বাড়ছে হত্যা। থামছেনা স্বজনদের কান্না। বিগত দেড় বছরে বাগেরহাটের চিতলমারীতে এমনই অবস্থা। এপর্যান্ত ঘটছে অনেক খুন-গুমের ঘটনা। অপহরণ,গুম খুন, এবং আত্মহত্যা যেন মহামারী আকার ধারণ করেছে। বিগত দেড় বছরে চিতলমারীর নিরহ সাধারন মানুষ গুলোর প্রতিটা মূহুর্ত কাটছে আতঙ্কে। গুমের পর লাশ পাওয়া যায় ডোবা ও নালায়। বৃদ্ধ থেকে হত্যার শিকার হয়েছে অবুঝ শিশুর। বাবার সামনে শিশু সন্তানের লাশ আর ছেলের সামনে বাবার লাশ; এধরনের অস্বাভাবিক হত্যা কান্ডের চাঞ্চল্যকার ঘটনা ঘটছে বিগত প্রায় দেড় বছর ধরে।
হত্যা ও আত্মহত্যায় এপর্যান্ত যাদের প্রাণ গিয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে; এক শিশু,এক কিশোর,এক যুবক, এক বৃদ্ধ,এক গৃহবধু, এক কলেজছাত্রী ও দুই স্কুল ছাত্রী।
এই ৮ জনের মধ্যে হত্যা শিকার হয়েছেন উপজেলার শেরে বাংলা ডিগ্রী কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র সবুজ বিশ্বাস। সবুজ নিখোঁজের পর গত ১৩ আগস্ট দুপুরে তার হাত-পা বাঁধা কাঁথায় মোড়ানো লাশ থানার সন্নিকটের বাকের বিশ্বাসের একটি ডোবা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেন জেলা পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায়।
গত ৮ সেপ্টেম্বর শনিবার বিকাল সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার মেলার কুল গ্রামের হেমায়েত হোসেনের ছেলে আনোয়ার হোসেন নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিখোঁজের দু’দিন পর হাত-পা বাঁধা বস্তাবন্ধি অবস্তায় তার লাশ পাওয়া যায় উপজেলার মাছুয়ারকুল এলাকার একটি মৎস্য ঘেরের মধ্যে থেকে।
গত ২ এপ্রিল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে উপজেলার খিলিগাতী গ্রামের রুবেল হাওলাদার কে প্রতিপক্ষরা প্রকাশ্যে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে। সে বাগেরহাট সরকারী পিসি কলেজের ¯œাতক দ্বিতিয় বর্ষের মেধাবী ছাত্র ছিল। জেলা পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায় ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেন।
এদিকে গত ১৭ জুন অপহরণের দুই দিন পর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সরকারী বঙ্গবন্ধু মহিলা ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ কাওছার আলী তালুকদারের শিশুপুত্র খালিদ তালুকদারের ক্ষত-বিক্ষত লাশ একটি মৎস্য ঘের থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেন জেলা পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায়।
আত্মহত্যার শিকার হতে হয়েছে সাদিয়া আক্তার নামে এক গৃহ বধুকে। গত ৩০ মে শ্বশুর বাড়ীর একটি ঘরের আড়ায় গলে ফাঁস দেয়া অবস্থায় তার মৃতদেহ উদ্ধর করে থানা পুলিশ। এব্যপারে বিক্ষোভ মিছিল, পথসভা, মানববন্ধন ও স্থানীয় প্রশাসনের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন এলাকাবাসি। সাদিয়া আক্তারকে প্রবাসী স্বামীর পরিবারের লোকজন হত্যাকরে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালায় এই ছিল সাদিয়ার বাবা মায়ের অভিযোগ।
গত ৫ এপ্রিল সকালে উপজেলার চরশৈলদাহ গ্রামের নবম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী সানজিদা অক্তার মীম বখাটেদের উত্যাক্ততার কারণে নিজ পড়ার রুমের আড়ার সাথে গলে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। সে উপজেলার মুক্তবাংলা চারিপল্লি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী ছিল। এব্যপারে বিক্ষোভ মিছিল, পথসভাও মানববন্ধন করে তার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবগণ।
এ ছাড়া বিগত ২৬ সেপ্টেম্বর এক লম্পট কর্তৃক ফেসবুকে আপত্তিকার ছবি পোষ্ট করায় কলেজ শিক্ষার্থী দিশা নামের এক কিশোরী গাছের ডালে গলে ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। দিশা উপজেলার কালিদাস বড়াল স্মৃতি ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী ছিল। আলোচিত এসকল ঘটনার প্রেক্ষিতে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধনও বিক্ষোভ মিছিলসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন এলাকার সাধারণ জনগণ।
এছাড়া গত ১৭ জুন সকালে চিতলমারী হাসিনা বেগমমাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেনীতে পড়-য়া মেধাবী ছাত্রী তৃষা রহস্যজনক ভাবে তার শয়ন কক্ষের সিলিংফ্যানের সাথে ওড়না বেঁধে গলে ফাঁস লাগিয়ে আত্ম হত্যা করে।