আলোচিত রিফাত হত্যা মামলায় সর্বশেষ ১২ জনকে আসামি করে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৭ টায় বরগুনা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় চন্দন (২২) নামের এক আসামীকে সকালে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তবে হত্যাকান্ডের প্রধান আসামি নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী, রিসান ফরাজী, মুসা, রব্বানী, আলীসহ ১১ আসামীকে এখনো আটক করতে পারেনি পুলিশ। প্রেমঘটিত কারণে এ হত্যা ঘটেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় বরগুনাসহ দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল বৃহষ্পতিবার পুুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম বরগুনা এসে হত্যাকান্ডে জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশকে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবীর মোহাম্মদ হোসেন বলেন, মামলার অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারে জোর অভিযান চলছে। ৬টি চেক পোস্টে পুলিশের ৬টি টিম একযোগে কাজ করছে।
নিহত রিফাতের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতাল মর্গ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে বরগুনায় আনা হয়েছে। বিকেল সাড়ে ৫ টায় সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের লবনগোলা গ্রামের নিজ বাড়িতে জানাযা শেষে তার লাশ দাফন করা হয়।
্ উল্লেখ্য, বরগুনা সরকারি কলেজের সামনের রাস্তায় গত বুধবার (২৬ জুন) বেলা ১১ টায় প্রকাশ্য দিবালোকে সদ্য বিবাহিত স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি’র সামনে তার স্বামী শাহনেওয়াজ রিফাত শরিফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। মিন্নি ও পথচারি এক যুবক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাঁধা দিয়েও সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি রিফাতকে। নিহত শাহনেওয়াজ রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে জানান, কলেজ রোডের ক্যালিক্স একাডেমীর সামনে নয়ন বন্ড, রিফাতসহ কয়েকজন সন্ত্রাসী হঠাৎ তাকে ও তার স্বামীকে চার দিক থেকে ঘিরে ফেলে। এ সময় নয়ন, রিফাত ফরাজী ও রিশান অবরুদ্ধ রিফাত শরীফকে বগি দাও দিয়ে কোপাতে থাকে। শতশত মানুষ এই হত্যাকান্ডের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করলেও সন্ত্রসীদের ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। আমি আপ্রাণ চেস্টা করেও আমার স্বামীকে বাঁচাতে পারেনি। এ সময় রনি নামক এক যুবক আমার সাহায্যে এগিয়ে এলেও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। জানা গেছে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজী গ্রুপ ছাত্রলীগের সাথে জড়িত।
আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির স্বামীকে হত্যার প্রতিবাদ ও চিহ্নিত খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে বরগুনা সরকারি কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বরগুনা প্রেসক্লাবের সামনে গতকাল বৃহষ্পতিবার দুপুর দু’টায় মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে।
বরগুনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ বলেন, নয়ন বন্ড ও রিফাত কেউ কলেজের ছাত্র নয়, কিন্তু মিন্নি ¯œাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী। এ হত্যাকান্ডের ঘটনা খুবই মর্মান্তিক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কলেজের ছাত্রীরা জানান, নয়ন বন্ড গ্রুপ সব সময় কলেজে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করত।
এ ব্যাপারে বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, আমার ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে বরগুনায় এ রকম নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেনি। এই হত্যার সাথে যারা জড়িত রয়েছে তারা যে দলের বা বংশের সদস্য হোকনা কেন তাদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
প্রসঙ্গত, খুনী ও নিহতের বন্ধুদের সূত্রে জানাগেছে, মিন্নির সঙ্গে উভয়ের সম্পর্ক ছিল। মাঝখানে রিফাত শরীফের সঙ্গে দু’মাস পূর্বে মিন্নি’র বিয়ে হয়ে যাওয়ায় বিরোধের সৃষ্টি হয়। প্রেমের খেসারত দিতে প্রাণ হারাতে হলো রিফাত শরীফকে।