খুলনার পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাস্টাররোলে ১৪ বছর কর্মরত ৯ নারীকর্মীর আশাভঙ্গ হলো। একদিন জাতীয়করণ হবে এ আশায় ১৪ বছর ধরে নামমাত্র বেতন ভাতায় তারা কাজ করে যাচ্ছেন। স্থানীয় কর্মরতদের বঞ্চিত করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বহিরাগতদের। আউট সোর্সিং-এর মাধ্যমে জনবল নিয়োগ দেওয়ায় স্থানীয় মাস্টার রোলে কর্মরত ৯ নারী কর্মীকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
সূত্র মতে, ৩০ শয্যার হাসপাতাল ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও বৃদ্ধি করা হয়নি প্রয়োজনীয় জনবল। ফলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন জনবল সংকট রয়েছে। প্রয়োজনীয় জনবলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংকট রয়েছে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। ফলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নামমাত্র বেতন ভাতার মাধ্যমে ৯জন মাস্টাররোল কর্মচারীকে দিয়ে হাসপাতালের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা সহ বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করে আসছেন।
কর্মরতদের মধ্যে রয়েছে, পৌরসভার সরল গ্রামের মেহের আলী গাজীর স্ত্রী হাফিজা খাতুন, মৃত সুজায়েত গাজীর স্ত্রী নাসরিন বেগম, দেবদুয়ার গ্রামের মৃত শেখ সাজ্জাত আলীর স্ত্রী আরিজা বেগম, বাতিখালী গ্রামের মুন্সী আবদুর রশিদ সরদারের মেয়ে নাসিমা খাতুন, সবুর শেখের স্ত্রী হালিমা খাতুন, সরল গ্রামের আবদুস সাত্তারের স্ত্রী নাজমা বেগম, মৃত মালেকের স্ত্রী জেলেখা খাতুন, মর্জিনা খাতুন ও শুক্লা সহ ৯ নারী কর্মচারী। কর্মরতরা বেশির ভাগ সবাই ১৪ বছর ধরে নামমাত্র বেতন ভাতায় কর্মরত থেকে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছে। বিভিন্ন সময় তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চাকরি নিয়মিত করণের বিষয়ে অবহিত করলে কর্তৃপক্ষ তাদেরকে আশ্বাস দিয়ে আসলেও গত ১৪ বছরেও তাদের চাকরি জাতীয়করণ হয়নি।
সম্প্রতি খুলনার তাকদীর এন্টারপ্রাইজ নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আউট সোর্সিং নিয়োগের মাধ্যমে ৩০ জন কর্মচারী নিয়োগ পেয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ইতোমধ্যে ২০-২৫ জন যোগদানও করেছে। নিয়োগপ্রাপ্ত এসব কর্মচারীদের মধ্যে মাস্টাররোলে কর্মরত কোনো কর্মচারীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি। অনেকের অভিযোগ লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে স্থানীয় কর্মরতদের উপেক্ষা করে বহিরাগতদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কর্মচারী নাসরিন বেগম এফএনএসকে জানান, আমি ১৪ বছর ধরে হাসপাতালে কর্মরত রয়েছি। বর্তমান দ্রব্য মূল্যের উর্দ্ধগতির এ সময়ে দৈনিক ১শ টাকা হাজিরার ভিত্তিতে কাজ করে আসছি। যে টাকা বেতন পাই তাতে সংসার চলে না। তারপরও একটি সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় ছিলাম। কিন্তু সম্প্রতি আউট সোর্সিং-এর মাধ্যমে অসংখ্য কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়া হলেও আমরা যারা মাস্টাররোলে রয়েছি তাদের কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ ঘটনার পর আমরা সবাই হতাশ হয়ে পড়েছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএসএম মারুফ হাসান এফএনএসকে জানান, ২৬ মে থেকে যোগদানের কথা উল্লেখ করে ৩০জন কর্মচারীর একটি নিয়োগপত্র আমরা হাতে পেয়েছি। যেখানে আমাদের এখানে মাস্টাররোলে যারা কর্মরত রয়েছে তাদেরকে কারো নাম নাই। বিষয়টি দেখে আমরাও হতবাক হয়েছি। বিষয়টি নিয়ে সিভিল সার্জন মহোদয়ের সাথে কথাও বলেছি। মানবিক দিক বিবেচনা করে নূন্যতম অর্ধেক কর্মচারীকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য সুপারিশও করেছি। আশাহত ওই নারীকর্মীরা স্থানীয় সংসদ সদস্য, স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।