লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের ধরলা নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারন করেছে। নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে আবাদি জমি ফলের বাগান বাঁশ ঝাড়, গর-বাড়িসহ অনেক স্থাপনা। ভাঙ্গন রোধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রুপ নিতে পারে বলে স্থানীয়রা মনে করছেন। বর্তমানে ভাঙ্গন আতঙ্কে সেখানকার শত শত পরিবারকে অনেকটাই নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকা চওড়াটারী ও কর্ণপুর এলাকার চওড়াটারী এই গ্রাম দুটিতে ধরলা নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারন করেছে। গেল তিন সপ্তাহ ধরে সীমান্তের এই গ্রাম দুটিতে ধরলা নদীর ভাঙ্গন ভাঙ্গন চলছে। ভাঙ্গন পরিস্থিতি তীব্র আকার ধারন করেছে।
কারন হিসেবে সেখানকার অধিবাসীরা বলছেন, বড় বড় রোল্ডার দিয়ে ভারতের উজানে ভোগবান্ধা-গিদালদহ এলাকায় নির্মান করা হয়েছে পাথর বোল্ডারের বাঁধ। ফলে ধরলার নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে বাংলাদেশের দিকে ধাবিত হচ্ছে। ফলে কৃষির উপর নির্ভরশীল সীমান্তের মানুষগুলোর আবাদি জমি নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে তাই বিস্মিত হয়ে পড়েছেন তারা। আর ভাঙ্গন হুমকীতে রয়েছে তাদের অনেক আবাদি জমি বসতভিটা। ইতোমধ্যে গ্রাম দু’টির দুইশোরও বেশী বিঘা আবাদি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে বলে ওই এলাকার ভুক্তভোগী লোকজন জানিয়েছেন। এ ছাড়া আরো হুমকীর মুখে রয়েছে অনেক ঘরবাড়ীসহ আবাদি জমি।
অব্যাহত ভাঙনে আবাদি জমি ফলের বাগান বাঁশ ঝাড়। জমিজমা হারিয়ে নি:স্ব হচ্ছেন সীমান্তের লোকজন। কৃষির উপর নির্ভরশীল সীমান্তের মানুষগুলোর আবাদি জমি নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে তাই বিস্মিত হয়ে পড়েছেন তারা। আর ভাঙ্গন হুমকীতে রয়েছে তাদের বসতভিটা। যেকোন সময় তারা হতে পারেন গৃহহীন মানুষ।
শনিবার (১ জুন) সকালে সরেজমিনে মোগলহাট ইউনিয়নের নদীভাঙ্গণ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘর-বাড়ি রক্ষা করতে অনেকে বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে অন্যত্র নিয়ে যাচ্ছেন। ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে ঘরবাড়ী আবাদি জমিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা দেখে নদী তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী পরিবারগুলোর অনেকেই বাড়ি-ঘর সরিয়ে ফেলছেন নিরাপদ স্থানে। কেটে ফেলছেন মূল্যবান সব গাছ-পালা।
সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে ছিল ছোট নদী গিদারী। আকস্মিক ভাবে ধরলা এসে মিলিত হয় গিদারীর সাথে। আর ধরলা হয়ে উঠে গ্রাসী। গ্রাস করছে সবকিছু। পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থানীয় প্রশাসন আর জন প্রতিনিধিদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন ভাঙ্গন কবলিত সীমান্তের মানুষ কিন্তু মিলছেনা কোন উপকার।
কর্ণপুর গ্রামের গ্রামের পনির আলী বলেন, হামার আবাদি জমি নদীত যাবার নাগছে বাহে। এ্যালা হামারগুলার কি হইবে, সরকার যদি বাঁধ নির্মান করি দিল হয় তাহলে হামার এ অবস্থা হইল না-হয় বাহে।
কথা হয় এলাকার এক বয়োবৃদ্ধ আলী আফছার (৭২)সাথে তিনি বলেন, প্রায় ২কিলোমিটার উজানে ভারত পাথরের বোল্ডার দিয়ে বাঁধ নির্মান করায় ধরলা নদী গতিপথ পরিবর্তন করায় বাংলাদেশের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এ কারণে সীমান্তের দুটি গ্রামে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙ্গন পরিস্থিতির।
নদী পাড়ের মানুষের অভিযোগ বিভিন্ন সময়ে একের এক এক জনপ্রতিনিরা পরিদর্শনে গিয়ে সান্তনার বানী শোনালেও ভাঙ্গন রোধে কোন স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। এদিকে ভাঙ্গন কবলিত মানুষগুলো নদীর তীরে দাঁড়িয়ে নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকছেন নদী গর্ভে চলে যাওয়া বাপ-দাদার পৈতৃক দির্ঘদিনের সব আবাদি জমি।
কর্নপুর এলাকার কৃষক জমির উদ্দিন বলেন, দুই কিলোমিটার উজানে ভারত পাথরের বোল্ডার দিয়ে বাঁধ দেয়ায় ধরলা নদী গতিপথ পরিবর্তন করে ধাবিত হয়েছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। আমাদেও বাংলাদেশ সীমান্তের দুটি গ্রামে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙ্গন পরিস্থিতির। ইতোমধ্যে নদী গর্ভে চলে গেছে আবাদি জমি ফলের বাগান বাঁশ ঝাড়। এখনো ভাঙ্গন হুমকীতে রয়েছে এখানকার দুই সহ¯্রাধিক গ্রামবাসীর বসতভিটা। তাই আমরা এই দুই গ্রামের মানুষজন অনেকটাই নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি।
মোগলহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, মোগলহাট ইউনিয়নের চওড়াটারী ও কর্ণপুর গ্রামের দুটি পয়েন্টে প্রবল ভাঙ্গন দেখা দেওয়ায় সেখানকার অধিবাসীরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তিনি ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে পদক্ষেপ নেয়ার দাবী জানিয়েন। খবর পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ নদী ভাঙ্গনরোধে কাচ শুরু করেছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এটিএম বজলে করিম জানান, মোগলহাট ইউনিনের চওয়ড়াটারী ও কর্ণপুর এ দুটি পয়েন্টে ধরলা নদীভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙ্গন প্রতিরোধের জন্য বরাদ্দ চেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্র্র্র্র্র্তৃপক্ষের নিকট আবেদন প্রেরন করা হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় বাঁধ নির্মানের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এদিকে, বসতবাড়ী, আবাদি জমি ও গুরুত্বপূর্ণ সকল স্থাপনা নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষার্থে সরকার দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করবেন এই প্রত্যাশা ভাঙ্গন কবলিত এলাকার মানুষজনের। যদিও প্রাথমিক ভাবে ভাঙ্গন রোধে আমরা কাজ করছি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউর আরিফ বলেন, লোক মুখে জানতে পেরেছি মোগলহাট ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা চওড়াটারী ও কর্ণপুর এলাকার চওড়াটারী এই গ্রাম দুটিতে ধরলা নদীর ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারন করেছে। বিষয়টি তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সীমান্তবর্তী গ্রাম দুটি ও শত শত বিঘা আবাদি জমি রক্ষা করতে প্রাথমিকভাবে ভাঙ্গন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে জানিয়েছেন।