প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার রাস্ট্রীয় স্বীকৃতি ও ভাতা পেতে এবার দুর্নীতি দমন কমিশনের(দুদক) দ্বারস্থ হলেন ভাতা বঞ্চিত সেই মসলার ফেরিওয়ালা মুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ চন্দ্র রায়। লালমনিরহাট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে মঙ্গলবার দুদকের গনশুনানীতে নিজেকে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে রাস্ট্রীয় স্বীকৃতি দাবি করেন প্রতাপ চন্দ্র রায়। পরে দুদকের গনশুনানীর প্রধান অতিথি দুদকের কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম তদন্ত কমিটি করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে আগামি ১৫ দিনের মধ্যে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে সদর উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
মসলার ফেরিওয়ালা মুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ চন্দ্র রায় লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের কাজিচওড়া গ্রামের মৃত তারিণী চন্দ্রের ছেলে। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের লাল মুক্তিবার্তার ৩১৪০১০৪৩৬ নম্বর ক্রমিক এবং ২০০৫ সালের ৩০ মে প্রকাশিত বেসামরিক গেজেটের ৫১৪৫ নম্বর পৃষ্ঠার ৪৯৭ নম্বরের মুক্তিযোদ্ধা। তিনি লালমনিরহাট মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ৩৩৪ নম্বরের একজন ভোটার।
জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ চন্দ্র রায় দীর্ঘ দিন ধরে সম্মানী ভাতার জন্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, সমাজসেবা অফিসসহ সরকারের বিভিন্ন দফতরে নিস্ফল ঘুরে বেরাচ্ছেন। কিন্তু দির্ঘেিদনেও কোন সুফল মেলেনি তার। জিবিকার তাগিদের গ্রামে গ্রামে ঘুরে মসলা বিক্রি করেন প্রতাপ চন্দ্র রায়। বিষয়টি নিয়ে ২০১৮ সালে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘মসলার ফেরিওয়ালা মুক্তিযোদ্ধা প্রতাপ’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তাকে পুনর্বাসনের নির্দেশ দেন তৎকালিন লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) শফিউল আরিফ।
যাবতীয় কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে মুক্তিযোদ্ধা প্রতাপকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিলে সদর উপজেলা প্রশাসন জনতে পারেন একই গেজেট ব্যবহার করে রংপুরের গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের উত্তর ধামুর গ্রামের তারিণী কান্তের ছেলে রংপুর উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (অবসর) প্রতাপ চন্দ্র রায় ভাতা ভোগ করে আসছেন। এই সনদধারীর ছেলে এ কোটা ব্যবহার করে পুলিশের পরিদর্শক পদে কর্মরত। ফলে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা মসলার ফেরিওয়ালাকে পুনর্বাসনের যাবতীয কার্যক্রম ও গতি কমে যায় স্থানীয় প্রশাসনের। যার ফলে নতুন করে তদন্তে নামে জেলা প্রশাসন। কিন্তু সেই তদন্ত প্রতিবেদন আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
পুনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন দফতরে ঘুরতে থাকেন মসলার ফেরিওয়ালা প্রতাপ চন্দ্র রায়। নিরাশ না করলেও জেলা এবং উপজেলা প্রশাসন পুনর্বাসনে আশ্বস্ত করেন প্রতাপ চন্দ্রকে। কিন্তু তাকে পুনর্বাসনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অবশেষে দুর্নীতি দমন কমিশনের(দুদক) গনশুনানীতে লিখিত আবেদন করেন মসলার ফেরিওয়ালা প্রতাপ চন্দ্র রায়। মঙ্গলবার গনশুনানীতে তার সকল কাগজপত্র নিরীক্ষন করে গনশুনানীর প্রধান অতিথি দুদকের কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম তদন্ত কমিটি করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে আগামি ১৫ দিনের মধ্যে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে সদর উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফরের সভাপতিত্বে গনশুনানী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, দুদক পরিচালক নাসিম আনোয়ার, মনিরুজ্জামান খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রমুখ। গনশুনানীতে ৩৮টি অভিযোগের শুনানী করা হয়।