ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলা গাজীরটেক ইউনিয়নের গাজীরটেক নামক গ্রামের বিস্তৃর্ণ ফসলী মাঠের মধ্যে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে সম্প্রতী আবারও বালু মাটি উত্তোলনের রমরমা বাণিজ্য শুরু হয়েছে। গত দু’মাস আগে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকেদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ড্রেজার মেশিনটি বন্ধ করে দেন। কিন্তু সম্প্রতী ওই গ্রামের প্রভাবশালী মৃত মোহন মাতুব্বরের ছেলে আঃ মুন্নাফ মাতুব্বর (৫০) আবারও ফসলী মাঠের মধ্যে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু মাটি উত্তোলন করে চলেছেন বলে অভিযোগ। এতে চলতি বর্ষা মৌসুমে ওই ফসলী মাঠ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাধারন কৃষকরা।
সোমবার জব্বার সেক (৫০) নামক ওই ফসলী মাঠের এক কৃষক জানায়,“এলাকার প্রভাবশালী মুন্নাফ মাতুব্বর বছরের প্রায় ছয় মাসকাল বিদেশে থাকেন। কিছুদিন আগে সে গ্রামের বাড়ী ফিরে এসেই ফসলী মাঠের মধ্যে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের ব্যবসা শুরু করেছেন। তার বিরুদ্ধে এলাকার কোনো কৃষকই কথা বলার হিম্মত রাখে না বলেও ওই বৃষক হতাশা প্রকাশ করেন”।
এ ব্যাপারে ওই অবৈধ ড্রেজার মালিক ও বালু মাটি ব্যবসায়ী আঃ মুন্নাফ মাতুব্বরকে মুঠোফোনে জিজ্ঞেস করলে সে দাম্ভিকতা প্রকাশ করে জানায়, “আমার জমিতে আমি ড্রেজার মেশিন দিয়ে পুকুর খনন করে চলেছি, আমি আবার কার অনুমতি নেব!”। ওই গাজীরটেক ইউনিয়ন ভুমি সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) মোঃ ফজলুল হক বলেন, “ গত ক’মাস আগে ওই ড্রেজার মেশিনটি আমি নিজে গিয়ে বন্ধ করে দিয়েছিলাম। মুন্নাফ মাতুব্বর এলাকায় এসে আবারও ফসলী মাঠের মধ্যে ড্রেজার চালিয়েছে আমার জানা ছিল না। বিষয়টি আমি এখনই এসিল্যান্ড মহোদয়কে অবগত করবো”। আর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ফারজানা নাসরীন বলেন, “বিষয়টি আমি অবগত ছিলাম না, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই ড্রেজার মেশিনের বিরুদ্ধে আমি আইনগত ব্যবস্থা নেব”।
সোমবার দুপুরে সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, উপজেলা গাজীরটেক গ্রামের বিশাল ফসলী মাঠের মাঝামাঝিতে লোক চক্ষুর আড়ালে প্রায় ৯০ শতাংশ জমি জুড়ে মশারী জাল দিয়ে ঘিরে বসানো হয়েছে ড্রেজার মেশিনটি। ওই অবৈধ ড্রেজারের সাথে সংযুক্ত পাইপ লাইনের মাধ্যমে পাচার হচ্ছে ফসলী মাঠের বালু মাটি। দীর্ঘদিন ধরে গোপনে দিনরাত ড্রেজার মেশিনে বালু মাটি উত্তোলনের ফলে ফসলী মাঠের মধ্যে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ড্রেজার মেশিনের কারণে আশপাশের ফসলী জমি ও পার্শ্ববতী কবরস্থানের মাটি ধ্বসে ধ্বসে পড়ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষতিগ্রস্থ একাধিক কৃষকের অভিযোগ, ওই ফসলী মাঠে অন্ততঃ ৫ হাজার একর আবাদি জমি রয়েছে। পুরো গ্রামবাসী ওই বিস্তৃর্ণ মাঠে উৎপাদিত ফসলের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকেন। কিন্তু এলাকার মাতুব্বর ও প্রভাবশালী আঃ মুন্নাফ মাতুব্বর ফসলী মাঠের মধ্যে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দিনরাত বালু মাটি উত্তোলনের মাধ্যমে এলাকার সব ধরনের মাটি ভরাট বাণিজ্য করে চলেছেন।