চট্টগ্রাম কারাগারে থেকেও বাঁচতে পারেননি পেশাদার শীর্ষ সন্ত্রাসী অমিত মুহুরী। একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত কারাগারের চার দেয়ালের ভেতরেই খুন হয়েছেন মুহুরী। আর প্রতিবাদে তার সাঙ্গপাঙ্গরা ঘটনার রাতে চমেক হাসপাতালে ভাঙচুরও চালায়। ওই অমিত মুহুরীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৭টি মামলা আছে। তার মধ্যে ৬টিই খুনের মামলা।
একাধিক সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম শহরের শীর্ষ সন্ত্রাসী অমিত মুহুরী (৩২) বুধবার গভীর রাতে কারাগারেই খুন হয়েছেন। কারাগারের ৩২ নম্বর সেলে রিপন নাথ নামের অপর কয়েদির ইটের আঘাতে মাথার পেছনে গুরুতর আঘাত পান অমিত। এরপর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত সোয়া একটায় তিনি মারা যান। অমিত মুহুরী যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর বাবরের অনুসারি হিসেবে পরিচিত। তার বাবার নাম অরুণ মুহুরী। থাকেন শহরের নন্দনকানন গোলাপ সিং লেন। প্রতিবাদে তার সাঙ্গপাঙ্গরা ঘটনার রাতে দলবদ্ধ হয়ে চমেক হাসপাতালে ভাঙচুরও চালায়। পরে পুলিশ তাদেরকে ধাওয়া করে।
চমেক হাসপাতালের সহকারী রেজিস্টার খুরশিদ আনোয়ার চৌধুরী বলেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অমিতের মৃত্যু হয়েছে। তার মাথার পেছনের দিকের আঘাত গুরুতর ছিল। হাসপাতালে আনার পর থেকেই তাকে অক্সিজেন দিয়ে রাখা হয়েছিল। অমিত মুহুরী বিগত ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট নন্দনকানন হরিশদত্ত লেনের ছয়তলায় নিজ বাসায় যুবলীগ নেতা ইমরানুল করিম ইমনকে খুন করেন। তখন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অমিত মুহুরী বলেছিলেন, ইমনকে টানা দুইদিনে খুন করা হয়। প্রথমদিন তার হাতের আঙ্গুল কাটা হয়। পরদিন কুপিয়ে ও গলায় ছুরি চালিয়ে জবাই করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত করার পর লাশটি প্রথমে পোড়া হয়। এরপর দুই সহযোগীসহ ইমরানের লাশ এসিড ও চুন মিশিয়ে গলে যাওয়ার জন্য সেটি নিজ বাসাতেই একটি ড্রামে ভরা হয়। পরে ড্রামের ওপরে সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে এনায়েতবাজার রাণীর দিঘিতে ফেলে দেওয়া হয়। গত বছরের ১৩ আগস্ট লাশভর্তি ড্রামটি উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ২ সেপ্টেম্বর নগর গোয়েন্দা পুলিশ কুমিল্লার একটি মাদকাসক্ত কেন্দ্রে ছন্দবেশে থাকা অবস্থায় অমিত মুহুরীকে গ্রেপ্তার করেন।
এর আগে ২০১৩ সালের ২৪ জুন শহরের রেলওয়ে সিআরবিতে সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল আলম লিমন গ্রুপের সঙ্গে কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর বাবরের গ্রুপের সংঘর্ষে আরমান নামের এক শিশু ও সাজু পালিত নামের এক যুবলীগ কর্মী খুন হন। রেলওয়ের দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়েই দুইপক্ষ খুনাখুনিতে জড়ায়। অমিত মুহুরী বাবরের পক্ষে ওই ঘটনায় অংশ নেন। তিনি এ সংক্রান্ত মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিও। গত ২০১২ সালে আগ্রাবাদ জাম্বুরি মাঠে কিশোর ইমরান উল্লাহ রাসেল নামের নবম শ্রেণীর এক শিশুকে খুন করেন অমিত। রাসেলের বাবা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারী হাবিব উল্লাহ। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার ছেলে রাসেলকে তুচ্ছ ঘটনায় প্রচন্ড মারধর করেন অমিত মুহুরী। মাঠে মুমূর্ষ অবস্থায় পড়েছিল। পরে খবর পেয়ে হাসপাতালে এনে ভর্তি করি। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাসেল মারা যায়।
২০১৬ সালে রিয়াজ উদ্দিন বাজারের জনতা মার্কেটে নাজিম উদ্দিন খুন, ২০১৭ সালে একই এলাকায় সিটি কলেজের ছাত্র ইয়াসির খুন এবং বাকলিয়ায় গুলিতে ছাত্রলীগ নেতা তানজীর খুন মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি এ অমিত মুহুরী। স্থানীয় সূত্র যায়, ২০১৭ সালের পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে ডিসি হিল এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা চালায় অমিতের নেতৃত্বে একদল যুবক। এ ঘটনায় পুলিশ ২৮ এপ্রিল তাকে গ্রেপ্তার করে। কিন্তু এরপর ২৬ জুন জামিনে বের হয়ে আসে। এর একমাস যেতে না যেতেই বন্ধু ইমরানকে খুন করেন। পুলিশের দাবি- সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান ছিল অমিত মুহুরীর। ধারাবাহিক হত্যাকান্ডের পাশাপাশি তার পৈশাচিক আচরণের কারণে নিজ দলের নেতাকর্মীরাও তটস্ত থাকতেন।
এদিকে এটিকে ‘পরিকল্পিত হত্যাকান্ড’ ধরেই তদন্ত শুরু করেছেন পুলিশ। এখন পর্যন্ত মুখ খুলেনি আসামী রিপন নাথ। কারাগারে থাকা রিপন নাথকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন জানানো হবে। এর আগে বৃহস্পতিবার দায়ের হওয়া এ মামলার তদন্তভার দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগকে। এতে নগর গোয়েন্দা পুলিশের দাবি- রিপন নাথ ইয়াবা আসক্ত।