বাংলাদেশ রেলওয়েূর পুরনো ইঞ্জিন যাত্রাপথে ঘন ঘন বিকল হয়ে পড়ছে। ফলে ট্রেনের যাত্রা সিডিউল ঠিক রাখা যাচ্ছে না। একদিনে একটি ট্রেনের ৩টি ইঞ্জিন বিকলের ঘটনাও ঘটেছে। হঠাৎ করেই রেলের ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা বেড়ে গেছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হচ্ছে। যা একই রুটের অন্যান্য ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে রেলের ইঞ্জিন সরবরাহ ও মেরামত বাড়ানো না গেলে রেলসেবা ভঙ্গুর হয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি সপ্তাহে সিলেটের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া আন্তঃনগর ট্রেন কালনী এক্সপ্রেসের পথিমধ্যে পরপর তিনবার বিকলের ঘটনা ঘটে। এতে গন্তব্যে পৌঁছতে ট্রেনটির সাড়ে ৫ ঘণ্টা বিলম্ব হয়। ওই কারণে বিভিন্ন সেকশনে দীর্ঘ সময় আটকে থাকে বেশ কয়েকটি ট্রেন। মে মাসে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে রেকর্ডসংখ্যক ইঞ্জিন বিকল হয়। আন্তঃনগর, মেইল, লোকাল ও গুডস ট্রেন মিলিয়ে ২৯টি ইঞ্জিন বিকল হয়। অর্থাৎ প্রতিদিনই কোনো না কোনো ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হচ্ছে। ২৯টি ট্রেনের ইঞ্জিন বিকলের কারণে আরো ১৭টি ট্রেন বিভিন্ন সেকশনে বিলম্বিত হয়েছে। ২৯টি বিকলের ঘটনায় আন্তঃনগর ট্রেনেই সবচেয়ে বেশি ১১টি ইঞ্জিন বিকল হয়েছে।
সূত্র জানায়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে লোকোমোটিভের সংখ্যা ১৫০টি। তার মধ্যে কার্যকর রয়েছে ১০৫টি। তাছাড়া ওয়ার্কশপে রয়েছে ২০টি, মেরামতের জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে ২৫টি। যদিও সর্বশেষ ওয়ার্কিং টাইম টেবিল অনুযায়ী বিদ্যমান ট্রেনগুলো স্বাভাবিক পরিচালনায় ন্যূনতম ১১১ থেকে ১১৫টি ইঞ্জিনের প্রয়োজন। তবে ১০০টি ইঞ্জিন দিয়ে কোনো রকমে ট্রেন পরিচালনা করে আসছে রেলওয়ের পরিবহন বিভাগ। সর্বশেষ ১১১টি ইঞ্জিনের চাহিদার বিপরীতে প্রকৌশল বিভাগ থেকে সরবরাহ দেয়া হয়েছে মাত্র ৯৮টি। ওই কারণে প্রতিদিন চাহিদার তুলনায় স্বল্প ইঞ্জিন সরবরাহ ও ইঞ্জিন বিকলের ঘটনায় রেলের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, পূর্বাঞ্চল রেলের ১৫০টির মধ্যে মাত্র ৩১ শতাংশ বা ৪৭টি ইঞ্জিন অর্থনৈতিক আয়ুষ্কালের মধ্যে রয়েছে (২০ বছর)। তাছাড়া ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৩৪টি এবং ৩০ বছরের অধিক বয়সী ইঞ্জিন রয়েছে ৬৯টি। অর্থাৎ পূর্বাঞ্চল রেলের মোট ইঞ্জিনের ১০৩টিই মেয়াদোত্তীর্ণ। ফলে যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোর শিডিউল কোনো রকমে ঠিক রাখা হলেও রেলের জন্য লাভজনক মালবাহী ট্রেনগুলো বসিয়ে রাখা হয়। পশ্চিমাঞ্চলে ১২৪টি ইঞ্জিন থাকলেও নিয়মিত সর্বোচ্চ ১০০টি পাওয়া যায়। পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ৭০ শতাংশ ইঞ্জিন মেয়াদোত্তীর্ণ থাকায় বিভিন্ন সময় শিডিউল টাইমে গন্তব্যে পৌঁছতে না পারাসহ পথিমধ্যে ইঞ্জিন বিকলের সংখ্যা বাড়ছে। পূর্বাঞ্চলে রেলের বহরে সর্বশেষ ইঞ্জিন যুক্ত হয় ২০১১ সালে। ওই সময় দক্ষিণ কোরিয়া থেকে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ১১টি এবং ২০১৩ সালে পশ্চিমাঞ্চলের জন্য ৩৯টি ইঞ্জিন আমদানি করা হয়। তারপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও রেলের বহরে কোনো ইঞ্জিন আমদানি হয়নি। তাতে চাহিদা বাড়লেও ইঞ্জিনের প্রাপ্যতা কমে যাওয়ায় লাভজনক রুটে ট্রেন বৃদ্ধি করতে পারছে না রেলওয়ে। এমনকি নির্ধারিত রুটের ট্রেনগুলোয় শিডিউল বিপর্যয়, ট্রেনের যাত্রা বাতিল ছাড়াও পথিমধ্যে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাত্রী ভোগান্তির পরিমাণ বাড়ছে।
এদিকে যাত্রাপথে ট্রেনের ইঞ্জিন বিকলের বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান জানান, ঈদের কারণে ইঞ্জিনগুলোর ওপর বিশেষ চাপ পড়েছে। সাপ্তাহিক বন্ধ না থাকায় দুই সপ্তাহ ধরে টানা চলতে থাকা ইঞ্জিনগুলো হঠাৎ করেই বিকল হচ্ছে। বর্তমানে রেলওয়ের ওয়ার্কশপও ঈদ-পরবর্তী ছুটি কাটিয়ে খোলা হয়েছে। আশা করা যায়, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ইঞ্জিন বিকলের ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।