ময়লা আর আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে লালমনিরহাট পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। রাস্তা দিয়ে চলাচল করাই যাচ্ছে না। পৌ এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় ময়লার স্তুপ জমে থাকায় সেগুলো পচে দুর্গন্ধ বাহির হওয়ায় রাস্তা চলাচলে অনুপোযুক্ত হয়ে পড়েছে। শহরের বর্জ্য নিষ্কাশনে অব্যবস্থাপনার ফলে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনায় পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ছে। পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে আবর্জনা ফেলার ডাস্টবিন না থাকায় ব্যবসায়ী ও বাসাবাড়ির নিত্যদিনের ময়লা-আবর্জনা যেখানে-সেখানে ফেলছে। এতে করে শহরের পরিবেশ দুষিত ও নোংরা হচ্ছে শহর।
ঈদ-উল-ফিতর উদযাপনের পাঁচ দিন পেরিয়ে গেলেও সোমবার (১০ জুন) দুপুর পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানের ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে ফেলার কোন উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্টরা। আর এসব বর্জ্য অপসারণের অব্যবস্থাপনার কারণে পরিবেশ দূষিত হওয়ার পাশাপাশি দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন লালমনিরহাট পৌরবাসী।
সংশ্লিষ্টরা জানান, লালমনিরহাট পৌরসভাটি কাগজে-কলমে প্রথম শ্রেণীর হলেও জনবল কাঠামোসহ নানা সংকটে শহরের পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। শহরের ময়লা অপসারণের জন্য পৌরসভার পানি ব্যবস্থপনা কার্যালয়ের পাশে একটি গর্ত ভাগাড় হিসেবে ব্যবহৃত হলেও প্রকৃত অর্থে আজ পর্যন্ত কোন কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা দুর্গন্ধে বাতাস দূষিত হয়ে পড়ছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে মাঝে মধ্যেই টানা বর্ষণে জমে থাকা ময়লা যত্রতত্র ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দুর্গন্ধে আবাসিক এলাকার মানুষ, শিক্ষার্থী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অফিস-আদালতগামী মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
জানা গেছে, লালমনিরহাট পৌরসভাটি ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। পৌরসভাটি রংপুর বিভাগের অন্তর্গত লালমনিরহাট জেলা সদরের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত। এর পূর্বপাশে কুলাঘাট ইউনিয়ন, উত্তরে মোগলহাট ইউনিয়ন, দক্ষিণে মহেন্দ্রনগর ইউনিয়ন এবং পশ্চিমে সাপটিবাড়ি ইউনিয়ন অবস্থিত। এই পৌরসভায় মোট ৯টি ওয়ার্ড রয়েছে। পৌরসভার মোট আয়তন ১৭.৪০ বর্গকিলোমিটার। ২০০৫ সালে এটি দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে প্রথম শ্রেণীর পৌরসভায় উন্নীত হয়। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী পৌরসভার মোট জনসংখ্যা ৬২,৪৬৭।
১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এ পৌরসভায় এখনও সুষ্ঠু বর্জ্য অপসারনের ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। পৌরসভার সাধারণ মানুষের দাবি, ময়লা ফেলার ডাম্পিং গ্রাউন্ড (ময়লা ফেলার ভাগাড়) থাকলেও তা ব্যবহারে অব্যবস্থপনা রয়েছে। ফলে যত্রতত্র ময়লা ফেলার কারণে সামান্য বৃষ্টিতে ময়লা আবর্জনা গুলো পঁেচ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। তবে পৌরসভা পরিচ্ছন্নকর্মীদের দাবি, তারা নির্দিষ্ট সময়েই ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সুরকিমিল, খোর্দ্দসাপটানা, শাহজাহান কলোনী, মিশনমোড় থেকে কুলাঘাটগামী শহরের প্রধান শড়কের দু’পাশে, নবাবের হাট সংলগ্ন, নর্থবেঙ্গল রোড, কুড়াটারী, খোচাবাড়ি, শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশন মোড়ের আশপাশে অস্থায়ীভাবে ময়লার স্তুপ আকারে পড়ে আছে দীর্ঘ সময় ধরে। পরিচ্ছন্নকর্মীরা মাঝে মধ্যে আবর্জনা ফেলতে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোয় গেলেও অধিকাংশ স্থানের ময়লা দিনের পর দিন পড়ে থাকছে। ফলে সামান্য বৃষ্টির পানিতে এসব ময়লার স্তুপ যত্রতত্র ছড়িয়ে পড়ছে, সৃষ্টি হচ্ছে মশা-মাছির আবাসস্থল। অপরদিকে শহরের আলোরূপা সিনেমা হলের পেছনে পুকুর এবং ঢাকা স্টান্ডের পিছনে ময়লার স্তুপ করে রাখার কারণে পুরো এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। বর্তমানে ওইসব এলাকায় এই ময়লা আবর্জনার দুর্গন্ধে বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দুর্গন্ধের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না ব্যবসায়ী, পথচারীরা ও শিক্ষার্থীরাও। এসব ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলার কারণে গন্ধ আরও তীব্র থেকে আরো তীব্রভাবে ছড়িয়ে পড়ছে শহরজুড়ে।
শহরের প্রানকেন্দ্র মিশনমোড়ের ব্যবসায়ী বাদশা মিয়া, রমজান আলী, মনতাজ আলী, হোটেল ব্যবসায়ী গোবিন্দ, স্থানীয় অধিবাসী রানিছা বেগম, শাহানা খাতুনসহ অনেকে বলেন, ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধের কারণে শহরের মানুষ এখন অতিষ্ঠ। হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোতে চা, নাশতা খাওয়ার পরিবেশ নেই। রাস্তা-ঘাটে যত্রতত্র ময়লা ও আবর্জনা ফেলায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, পৌর শহর থেকে দূরে নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা-আবর্জনা মজুদ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা জরুরি হয়ে পড়েছে।
শহরের সাপটানা এলাকায় বসবাসকারী অনেক পরিবার জানায়, আবর্জনার কারণে মশা মাছির উপদ্রুপ বেড়েই চলেছে। যার কারণে তাদের ছেলে মেয়েরাসহ পরিবারের সবাই প্রায়ই নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এই ময়লা আবর্জনার অপসারনের জন্য পৌর মেয়রকে একাধিকবার বলা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
লালমনিরহাট পৌরসভার পরিছন্নতা পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ জানান, শহরের আবর্জনা অপসারনের জন্য ঝাড়ুদার রয়েছে ৯৪ জন, ড্রেন ক্লিনার আছে ২৪ জন, আবর্জনা ফেলার লেবার রয়েছে ২১ জন। এ ছাড়া আবর্জনাবাহী ট্রলি ৬টি এবং ট্রাক রয়েছে ৩টি। কিন্তু ট্রাকগুলি মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে অনেক আগেই (প্রায় চল্লিশ বছর আগে কেনা)। ফলে একটি ঠিক থাকলে অপরটি সচল না করার কারণে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।
তিনি বলেন, আমাদের চাহিদার চেয়ে ৩টি ট্রাক কম রয়েছে। এ ছাড়া আবর্জনা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অপসারনের জন্য ৩টি হাইড্রোলিক ট্রাক প্রয়োজন যা এর আগে ছিল। তবে নষ্ট হওয়ায় পৌরসভা চত্বরে দির্ঘদিন থেকে সেগুলো পড়ে আছে। এদিকে পৌরসভা চত্বরের শেডে থাকা একটি ট্রাকের ব্যাটারি কয়েকদিন আগে চুরি হয়ে গেছে। তাঁর দাবী স্থানীয় একটি চক্র প্রায়ই এ ধরনের চুরির ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। ফলে যানবাহন সংকটে শহরের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে তাঁর দাবী।
পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কিসমত আলী বলেন, “পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা ‘গাড়ি নষ্ট’, ‘দেরি হবে’ ইত্যাদি নানাভাবে টালবাহানা করেন।” এ বিষয়ে তিনি মেয়রের নিকট অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দেন।
লালমনিরহাট পৌরসভার মেয়র রিয়াজুল ইসলাম রিন্টু পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের গাফিলতির বিয়ষটি স্বীকার করে বলেন, ময়লা-আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এই অবস্থা আর বেশিদিন থাকবে না। তিনি শহরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও কার্যকর করতে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দেন।