১৯৫৭ সালে পূর্ব পাকিস্তানে “ইপসিক নামে যে প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়, স্বাধীনতা উত্তরকালে তারই নাম বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন বা বিসিক শিল্পনগরী”। এ প্রতিষ্ঠানটির মূল লক্ষ্য ছিল অস্বচ্ছাল ও বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্যমানুষের আয় বাডানো, দারিদ্র্য বিমোচন, সম্পদের যথাযথ ব্যবহার, মানষিকভাবে আতœবিশ্বাসি হওয়া এবং অঞ্চলিক ও সামাজিক ভারসাম্য নিশ্চিত করা। সংস্থানটি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৫৬ সালে যুক্তফ্রন্টে কোয়ালিশন সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব বাঙালির জন্য এ বিলটি সংসদে উত্থপন করেন বলে জানা যায়।
১৯৬০-৬৫ সালের পঞ্চবার্ষিকী ২০টি শিল্প নগরীর প্রকল্প অনুমোদনের সিদ্ধান্তের মধ্যে স্বরুপকাঠি(নেছারাবাদ) উপজেলার কৌরিখাড়া মৌজায় ১৯৬১ সালের ৮ আগস্ট ২৪.৭৪ একর জমি অধিগ্রহন করে তৎকালীন সরকার দুঃস্ত, অসহায়,ও নিম্ম-আয়ের মানুষদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টির লক্ষ্যে যে প্রকল্প অনুমোদন হয় সেটিই পিরোজপুর জেলা একমাত্র ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পনগরী যা স্বরুপকাঠি বিসিক শিল্প নগরী নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বরুপকাঠি (নেছারাবাদ) শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠায় তখনকার সময় প্রকল্পিত ব্যয় ধরা হয় ৫২.৮৮ লাখ টাকা। জেলার একমাত্র স্বরুপকাঠি বিসিক অফিস সূত্রে জানা যায়, বিসিকের আওতাধীন প্রতি একর জমির মূল্য ১৯.০৪ লাখ টাকা। অধিগ্রহন জমির মধ্যে প্লটভ’ক্ত জমি ১৭.৫৭ একর, অভ্যন্তরীন খাল ৩.৭১ একর, রাস্তা ও ড্রেন ২.৭০ একর, প্রশাসনিক কাজে ভবনসহ জমি ০.৫৫ একর এবং পাম্প ও পাওয়ার হাউসে রয়েছে ০.২১ একর জমি। এ শিল্প নগরীতে প্লটভুক্ত ১৭.৫৭ একর জমির উপর মোট প্লট সংখ্যা ১৬৭ হলেও এর মধ্যে উন্নত প্লট ১৩৪টি এবং অনুন্নত প্লট সংখ্যা ৩৩টি। এসব প্লটের মধ্যে বরাদ্দকৃত প্লট ১২৫টি এবং বরাদ্দের অপেক্ষায় ৪২টি প্লট রয়েছে। আবার ১৬৭টি প্লটকে জমির আয়তন ও ধরন অনুযায়ী ৪টি ভাগে বিভক্ত করা হয়-১৫,০০০ বর্গফুট থেকে ৩৪.৪৩ শতাংশ ‘এ’ টাইপ ৯টি, ৯০০০ বর্গফুট থেকে ২০.৬৬ শতাংশ ‘বি’ টাইপ ২১টি, ৬,০০০ বর্গফুট থেকে ১০.৩৩ শতাংশ ‘সি’৫৩টি টাইপএবং ২২৫০ বর্গফুট থেকে ৫.১৬ শতাংশ জমি ‘ডি’ টাইপ ৮৪টি। চালু, বন্ধ ও প্রক্রিয়াধিন অবস্থায় মোট ৯৫টি শিল্প ইউনিটের মধ্যে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় রয়েছে ৬৯টি, রুগ্ন শিল্প ইউনিট ৭টি, বাস্তবায়নাধীন ১৯টি ইউনিট। চালুকৃত ইউনিটগুলোতে সরকারের আর্থিক সহায়তা আর শিল্পউদ্যোক্তাদের পুজি সমন্বয়ে এ বিসিকে মোট বিনিয়োগ প্রায় ৬৩.৪৫ কোটি টাকা এবং কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৪ হাজার অস্বচ্ছল নারী-পুরুষের। উনিশত ষাটের দশকের পর থেকে এসব শ্রমিকরা বছরে প্রায় ৩২ কোটি টাকার উৎপাদিত পণ্য প্রত্যক্ষ্য-পরোক্ষভাবে বৈহিরবিশ্বে রপ্তানী হচ্ছে। স্বরুপকাঠি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের উল্লেখযোগ্য ইন্ডাস্ট্রিজগুলো- বিস্কুট ফ্যাক্টরি, ক্রিকেট ব্যাটও ইষ্টাম তৈরির কারখানা, ছোবরা শিল্পের ফ্যাক্টরি, স-মিল, রোপ ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রিজ, কাঠের আসবাবপত্র ও ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রিজ, বেকারী ফ্যাস্ট্ররি, বাঁশজাত পণ্য শিল্প, মসল্লা ফ্যাষ্টরি আয়ুর্বেদীয় ফ্যাষ্টরি, কেমিক্যাল ইন্ডাষ্ট্রিজ ও খাদ্যজাতশিল্প, সেনিটারি, ববিন ইন্ডাস্ট্রিজ, জুতা তৈরী ও পোশাক শিল্পসহ আরও ছোট-বড় প্রায় ১১টি শিল্প ইন্ডাষ্ট্রিজ রয়েছে। গত ৮ বছর ধরে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে শতকরা প্রায় ৯৬ ভাগ রাজস্ব আয় হয়েছে। এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফিলতি আর অসাধু কিছু ব্যাবসায়ীদে তথ্য গোপনীয়াতায় প্রতি বছর সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা।
গ্রামীন দারিদ্র বিমোচনে বিসিক শিল্পউদ্যোক্তাদের উন্নয়নে দু‘স্তর বিশিষ্ট প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়নের পর এ প্রতিষ্ঠানটিতে পল্লীর নকশীকঁথার উন্নয়ন, কারুশিল্পীদের দ্বারা কাঠের পুতুল, বাঁশ বেতের ও কাঠজাত পণ্য তৈরী, পাটজাত হস্তশিল্প, মৃৎশিল্প, বিভিন্ন প্রাণীর চামড়া ও পরিত্যক্ত প্লাষ্টিক রি-ফ্রেস করে বিদেশে রপ্তানী ইত্যাদি ক্ষেত্রে আগ্রহী নারী-পুরুষ শ্রমিকরা গ্রামীণ শিল্প উন্নয়নের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি তেজীকরণ আয়বর্ধক কর্মকান্ডের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন এবং ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পউন্নয়নের মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে স্বরুপকাঠির(নেছারাবাদ) বিসিক শিল্পনগরীর কুটির, হস্ত,কারুশিল্পের শতাধিক প্রডাক্টের বাহ্যিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশ-বিদেশে এখানকার শিল্পপণ্যগুলোর চাহিদা উত্তোরোত্তর বেড়ে চলছে।