চট্টগ্রামে রেলওয়ে, কর্ণফুলী গ্যাস, বন্দর, ট্রাফিক ও পুলিশসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শতাধিক দুর্র্নীতিবাজের সম্পদের সন্ধানে এবার মাঠে নেমেছে দুদক। এর আগে প্রাথমিক তদন্তে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনেক কর্মকর্তার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণও পাওয়া গেছে। ওদিকে পিডিবি, সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন, কাস্টমসসহ আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে। তবে এসকল দুর্নীতবাজরা নিজকে রক্ষা করতে ওপরের মহলে দৌড়ঝাঁপও করছেন।
চট্টগ্রামের দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এর দুই উপ সহকারী পরিচালক সাংবাদিকদের জানান, বর্তমানে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়ে তদন্ত চলছে। এছাড়াও তদন্ত করা হচ্ছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) এর সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ছেলে মহিউদ্দিন চৌধুরীর নিয়োগের বিষয়টিও। একই সাথে চট্টগ্রাম জেলা শিল্প পুলিশের সহকারী পরিচালক (এএসপি) আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে বহুতল ভবনসহ বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জনের সন্ধান পাওয়া গেছে বলে দুদকের কর্মকর্তারা দাবি করেন। শুধু তাই নয়; ওই কর্মকর্তার স্ত্রীর বিরুদ্ধেও মিলেছে আয়ের উৎস বহির্ভূত বিপুল সম্পদ রাখার তথ্য।
দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ উপ সহকারী পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, শিল্প পুলিশের সহকারী পরিচালক মো. আবুল হাশেম এবং তার স্ত্রী তাহেরা বেগমের সম্পদের তদন্তের ব্যাপারে জেলা অফিস থেকে প্রেরিত সুপারিশ ঢাকা থেকে অনুমোদনের পর পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দুদকের নোটিশের পর এএসপি মো. আবুল হাশেম তার নিজের ও স্ত্রীর সম্পদের হিসাব দুদকের কাছে দাখিলও করেছেন। প্রাথমিক অনুসন্ধান করে সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ের জন্য অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে দুদকের সহকারী পরিচালক হুমায়ুন কবিরকে নিয়োগও দেয়া হয়েছে। অপরদিকে ট্রাফিক পুলিশের দুইজন ইন্সপেক্টর এবিএম শাহাদাত হোসেন ও আবুল কাশেম চৌধুরীর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের তদন্ত চলছে।
বন্দরের কয়েকজন কর্মকর্তা, কাস্টমসেরও বেশ কয়েকজন এআরও এবং রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তার নিয়োগ দুর্নীতিসহ অবৈধ সম্পদের সন্ধান চলছে। এ ছাড়া পিডিবিতে কর্মরত কয়েকজন দুর্নীতিবাজের বিষয়েও তদন্ত চলছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, রেলওয়ের বিগত ২০১৮ সালে ১শ’৮৫ জন সিপাহী নিয়োগ হয়। এতে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। এরপর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তাবাহিনীর প্রধান ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়। এরইমধ্যে দুদক ইকবাল হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে। আবার ৭৫টি প্রতিষ্ঠানে ইকবাল হোসেনের বিষয়ে তথ্য চেয়ে চিঠিও দেওয়া হয়। এ ছাড়া তাকেও চিঠি দিয়েছে দুদক। তবে আজও তিনি সেই চিঠির উত্তর দেননি। এদিকে চট্টগ্রামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হাজারও দুর্নীতিবাজ প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় ঘাপটি মেরে বহাল তবিয়তে রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে দুদক অনুসন্ধান চালিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলে অনেকেই আশা প্রকাশ করেন।