লবণাক্ত ভূমি খুলনার পাইকগাছায় এবার কাঁঠালের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিকূল আবহাওয়া, লবণাক্ত মাটি সহ চাষাযোগ্য ভূমি সীমিত হওয়া শর্তেও এলাকার কাঁঠাল স্থানীয় বাজারে ব্যাপক উঠছে। তবে মৌসুম শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় কাঁঠালগুলো আকারে কিছুটা ছোট হয়েছে। এ ছাড়া অব্যাহতভাবে নির্বিচারে নির্ধণ যে হারে কাঁঠাল গাছ হ্রাস পাচ্ছে সে ভাবে চাঁরা রোপন করা হচ্ছে না। প্রথমদিকে কাঁঠালের দাম বেশি থাকলেও বর্তমানে বাগান মালিকরা আশানারূপ দাম না পাওয়ার অভিযোগ করছেন।
উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মধ্যে গদাইপুর, হরিঢালী, কপিলমুনি, রাড়-লী ইউনিয়নে ৬০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ হয়। তবে চাঁদখালী ইউনিয়ন ও পৌরসভার আংশিক এলাকায় কিছুকিছু কাঁঠাল গাছ রয়েছে। এলাকায় পরিকল্পিত ভাবে কাঁঠাল বাগান গড়ে ওঠেনি। তবে মিশ্র বাগানে কাঁঠাল গাছ রয়েছে। ঘুর্ণিঝড় আইলায় এলাকায় ব্যাপক প্লাবিত হওয়ায় পরবর্তী সময়ে অনেক কাঁঠাল গাছ মারা যায়। কাঁঠাল কাঁঠের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এলাকার বড় বড় গাছ গুলো দ্রুত বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া সেভাবে কোনো কাঁঠাল বাগান গড়ে তোলা হয়নি। আগের মতো এলাকায় বড় কোন কাঁঠাল গাছ তেমন একটা চোখে পড়ে না। এ ছাড়া কাঁঠাল সবজি (ইচড়) হিসাবে বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে। উপজেলায় প্রায় ৮শ’ মেট্রিকটন কাঁঠাল উৎপাদন হবে বলে কৃষি অফিস ধারণা করছে। একটি কাঁঠাল ৪০ টাকা থেকে ২শ’ টাকার অধিক দামে বিক্রি হচ্ছে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাস কাঁঠাল পাঁকার উৎকৃষ্ট সময়। তবে জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ কাঁঠাল বাজার বেঁচা-কেনা শুরু হয়।
কাঁঠাল রসালো ও সু-স্বাদু একটি ফল। কাঁঠাল প্রোটিন ও ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল। শহর ও গ্রাম অঞ্চলের উভয় মানুষের কাছে খুবই পছন্দের। প্রতি ১শ’ গ্রাম পাঁকা কাঁঠালে ১.৮ গ্রাম প্রোটিন, ০.৩০ গ্রাম ফ্যাট, ২.৬১ গ্রাম ক্যালসিয়াম, ০.১১ ভিটামিন ‘বি-১’, ০.১৫ গ্রাম ভিটামিন ‘বি-২’, ২১.০৪ গ্রাম ভিটামিন ‘ই’ ও ১.০৭ গ্রাম লৌহ রয়েছে। মানুষের সুস্বাস্থ্য সবল স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিনের অভাব পূরণে কাঁঠাল খাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। কাঁঠালের একটি বড়গুণ এর কোনো কিছু বাদ যায় না। কাঁঠালের কোষ, খোসা ও বিচি সব কিছুই প্রয়োজনীয়। বিচি উৎকৃষ্টমানের সবজি হিসেবে তরকারি রান্না করে খাওয়া হয়। কাঁঠালের খোসা গৃহপালিত প্রাণীর প্রিয় খাদ্য। তাছাড়া কাঁঠালের পাতা ছাগল-ভেড়া-গরুর প্রিয় খাবার হিসাবে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কাঁঠাল উৎপাদনে কোনো খরচ না থাকায় চাষীরা লাভবান বেশি হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এএইচএম জাহাঙ্গীর আলম জানান, উপজেলায় কাঁঠালের ফলন ভাল হয়েছে। ব্যক্তি উদ্যোগে কাঁঠাল গাছ লাগানোর জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। কাঁঠাল আবাদে তেমন কোনো খরচ হয় না। শুধু বাগান পরিচর্যা করলে চলে।