টাঙ্গাইলে বাসভাড়া বৃদ্ধির খপ্পরে দিশেহারা হয়ে উঠেছেন কর্মস্থলে ফেরা যাত্রীরা। ঈদযাত্রার শেষ দিন ঢাকা টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের তীব্র যানজটে এ জেলার ঘরমুখো যাত্রীদের ভোগান্তির রেশ কাটতে না কাটতেই মরার উপর খরার ঘাঁ হয়ে দাঁড়িয়েছে এই বাসভাড়া বৃদ্ধি আর আদায় কার্যক্রম। ঈদ যাতায়াতের এই লাগামহীন বাসভাড়া বৃদ্ধিতে চরম বিড়ম্বনায় পরেছেন এখন ঢাকায় বসবাসরত জেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার যাত্রীরা। এতে ক্ষুব্ধ নারীর টান আর প্রিয়জনের সাথে উৎসব পালনের আশাবাদী কর্মজীবি যাত্রীরা এখন ভাড়া বৃদ্ধির প্রবনতামুক্ত পরিবহন আইনের দাবি তুলেছেন। তবে বাস মালিক নেতৃবৃন্দের দাবি বাসভাড়া কিছুটা বৃদ্ধি করা হলেও যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধায় অন্যান্য বারের তুলনায় চলাচল করছে পর্যাপ্ত বাস সার্ভিস। এছাড়াও টাঙ্গাইল থেকে ঢাকাগামী যাত্রীরা ভাড়া কিছুটা বেশি দিলেও ঢাকা থেকে ওই বাসগুলোই টাঙ্গাইল ফিরছে সম্পূর্ণ যাত্রী শূণ্য হয়ে।
বাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির বাস সংখ্যা ৮ শতাধিক। এর রাজধানী ঢাকার কল্যাণপুর থেকে টাঙ্গাইল এবং টাঙ্গাইল থেকে ঢাকা এ সড়কে চলাচলরত এসি বাসের সংখ্যা ১২টি। এছাড়াও সরাসরি ননএসি বাস সার্ভিসের মধ্যে নিরালা সুপার সার্ভিসের বাস সংখ্যা ৫৩টি, ধলেশ্বরী বাসের সংখ্যা ৫৬টি আর ঝটিকা বাসের সংখ্যা ১৪টি। এর মধ্যে সোনিয়া আর সকাল সন্ধ্যা নামে দুটি এসি বাস সার্ভিসের গাড়ীর নির্ধারিত ভাড়া ২৫০ টাকা, নিরালা সুপার সার্ভিসের ভাড়া ১৬০ টাকা ধলেশ্বরী ১৩০ ও ঝটিকা সার্ভিসের ভাড়া ১৩০ টাকা।
ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ, রাজধানী ঢাকার পাশর্^বর্তী জেলা টাঙ্গাইল। প্রায় ৪০ লাখ মানুষের আবাসস্থল এই জেলা। এ জেলার উল্লেখযোগ্য নারী ও পুরুষ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চাকুরী অথবা ব্যবসায় লিপ্ত রয়েছেন। জীবনের তাগিদে নিজ জেলা আর পরিবার পরিজন ছেড়ে অন্যত্র কর্মস্থল নির্ধারণ করলেও বছরের অন্যান্য মাসে পরিবার পরিজনের পাশে থাকতে না পারলেও বছরের দুই ঈদের ছুটিতে পরিবারের সংস্পর্শে আসেন জেলার এই কর্মজীবী মানুষগুলো। তবে প্রতি ঈদেই এভাবে বাসভাড়া বৃদ্ধি পেলে চরম হয়রানীর শিকার হন তারা। ঈদ যাত্রায় ঘরমুখো আসার পথে ঈদ বোনাস হিসেবে বাসভাড়া কিছুটা বেশি নিলে তেমন কষ্ট না লাগলেও ফেরার পথে এই বেশি পরিমানে ভাড়া নেয়াটা খুবই দুঃখজনক।
এ নিয়ে ক্ষুব্ধ যাত্রী সুমন মিয়ার অভিযোগ, এসি বাস সার্ভিস সোনিয়া ও সকাল সন্ধ্যার ২৫০ টাকার ভাড়া যাত্রীদের বেকায়দায় ফেলে আদায় করছে ৪০০ টাকা। তবে এই অস্বাভাবিক ভাড়া বৃদ্ধি স্বত্তেও নীরব ভূমিকা পালন করছেন জেলার আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বশীল প্রশাসন।
ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়-য়া শিক্ষার্থী নাসরিন এর অভিযোগ, যাতায়াতের উভয় সময়ই যদি তাদের নির্ধারিত বাসভাড়ার অধিক টাকা দেয়াটা অনেকটাই কষ্টকর হয়ে উঠেছে। এ পরিস্থিতি রোধে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সুধিমহলের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
বাসভাড়া বৃদ্ধি কথা স্বীকার করে টাঙ্গাইল জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার ইকবাল হোসেন জানান, অন্যান্য জেলার মত টাঙ্গাইলে বাসভাড়া বৃদ্ধি পায়নি। এসি সার্ভিসে ১৫০ ও নন এসি সার্ভিসের নিরালা সুপারে ৯০, ধলেশ্বরী সার্ভিসে ৭০ আর ঝটিকায় বেড়েছে মাত্র ২০ টাকা। তবে এ ভাড়া বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে তার দাবি, টাঙ্গাইল থেকে ঢাকাগামী এই বাসগুলো বেশি ভাড়ায় গেলেও ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলে ফিরছে সম্পূর্ণ যাত্রী শূণ্য হয়ে। এই পরিমানে ভাড়ার টাকা বেশী যদি বাস যাত্রীরা না দেন, তাহলে দেখা যাবে ঢাকা টাঙ্গাইলের যাত্রীরা বাস সঙ্কটে পরবেন বলেও জানান তিনি। এ বাস সঙ্কট দেখা দেয়ার শঙ্কা প্রসঙ্গে তিনি আরো জানান, এ জেলা বাস ভাড়া নিয়ে বেশি ভাড়ায় যাত্রী পরিবহনের কাজে খাটাচ্ছেন অন্যান্য জেলার ব্যবসায়ীরা। এতে টাঙ্গাইলের বাস মালিক ও শ্রমিক পাচ্ছে আরো বেশি টাকা। তবে এ জেলার যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার কথা ভেবেই একটা ভাড়া বৃদ্ধি করেও এই পরিবহন সেবাটুকু নিশ্চিত করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, ভাড়া বৃদ্ধি না করার জন্য মালিক ও শ্রমিক সমিতিকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ স্বত্তেও যদি ভাড়া বৃদ্ধির মাধ্যমে যাত্রী হয়রানী চালানো হয়, তবে এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেছেন তিনি।