আওয়ামী লীগ সরকারের ঘোষিত দেশের ৪৮তম বাজেট ভাবনায় রাজশাহীর শীর্ষ রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ ব্যবসায়ী নেতারা এবারও পক্ষে বিপক্ষে মতামত প্রদান করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকালের বাজেট ঘোষণা পরবর্তি প্রতিক্রিয়া নিয়ে শুক্রবার সন্ধা পযর্ন্ত সাংবাদিকদের কাছে ইমেল যোগে বার্তাও প্রেরণ করেছেন রাজশাহীর রাজনৈতিক নেতা, বিশিষ্ট ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী নেতারা। তাদের প্রেরিত বার্তা ও সাক্ষাতকারে উঠে এসেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
সদ্য প্রতিমন্ত্রীর পদ মর্যাদাপ্রাপ্ত রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর চলতি মেয়াদের প্রথম বাজেটটি জনকল্যাণ ও উন্নয়নমুখী। এর আকার যাই হোক না কেন সম্ভাবনাময়ী বাংলাদেশের জন্য এখন এর বাস্তবায়নই বড় কথা। এজন্য প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা। তবে এ বাজেট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে সহায়ক হবে।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। জাতির জনকের সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন শেখ হাসিনা। এ বাজেট সেই স্বপ্নপূরণে সহায়ক হবে এবং আরও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।’
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেছেন, ‘এ বাজেট এমন এক সময় এলো, যখন আগামী বছরই বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তার বাস্তবায়নে এ বাজেট সহায়ক ভুমিকা রাখবে। তবে বাজেটে কিছু বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাজেটে বিভিন্ন সংকট সমাধানে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যার অনুপস্থিতি রয়েছে। যেমন, এবার কৃষকের ধান নিয়ে দেখা দেয়া বড় সংকটের সমাধান পরিস্কার করা হয়নি। এছাড়াও ঘোষিত বাজেট অনুযায়ি আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে বেকার সমস্যার সমাধান কিভাবে হবে তা স্পষ্ট করা হয়নি। ফলে এটা সম্ভাবনার কথা হলো না। আর বাজেটের কারণে দ্রব্যমূল্য বাড়বে না এমনটি অর্থমন্ত্রী বললেও তার বাস্তবতা সম্ভব নয়। কারণ, কিছু নিত্যপণ্যের দাম বাড়বেই। তাই নিত্যপণ্য এবং শিশুখাদ্যের মূল্য যেন না বাড়ে বিষয়টি আরও ভালোভাবে পর্যালোচনা করা দরকার।’
এদিকে ঘোষিত বাজেটের সম্পুর্ন পক্ষে মতামত দিয়ে রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার বলেন, ‘সরকারের ২০১৯-২০ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেট গণমুখি এবং ব্যবসাবান্ধব। এ বাজেট পাস হলে দেশের কাঙ্খিত উন্নয়ন হবে। সরকার মধ্যম আয়ের দেশ বিনির্মাণের যে স্বপ্ন দেখছে তা পূরণেও সহায়ক হবে। বাজেটে সরকার দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কথা চিন্তা করার পাশাপাশি বাজেটে দেশের উন্নয়নের কথাও বিবেচনা করা হয়েছে।’
এবারের বাজেটে গরীব মানুষের জন্য কিছু নেই বলে মন্তব্য করে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা রাজশাহীর সাবেক এমপি ও মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বলেছেন, ‘বাজেট দেওয়ার নৈতিক অধিকার এই সরকারের নেই। এ কারণেই তারা ধনীদের আরও ধনী করার বাজেট দিয়েছে। ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার মধ্যদিয়ে আরো অনেক ব্যাংক কে দেউলিয়া করে দেওয়া হবে। বেকারত্বের অভিশাপ মুক্তের উপায় না বের করে অবাস্তব এই ঘোষিত বাজেটের কারণে আরো বেকারত্বের সংখ্যা বেড়ে যাবে।’
বাজেটে রাজশাহীর মানুষকে শুভঙ্করের ফাঁকি দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনি বলেছেন, ‘এটি চ্যালেঞ্জিং বাজেট। তবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করা হলে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) অর্জন ও এ বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব।’
বাংলাদেশ রেশম শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মো. লিয়াকত আলী বলেছেন, ‘ঘোষিত এ বাজেট প্রস্তাবটি সরকারের স্বপ্নপূরণের বাজেট। এটি পাস হওয়ার পর বাস্তবায়িত হলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন হবে। গত অর্থবছরের বাজেটটি নির্বাচনী থাকলেও এবারেরটি সরকারের ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের বাজেট। তবে সার্বিকভাবে বাজেট কল্যাণকর হলেও কিছু ঘাটতি রয়েছে। সেটা পূরণ করতে সরকারকে দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে হবে। তা না হলে বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য খারাপ হবে।’
উল্লেখ্য, সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ, সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের এই স্লোগানে বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) সংসদ অধিবেশনে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়।