাতন চালিয়েছে। গত সোমবার (২৭ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে সাদিয়ার শ্বাশুড়ী ফাতেমা বেগম, ভাসুরের স্ত্রী সাবিনা বেগম ও ভাসুরের ছেলে মাহমুদ শেখ সাদিয়াকে ব্যাপক মারপিট শেষে গলা টিপে হত্যা করে। হত্যার পর তারা সাদিয়ার লাশ ঘরের আড়ায় ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গৃহবধু সাদিয়া বেগমের বাবার গ্রাম পাটরপাড়া হতে শত শত নারী, পুরুষের বিক্ষোভ মিছিল পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ের সামনে জড়ো হয়। পরে সমবেত বিক্ষোভ মিছিল উপজেলা সদরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে যায়। সেখানে সড়ক অবরোধ করে পথসভা হয়। পথসভায় বক্তব্য রাখেন চিতলমারী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস-চেয়ারম্যান মোঃ রাশেদ শেখ। এরপর প্লাকার্ড, ব্যানার নিয়ে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে তারা মানববন্ধন করে। তারা সাদিয়া বেগমকে হত্যাকারীদের আটক ও বিচারের দাবীতে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট সাড়ে ১২টায় স্মারকলিপি প্রদান করেন। এরপর সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল থানায় গিয়ে থানা পরিদর্শক অনুকূল সরকারের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন।
চিতলমারী থানার পরিদর্শক অনুকূল সরকার জানান, বড়বাড়িয়া গ্রামের জাকারিয়া শেখের স্ত্রী সাদিয়া শ্বশুরবাড়িতে গত সোমবার মারা যায়। লাশ উদ্ধার করে মঙ্গলবার ময়না তদন্তে পাঠানো হয়। সাদিয়া বেগমের স্বামী বিদেশে থাকে এবং তাদের দাম্পত্য জীবনে মরিয়ম নামে তিন মাস বয়সী একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। বিদেশে অবস্থানরত স্বামীর সাথে সাদিয়ার মনোমালিন্য ছিল। ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এই ঘটনায় থানায় সাদিয়ার শ্বাশুড়ী ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে। অপরদিকে সাদিয়ার বাবা দাবী করেছেন তার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে।