জামালপুরের রেল যাত্রীরা টিকেট প্রাপ্তির বিড়ম্বনায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। প্রিয়জনদের সাথে ঈদ করতে আসা শত শত নারী পুরুষ রেলযাত্রী নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে যেতে এখনও চরম বিড়ম্বনার আর দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। ঈদের আমেজ শেষ হয়েছে বেশ কিছু দিন আগেই। এখনও প্রতিদিনই জামালপুর রেলওয়ে স্টেশন প্ল্যাটফর্মে শত শত নারী-পুরুষ ঢাকায় ফেরার জন্য ভীড় করছে। জামালপুর থেকে ঢাকার সড়ক পথ ভালো না হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ বাধ্য হয়ে ট্রেনেই চলাচল করে থাকেন। একদিকে ট্রেনের টিকেট না পাওয়া আর আন্যদিকে প্রচন্ড ভীড়ে যাত্রীরা এখন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। জামালপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রতিদিন চারটি আন্তঃনগর ও দুইটি বেসরকারী ট্রেন চলাচল করে থাকে। শুক্রবার দুপুরে সরজমিনে জামালপুর রেলওয়ে স্টেশন প্ল্যাটফর্মে গিয়ে দেয়া যায়,শতশত নারী পুরুষ তাদের ছোট ছেলে মেয়েদের সাথে নিয়ে কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ সময় ধরে টিকেটের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। ঢাকাগামী কোন ট্রেন স্টেশনে আসামাত্রই বাধ্য হয়ে আসন বিহীন টিকেট নিয়েই তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করছেন।
চলতি বছরের ২ মে থেকে রেলওয়ে সেবা এ্যাবস্ এর মাধ্যমে মোট টিকেটের ৫০ শতাংশ অন লাইনে বিক্রি শুরু হয়েছে। এর ফলে কাউন্টারে সকল ট্রেনের নির্ধারিত টিকেটের সংখ্যা অর্ধেক হয়ে গেছে। আর এ কারনের সাধারন যাত্রীরা কোন অবস্থাতেই কাউন্টার থেকে ট্রেনের সময় কোন টিকেট সংগ্রহ করতে পারছে না। তা ছাড়া ট্রেনে চলাচলকারী ভিআইপি যাত্রীদের কোন টিকেট সংরক্ষণ করে রাখার সুযোগ না থাকায় প্রতি দিনই স্টেশন মাস্টারের সাথে ভিআইপি যাত্রীদের বাকবিতন্ডা হচ্ছে। জামালপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মো.শাহাবুদ্দিন জানান,পূর্বে ট্রেনের কিছু টিকেট ভিআইপি যাত্রীদের জন্য ব্লক করে রাখা যেতো। ট্রেন ছাড়ার আগ মুহূর্তেও ব্লক থেকে টিকেট ছাড়িয়ে ভিআইপি যাত্রীদের সহযোগিতা করা যেতো। এখন সেই ব্লক সিস্টেম আর নেই। নির্ধারিত ট্রেনের টিকেট ট্রেন যাত্রার ১০ দিন আগেই বিক্রি হয়ে যায়। অপরদিকে রেলওয়ে সেবা এ্যাবস্ এর মাধ্যমে মোট টিকেটের ৫০ শতাংশ টিকেট অন লাইনে চলে যাওয়ায় কাউন্টারে টিকেটের চাপ আরো বেড়ে গেছে।
জামালপুর প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান ডল বলেন,রেলওয়ে সেবা এ্যাবস্ এর মাধ্যমে বিক্রির জন্য রাখা ৫০ শতাংশ টিকেটের বেশীরভাগই কিছু অসাধু ব্যক্তিদের মাধ্যমে কালাবাজারীদের হাতে চলে যাচ্ছে। আর তাই টিকেট কাউন্টারে টিকেটের এত সংকট দেখা দিয়েছে। শহরের দেওয়ানপাড়া এলাকার বাসিন্দা ট্রেন যাত্রী বাদশা মিয়া বলেন,কাউন্টারে কোন টিকেট না পেয়ে আমি বাধ্য হয়ে একশত ৬০ টাকা মূল্যের অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ট্রেনের একটি শোভন টিকেট আটশত টাকা দিয়ে টিকেট কালোবাজারীর কাছ থেকে সংগ্র করেছি।
জামালপুর রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার শেখ উজ্জ্বল মাহমুদ বলেন,অন লাইনে অর্ধেক ট্রেনের টিকেট চলে যাওয়ায় কাউন্টারে টিকেটের সংখ্যা অর্ধেক হয়ে গেছে। বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে তাই যাত্রীরা কাউন্টারে টিকেট না পেয়ে আমাদের শরণাপন্ন হচ্ছে। কিন্তু টিকেট ব্লক সিস্টেম না থাকায় আমার তাদেরকে কোনভাবেই টিকেট দিয়ে সহযোগিতা করতে পারছি না।
জামালপুর পৌরসভার ১নং প্যানেল মেয়র ফজলুল হক আকন্দ বলেন, ব্লক সিস্টেম না থাকায় হঠাৎ জরুরী কাজে ঢাকায় যাওয়ার দরকার হলে আমরা কোনভাবেই কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে পারি না। তাই আমাদেরকেও বাধ্য হয়ে টিকেট কালোবাজারীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্যে টিকেট ক্রয় করতে হচ্ছে।
সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার সাধারন সম্পাদক জাহঙ্গীর সেলিম বলেন,যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে ঢাকা-জামালপুর রেলপথে কমপক্ষে আরো দুইটি আন্তঃনগর ট্রেন খুবই জরুরী। তিনি বলেন,এ জেলা শহরে অনেক ভিআইপি ব্যক্তি রয়েছেন যাদের জন্য অবশ্যই ট্রেনের টিকেটের ব্লক সিস্টেম পুনরায় চালু করা দরকার। আশা করছি রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবশ্যই বিষয়টি বিবেচনা করবেন।