পর্যটন শহর কক্সবাজারের কলাতলী সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে এখনো বহাল তবিয়তে রয়ে গেছে দখলবাজ চক্র। দীর্ঘদিন ধরে ঘাপটি মেরে থাকা চিহিৃত ওই দখলবাজচক্রটি সুগন্ধা পয়েন্টের ড্রাগন মার্কেটের পাশে রাতের আঁধারে প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে সরকারী জমি দখল করে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ দোকান নির্মাণ। প্রশাসনের একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরকারী জমিতে অবৈধ দোকান নির্মাণের কারণে পর্যটন এলাকার সর্বস্তরের লোকজনের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এদিকে রবিবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুগন্ধা এলাকায় মাইকিং করে অবৈধ স্থাপনা ও দোকানগুলো সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়ে মাইকিং করা হয়ুুুুু। প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে যদি নিজ উদ্যোগে তা সরানো না হয় তাহলে সোমবার থেকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত করার কথা ছিল। কিন্তু আবহাওয়া ভাল না থাকায় তা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন সদর এসিল্যান্ড। তবে উচ্ছেদ ঠেকাতে সুগন্ধা পয়েন্টে যারা অবৈধ দোকান গড়েছে সেসব দখলবাজ চক্র নানা ভাবে প্রস্তুত ছিল বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে-সৈকত এলাকার শীর্ষ দখলবাজ শহরের বাহারছড়ার জয়নাল, মনিয়া, সৈকতপাড়ার নজু, কলাতলীর মিঠুর নেতৃত্বে সরকারী জমি দখল করে অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ করে যাচ্ছে। তাদের নেতৃত্বে রাতের আঁধারে নির্মাণকৃত দোকানগুলো কয়েক লাখ টাকার বিনিময়ে বাৎসরিক চুক্তিতে ভাড়াও দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। জানা যায়-সুগন্ধা পয়েন্টের ড্রাগন মার্কেটের পূর্ব পাশের ওই স্থানে ইতোপূর্বে ৯ বার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে প্রায় অর্ধশত অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছিল। উচ্ছেদ করে উদ্ধারকৃত সরকারী জমিতে তারকাঁটা দেয়াসহ ৯০টি নারকেল গাছের চারা রোপন করা হয়েছিল। এ ছাড়া উচ্ছেদ অভিযানের কিছু দিন যেতে না যেতেই তারকাটা, নারকেল গাছ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া সাইনবোর্ড তুলে নিয়ে যায় সৈকত এলকার শীর্ষ দখলবাজ জয়নাল, মনিয়া, নজু ও মিঠুর নেতৃত্বাধিন দখলবাজচক্রটি। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, ওই চিহিৃত দখলবাজ সিন্ডিকেট রাতের আঁধারে সরকারী জমিতে দোকান নির্মান করলেও প্রশাসনের কোন খবর নেই। অনেক সময় দিনের আলোয় প্রকাশ্যে সরকারি জমি দখল হয় সুগন্ধা পয়েন্টে। দখলকৃত টিনের তৈরী স্থাপনা বছরের শেষে আবার ইটের তৈরীও করে নিয়েছে অনেকেই। ড্রাগন মার্কেট থেকে প্রধান সড়ক পর্যন্ত সারিবদ্ধ ভাবে থাকা অর্ধশত দোকানের মধ্য প্রতি দোকানদার থেকে নেয়া হয় বছরে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা করে। আবার এককালীন এই অবৈধ দোকান বিক্রি হয় ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকায়। সচেতন মহলের মতে, যদি প্রশাসন ম্যানেজ হয়ে না থাকে তাহলে কেমন করে দখলবাজ চক্র প্রকাশ্যে সরকারি জমি দখল করে দোকান নির্মাণ করে যাচ্ছে। ড্রাগন মার্কেটের পাশেই নতুন দখল করে দোকান নির্মানের মালিক আলাউদ্দিন বলেন, সরকারি জায়গা দখল হচ্ছে সত্য। যদি প্রশাসন ছেড়ে দিতে বলে তাহলে জায়গা ছেড়ে দেব। এখানে একাধিকবার উচ্ছেদ অভিযানও হয়েছে তাও সঠিক। কিন্তু আমি এক বছর পর্যন্ত দোকান করছি। কেউ বাধা দেয়নি। তবে তিনি জায়গাটি কলাতলীর মিঠুর মালিকানাধীন বলে জানান। অন্যদিকে নাম প্রকাশে আরেক ব্যবসায়ী বলেন-৩৫ হাজার টাকার বিনিময়ে বাৎসরিক চুক্তিতে জয়নালের কাছ থেকে তিনি দোকান নিয়েছেন। তবে জয়নালের কাছ থেকে দোকান নিয়েছে তা কাউকে বললে নানা ধরণের হুমকি আসে বলেও অভিযোগ করেন এই ব্যবসায়ী। এদিকে দোকান সরিয়ে নিতে মাইকিং-এর বিষয়টি জানেন না বলে জানিয়ে সুগন্ধা বৃহত্তর শুটকী, রেষ্টুরেন্ট, ফিস ফ্রাই ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুর রহমান বলেন-এবিষয়ে তিনি অবগত নয়। তাছাড়া উচ্ছেদ অভিযান ঠেকাতে লাঠিশোটা নিয়ে প্রস্তুত থাকার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহরিয়ার মোক্তার সোমবার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে বলেন-রবিবারের মধ্যেই সুগন্ধা পয়েন্টের অবৈধ দোকানগুলো সরিয়ে নিতে মাইকিং করা হয়েছিল। সুগন্ধা পয়েন্টের প্রবেশ মুখ (প্রধান সড়ক) থেকে শুরু করে সৈকতের মুখ পর্যন্ত দু’পাশে গড়ে তোলা অবৈধ দোকানগুলো সরিয়ে না নিলে আজ (সোমবার) উচ্ছেদ অভিযান চালনোর কথা ছিল। কিন্তু আবহাওয়া পরিস্থিতি ভাল না থাকায় তা সম্ভব হয়নি। তবে আবহাওয়া পরিস্থিতি ভাল হলে যেকোন মুর্হুতে তা করা হবে।