এইয়্যার মধ্যে ক্যামনে বীজ হালামু, পানতে ব্যবাক তলাইয়্যা গ্যাছে। সাত দিন অইছে বীজ ঘরে ভিজাইয়্যা থুইছি, ঘরে বইয়্যা বীজ পইচ্যা গ্যাছে। এ্যাহন কি হরমু কইতে পারি না। দেওইর পানতে সব তলাইয়্যা গ্যাছে। স্লুইজগুলো দিয়া পানি নামছে না। এমন আক্ষেপ করে এ কথা বলেছেন আমতলী উপজেলার মানিকঝুড়ি এলাকার কাশ্মির গ্রামের কৃষক আল-আমিন। গত ছয় দিন ধরে অতি বর্ষণে স্লুইজগুলো দিয়ে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় আমতলী ও তালতলী উপজেলায় তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এতে আমনের বীজতলা নিয়ে সঙ্কায় ৫১ হাজার কৃষক।
আমতলী কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, দু’উপজেলার এ বছর আমনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৮ হাজার ৪৫০ হেক্টর। এর মধ্যে আমতলীতে ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর ও তালতলীতে ১৫ হাজার হেক্টর। জমি চাষাবাদের জন্য কৃষকের আমনের বীজতলা প্রস্তুতের এখন উপযুক্ত সময়। আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সময় শুরু করে পুরো মাস চলে বীজতলা প্রস্তুতের কাজ। কৃষক বীজতলা প্রস্তুত করতে শুরু করেছে। গত ছয় দিনের অতি বর্ষণে জলাবন্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় আমনের বীজতলা পানি নিচে তলিয়ে রয়েছে। এতে ৫১ হাজার কৃষক আমনের বীজ নিয়ে সঙ্কায় রয়েছে। অনেক কৃষক আমনের ক্ষেত প্রস্তুতের প্রস্তুতি নিলেও জলাবন্ধতার কারণে পারছে না। জলাবন্ধতায় পচে যায় আমনের বীজতলার বীজ। পুনরায় কৃষকদের অধিক মূল্যে বীজ কিনে বীজতলা তৈরি করতে হবে বলে জানান কৃষকরা। গত ছয় দিনের টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় কৃষকের সঙ্কা আরো বেড়ে গেছে। অনেক স্থানের বীজতলা পানির নিচে থাকায় বীজ পঁচে গেছে। অনেক কৃষক ঘরে বীজ ভিজিয়ে রেখেছে। বীজতলা পানিতে তলিয়ে থাকায় বীজধান ফেলতে পারছে না। এতে এ বছর আমন বীজের তীব্র সংঙ্কট দেখা দেবে বলে আশঙ্কা করছে কৃষকরা। কৃষকরা জানান, পানি নিস্কাশনের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে কৃষকের চাষাবাদ করতে পারছে না। আমতলী-তালতলী উপজেলায় ২৫ টি স্লুইজ রয়েছে। ওই স্লুইজগুলো দিয়ে ভালোভাবে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না। ফলে দেখা দিয়েছে তীব্র জলাবন্ধতা। কৃষকরা জানান, যেভাবে পানি নামছে তাতে আরো ৮ দিনে জলাবন্ধতা নিরসন হবে না। অনেক স্লুইজ বন্ধ করে প্রভাবশালী মহল মাছ শিকার করছে। এতে জলাবদ্ধতার দীর্ঘসুত্রতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবে পানির নামলে কৃষকদের মহা সর্বনাশ হবে। এদিকে বৃষ্টির পানিতে দু’উপজেলার মাঠঘাট সব তলিয়ে গেছে।
শনিবার আমতলী উপজেলা আঠারোগাছিয়া, কুকুয়া, আজিমপুর, ঘটখালী, আমড়াগাছিয়া, চাওড়া, পশ্চিম আমতলী, ঘোপখালী, আড়পাঙ্গাশিয়া, পশুরবুনিয়া, চরকগাছিয়া, সেকান্দারখালী, ফকির বাড়ী, খলিয়ান, খুড়িয়ার খেয়াঘাট ও তালতলীর পচাঁকোড়ালিয়া, কড়াইবাড়িয়া, শারিকখালী, ছোটবগী, গাবতলী, মৌপাড়া, চরপাড়া, তালতলী, ফকিরহাট, নিশানবাড়িয়া, লেমুয়া, গাজীকালু, বেহালা ও আলীর বন্দর ঘুরে দেখা গেছে, জলাবদ্ধায় বীজতলা ডুবে রয়েছে। উঁচু স্থানের বীজতলা কিছুটা ভালো থাকলেও নিচু স্থানের বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে বীজতলা তৈরি করতে পারছে না। আঠারোগাছিয়া গ্রামের কৃষক শাহ আলম হাওলাদার বলেন, পানির কারণে বীজতলা তৈরি করতে পারছি না।
পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের কৃষক সোহেল রানা বলেন, আমতলা স্লুইজ দিয়ে পানি না নামায় আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানাই।
তালতলীর চরপাড়া গ্রামের কৃষক আবদুল হক মৃধা বলেন, স্লুইজ দিয়ে পানি নামতে পারছে না। এতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, বৃষ্টির আগে এক মণ ধানের বীজ বীজতলার ফেলেছি। ওই বীজ পঁচে যাওয়ার সম্ভবনা বেশী। আরো দেড় মণ ধানের বীজ ঘরে ভিজানো রয়েছে। কি হয় জানিনা?
চরকগাচিয়া গ্রামের সেলিম মিয়া বলেন, পানি সরে না গেছে বীজতলার বীজ নষ্ট হয়ে যাওয়া সম্ভবনা বেশী।
দক্ষিন আমতলী গ্রামের কৃষক হাকিম হাওলাদার ও জাহাঙ্গির সরদার বলেন, পানির কারণে বীজ ফেলতে পারছি না। তারা আরো বলেন, স্লুইজ দিয়ে যে পরিমানে পানি নামা প্রয়োজন সেই পরিমানে পানি নামছে না। ফলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
আমতলী উপজেলার মানিকঝুড়ি কাশ্মির গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান বলেন, ১৫ কেজি ধানের বীজ ভিজিেিয় রেখেছি কিন্তু বীজতলা তলিয়ে থাকায় ফেলতে পারছি না। তিনি আরো বলেন, এখন বীজ করার উপযুক্ত সময়। এই সময়ে বীজতলা তৈরি করতে না পারলে বীজ ভালো হবে না। বীজ ভালো না হলে তীব্র বীজ সংঙ্কট দেখা দিবে।
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম বদরুল আলম বলেন, পানি সরে গেলে বীজের ক্ষতি হবে না। তিনি আরো বলেন, উঁচু স্থানের বীজতলার বীজ ভালো আছে।