লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)’র আর্থিক সহযোগিতায় বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। উন্নয়ন নির্মাণ কাজে পুরনো আধলা ইট, নি¤œমানের সিমেন্ট ও বালু ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব কাজ তদারকি করার জন্য সহকারী প্রকৌশলী বা উপ-সহকারী প্রকৌশলী থাকলেও, তাদের পরিবর্তে তদারকি করছেন এলজিইডি অফিসের দালাল। ফলে কাজের গুনগত মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
পাটগ্রাম এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে পাটগ্রাম উপজেলায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)’র অর্থায়নে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ আসে। অর্থ বছর শেষ হওয়ার আগে এসব উন্নয়ন মুলক কাজ তাড়াহুরা করে শেষ করা হচ্ছে। ফলে উন্নয়ন নির্মাণ কাজে পুরনো আধলা ইট, নি¤œমানের সিমেন্ট ও বালু ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুপুরে সড়ে জমিনে ওই উপজেলার জোংরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফ হোসেনের বাড়ির সামনের রাস্তা আরসিসি পাকা করণের কাজে গিয়ে ব্যাপক অনিয়ম দেখা যায়। ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১শত ৯৭ মিটার রাস্তা পাকা করনের কাজটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পান আলী হোসেন নামে এক ঠিকাদার। দেখা যায়, ৪ ইঞ্চি আরসিসি ঢালাইয়ে পরিবর্তে ৩ ইঞ্চি ঢালাই দেয়া হচ্ছে। এক রড থেকে অপর রডের দুরত্ব ২ শত ৫০ মিলিমিটার থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ৩শ মিলিমিটার। ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্মমানের ইট, সিমেন্ট ও বালু। এসব দেখভাল করতে সহকারী প্রকৌশলী আবদুর রহিম উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তা দেখভাল করছেন এলজিইডি অফিসের দালাল মোহাব্বদ আলী। উপজেলার অন্য প্রকল্প গুলোরও একই অবস্থা।
এ সময় সাংবাদিকের উপস্থিত বুঝতে পেয়ে ঢালাইয়ের কাজ বন্ধ করে দেয় নির্মাণ শ্রমিকরা। দুপুরে খাবেন এ অজুহাতে সবাই সরে পড়েন। এ রাস্তার কাজ তদারকি করতে এলজিইডি অফিসের কে আছেন ? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে মোহাব্বদ আলী নামে এলজিইডি অফিসের এক দালাল এসে বলেন আমি আছি। আপনার পরিচয় কি ? জানতে চাইলে মোহাব্বদ আলী বলেন, আমি ইঞ্জিনিয়ার স্যারের প্রতিনিধি। কি পদে আছেন এমন প্রশ্নে মোহাব্বদ আলী বলেন, আমার কোন পদ নেই। স্যার ব্যস্ত মানুষ। স্যারের কাজ গুলো আমিই তদারকি করছি।
তবে পাশের একজন বলেন, উনি এলজিইডি অফিসে ঘোড়াঘুরি করে চলেন। আর স্যাররা এখন জুন ক্লোজিং এর কাজে ব্যস্ত তাই আসতে পারছেন না। মোহাব্বদ আলীর এ নিয়ে লেখাপড়া না থাকলে এসব কাজ ভালোই জানেন। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, মোহাব্বদ আলী এলজিইডি’র পাটগ্রাম অফিসের একজন দালাল। পাটগ্রাম উপজেলা প্রকৌশলী এটিএম শামসুজ্জোহা ও সহকারী প্রকৌশলী আবদুর রহিম ওই দালাল মোহাব্বদ আলীকে দিয়ে বিভিন্ন কাজের তদারকি করে থাকেন।
ওই কাজের ঠিকাদার আলী হোসেন বলেন, কাজে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। আমি শ্রমিক, রড, সিমেন্ট, ইট, বালু দিয়েছি। এলজিইডি অফিস কাজ বুঝে নিচ্ছেন।
ওই কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা পাটগ্রাম উপজেলা এলজিইডি অফিসের সহকারী প্রকৌশলী আবদুর রহিম বলেন, অনেকেই এডিপি’র কাজ না করে বিল ভাউচার দিয়ে টাকা উত্তোলন করে ভাগাভাগি করে খায়। আমি তো একটু হলেও কাজ করি। ৪ ইঞ্চির পরিবর্তে ৩ ইঞ্চি ঢালাই কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আপনারা ৩ ইঞ্চি পেয়েছেন তাই লিখেন। আমি আমার দক্ষতায় আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে কিভাবে ৪ ইঞ্চি দেখাতে হয় তা ভালো করে জানা আছে। আপনি ঢালাইয়ের সময় উপস্থিত থাকেন না কেন ? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি না থাকলেও ইঞ্জিনিয়ার স্যারের প্রতিনিধি মোহাব্বদ আলী আছেন।
পাটগ্রাম উপজেলা প্রকৌশলী এটিএম শামসুজ্জোহা বলেন, মোহাব্বদ আলী আমাদের প্রতিনিধি। সে ঢালাইয়ের কাজ তদারকি করেন। মোহাব্বদ আলী তো উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা আপনার অফিসের নিয়োগ প্রাপ্ত কেউ নয় এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, মোহাব্বদ আলীকে আমরা সব শিখিয়ে দিয়েছি। সে এসব কাজ ভালোই পারেন। তারপরও