রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাউসা ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট এ্যন্ড বিএম কলেজের শিক্ষক আসরাফুজ্জামান সুমনের পরিবারে নেই ঈদের আনন্দ। দেড় বছরের তেহা জামান একটু পর পর বাবার খোঁজ করছে। বড় মেয়ে সুমাইয়া আকতার (৯) মায়ের কাছে জানতে চাইছে, বাবা কি আর কখনো আসবেনা। এবার কি ঈদে নতুন কাপড় কিনা হবে না ? মায়ের কাছে নেই প্রশ্নের কোন উত্তর। বাবা দুই শিশুকে রেখে ২৭ মে পৃথিবীতে থেকে চিরদিনের জন্য বিদায় নিয়েছে। আর কখনো ফিরে আসবেনা।
জানা যায়, শিক্ষক আসরাফুজ্জামান সুমন ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর পুরাতন ঋণ শোধ করার জন্য সোনালী ব্যাংক বাঘা শাখা থেকে থেকে ৫ লাখ ঋণ উত্তোলন করে বাড়ি ফিরছিল। এ সময় বাঘা-লালপুর সড়কের তিন খুঁটি নামক স্থানে ছিনতাইকারী কবলে পড়েন। মাইক্রোবাস নিয়ে তার গতিরোধ করে দিনে দুপুরে তার টাকা লুট করে নিয়ে যায় ছিনতাইকারী। এলাকাবাসী ছিনতাইকারীদের ঘেরাও করে মাইক্রোবাসসহ এক ছিনতাইকারীকে হাতেনাতে আটক করা হয়। মাইক্রোবাসসহ ছিনতাইকারী ধরা পড়লেও পুলিশ সেই টাকা উদ্ধার করতে পারেনি। ঋণ শোধ করার জন্য ওই শিক্ষককে আবারও ঋণ করতে হয়। এই ঋণের চাপ সহ্য করতে না পেওে হার্ডস্টোকে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় শিক্ষক আসরাফুজ্জামান সুমন।
বাউসা ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট এ্যন্ড বি,এম কলেজের শিক্ষক রবিউল ইসলাম জানান, দুটি শিশুর এতিম হওয়া খুবই কষ্টের। বাবার মৃত্যুতে অবুঝ দুই শিশুর ভবিষ্যত অন্ধকার হয়ে গেল। আসরাফুজ্জামান সুমন বাউসা ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট এ্যন্ড বি,এম কলেজের শিক্ষক হিসেবে ২০১৩ সালে এপ্রিল মাসে এমপিও ভুক্তি হন। ফলে ভালো চলছিল তার সংসার।
এ বিষয়ে সুমনের পিতা আবু তাহের উদ্দিন বলেন, আমার ছেলের টাকা ছিনতাই হওয়ার পর দিশেহারা হয়ে পড়েছিল। টাকা ছিনতাইয়ের পর ঘটনাস্থলে একজন ধরা পড়ে। তার কাছে থেকে চারটা মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। মাইকোবাসের মালিক আদালত থেকে মাইক্রোর জামিন করে নিয়েছে। মাইক্রোর চালকসহ আরেকজন আসামি গত বছরের ৩০ আগস্ট ঢাকার ধামরাইয়ে ধরা পড়ে। তাকে রিমান্ডে লালপুর থানায় আনা হলো, কিন্তু ছেলের টাকা উদ্ধার হলো না। এই টাকা উদ্ধারের জন্য ছেলের সঙ্গে আমি নাটোরের পুলিশ সুপারের কাছে গিয়েছিলাম। একজন আইজিপির কাছে গিয়েছিলাম। থানায় ফোন দিলে ওসি বলেন, ব্যবস্থা করছি। থানায় গেলে ওসি মাইক্রোর মালিককে ফোন করে বলেন, ‘টাকার জোগাড় হলো ? গরিব কলেজ শিক্ষক এসে বসে আছেন। ফোন ছেড়ে দিয়ে বলেন, চাচা, বাড়ি ফিরে যান। ছিনতাইকারী-সন্ত্রাসীরা কখনো টাকা ফেরত দেয় না।’ ঋণের টাকার কারণে ছেলে ‘হার্ট অ্যাটাকে’ মারা গেল। হাসপাতালে নেয়ার সময় পাওয়া গেল না। রাস্তার মধ্যে ছেলে চলে গেল। ছেলের দুটি মেয়ে সন্তান আছে। তাদের জন্য ঈদের নতুন জামা কাপড় কেনা হয়নি। আর এক দিন পর ঈদ।
বাউসা ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট এ্যন্ড বি,এম কলেজে অধ্যক্ষ রেজাউল করিম বলেন, দিন কারো জন্য থেমে থাকেনা, এবাবে চলে যাবে।
শিক্ষক আসরাফুজ্জামান সুমন নাটোরের লালপুর উপজেলার দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের পাইকপাড়া গ্রামের আলহাজ¦ আবু তাহের উদ্দিনের ছেলে।