চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনা তদন্তে চিত্রনায়িকা সিমলাকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারেননি তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। গত রোজার ঈদ শেষে সিমলা ওই মামলায় পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজমের মুখোমুখি হওয়ার আশ্বাসও দিয়েছিল। কিন্তু এখন তার সাড়া নেই। যোগাযোগও নেই। তবে এবার তার সাড়া পাওয়া না গেলেও খুব দ্রুত ওই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করা হবে। ওদিকে নায়িকা সিমলাকে তদন্ত থেকে দূরে রাখতে তাঁর পক্ষে প্রভাবশালী একটি মহল নানা জায়গায় দৌড়ঝাঁপ করছেন বলে গুঞ্জনও রয়েছে।
একাধিক সূত্র জানায়, এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের একটি বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় কমান্ডো অভিযানে নিহত হন পলাশ আহমেদ (২৭)। নিহত পলাশের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন সামসুন নাহার সিমলা। তদন্তের শুরুতেই ওই মামলাটিতে নায়িকা সিমলার জবানবন্দির বিষয়টি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছিল। সিমলার সঙ্গে বিয়ে বিচ্ছেদের কারণে পলাশ বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তখন গণমাধ্যমেও খবর প্রকাশিত হয়। বিমান ছিনতাই চেষ্টাকালে ব্যক্তিগত নানা বিষয় নিয়ে পলাশ প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলার ইচ্ছাও ব্যক্ত করেছিল বলে তদন্তে উঠে আসে। বিগত ২০১৮ সালের ৩ মার্চ সিমলার সঙ্গে পলাশের কথিত বিয়ে হয়। এরপর একই বছরের ৬ নভেম্বর তাদের বিয়ে বিচ্ছেদও হয়।
যদিও সিমলার মত একজন নায়িকাকে পলাশ কিভাবে বিয়ে করছেন তা নিয়েও নানা মহলে প্রশ্ন রয়েছে। মামলায় সিমলাকে জিজ্ঞাসাবাদে ওই মামলাটির অগ্রগতি সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছবে বলে তখন আশাবাদ ব্যক্ত করেছিল তদন্ত কর্মকর্তারাও। বিমান ছিনতাই ঘটনার তদন্তকারী সংস্থা পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের উপকমিশনার শহীদুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, মামলাটির তদন্তের স্বার্থে অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষেই আদালতে অভিযোগপত্র পেশ করা হবে। এক্ষেত্রে সিমলার সাড়া না পাওয়া গেলেও খুব দ্রুত আমরা তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে যাচ্ছি।
সূত্র জানায়, মামলার তদন্ত শুরুর পর কর্মকর্তাদের সিমলার পরিবার বলে আসছিল ভারতে ছবির কাজে সেই ব্যস্ত। কি ছবিতে অভিনয় করছেন এতদিন? তা জানা এখনো যায়নি। এর আগে তদন্ত কর্মকর্তারা দেশে তার অবস্থানের কোনো তথ্য না পেয়ে ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলায় বাবার বাড়ির ঠিকানায় তাকে হাজিরের জন্য কয়েক দফা নোটিশও পাঠান। কিন্তু সিমলার কাছ থেকে কোনো সাড়াই পাওয়া যায়নি। গত ২২ মে সন্ধ্যা ৬টায় হঠাৎ সিমলা ফোনে তদন্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলেন। ওই সময় সিমলা গেল রোজার ঈদের পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কাউন্টার টেরোরিজমের মুখোমুখি হবেন বলে জানিয়ে দেন। এ বিষয়ে গত ২৮জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেরোরিজমের পরিদর্শক রাজেস বড়-য়া গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, সিমলাকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি। সে এখনো দেশে আসেনি। তবে তার সাথে ফোনে কথা হচ্ছে। সে এখনো ব্যস্ত আছেন।
এর আগে গত ২০ মার্চ ওই ঘটনায় বিমানের পাইলট, ফার্স্ট কর্মকর্তা ও চার কেবিন ক্রুসহ মোট ৬জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ২৩ মার্চ নারায়ণগঞ্জের পিরোজপুরের দুধঘাটা এলাকায় পলাশের বাড়িতে গিয়ে পলাশের বাবা পিয়ার জাহান, মা রেনু বেগম, চাচা দ্বীন ইসলাম, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীসহ মোট ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ২৫ মার্চ ঢাকার উত্তরায় সিমলার বাসায় গিয়ে তার বাবা আবদুল মাজেদ, মা নুরুন নাহারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। গত ২২ মে বিমানবন্দরে এপিবিএনসহ সংশ্লিষ্ট আরও ১২জনকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ করে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ বিমানের ময়ুরপক্সখী ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। বিকেলে ঢাকা থেকে উড্ডয়নের পর একটি পিস্তল দিয়ে পলাশ বিমানটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালায়। একপর্যায়ে বিমানটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। পরে ৮ মিনিটের কমান্ডো অভিযানে নিহত হন পলাশ। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। এ ঘটনায় পতেঙ্গা থানায় একটি মামলা করেন বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কর্মরত প্রযুক্তি সহকারী দেবব্রত সরকার। গত ১৩ মার্চ সিআইডি পলাশের হাতে থাকা পিস্তলটি খেলনার বলে প্রতিবেদন দেয় কাউন্টার টেরোরিজমের কাছে।