দক্ষিণ চট্টগ্রামে ৬০ মেগাওয়াট শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এরপরেও পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় মিলে মাসে অন্তত কোটি টাকা ব্যয় বহন করতে হচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে। ওই খরচ কমাতেই ইতোমধ্যে পুরো জনবল অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রে বদলিও করা হয়েছে। ফলে লোকসানি প্রতিষ্ঠানটি একেবারেই বন্ধ হতে যাচ্ছে বলে শহরে গুঞ্জন উঠেছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রামের বিদ্যুৎকেন্দ্রের তালিকা থেকে ওই কেন্দ্রের নাম মুছে ফেলেছেন পিডিবি কর্তৃপক্ষও। এ বিষয়ে শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী ভূবন বিজয় দত্ত সাংবাদিকদের বলেন, এক বছর আগে থেকে ৬০ মেগাওয়াট শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য পিডিবি থেকেও বলা হচ্ছিল। কিন্তু চূড়ান্তভাবে বন্ধ করার প্রস্তাব দেওয়ার জন্য কোনো নির্দেশনা এখনো পাইনি।
একাধিক সূত্র জানায়, বিগত ১৯৮৪ সালে পটিয়া উপজেলার কর্ণফুলীতে গ্যাসনির্ভর ৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপিত হয়। এটি শিকলবাহা ইউনিয়নের কর্ণফুলী নদী এবং শিকলবাহা খালের মোহনায় স্থাপিত। ওই কেন্দ্র ঘিরে সেখানে পিডিবির অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত হয় স্কুল, মাদ্রাসা ও বিভিন্ন আবাসিক এলাকাও। এটি ৬০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র। তবুও বেশ কয়েক বছর ধরে ৩৫ বছরের পুরনো এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উৎপাদন হ্রাস পায়। গত ২০১৫ সালের ৩০ আগস্ট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি একটি সঞ্চালন ট্রান্সফরমারে আগুন লেগে যায়। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতিও হয়। পরে অন্তত ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ট্রান্সফরমার প্রতিস্থাপন করা হয়। এতে তেমন একটা সচল ছিল না প্লান্টটি। তবে এটি বন্ধ থাকলেও সচল রাখার জন্য নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। ফলে রক্ষণাবেক্ষণ খাতে প্রতি মাসে মোটা অংকের ব্যয় বহন করতে হচ্ছিল পিডিবিকে। ওদিকে, ব্যয় হ্রাসের জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রকৌশলী ও কর্মকর্তাদের নতুন নির্মিত ২২৫ মেগাওয়াট শিকলবাহা রিসাইকেল পাওয়ার প্লান্টে বদলী করা হয়েছে। এতে পরিচালনা ব্যয় কমলেও কমেনি রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয়।
বর্তমানে আনুমানিক ৬ মাসের বেশি সময় ধরে উৎপাদন নেই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। গত ৩ জুলাই থেকে পিডিবির ওয়েবসাইটে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির তালিকা থেকে ৬০ মেগাওয়াট শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নামটিও মুছে ফেলা হয়েছে। পিডিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে বলেন, প্রাকৃতিক গ্যাসনির্ভর হওয়ার কারণে উৎপাদন ব্যয় ছিল অনেক কম। কিন্তু গ্যাসের অভাবে ধারাবাহিকভাবে দীর্ঘদিন বন্ধ রাখলেও এখন এলএনজি আসার পরও অদৃশ্য কারণে কেন্দ্রটি বন্ধ রাখা হয়েছে। এটি বন্ধ থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বেড়েছে। এখন একেবারেই বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। প্রকৃতপক্ষে সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রটিগুলো সচল থাকলে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রটির থেকে কম বিদ্যুৎ নিতে হবে। তাই বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার জন্যই সরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রটির বন্ধ রাখা হয় বলে এই কর্মকর্তা মন্তব্য করেন। পিডিবির দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার প্রবীর কুমার সেন বলেন, ৬০ মেগাওয়াট শিকলবাহা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এখনো স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়নি। তবে কী কারণে পিডিবির তালিকা থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নাম মুছে ফেলা হয়েছে সে বিষয়েও তিনি কোনো কথা বলেননি।