বিস্তীর্ণ গ্রামজুড়ে থৈ থৈ পানি। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই পানি। কৃষি জমির কোথাও হাঁটু সমান, কোথাও কোমর সমান পানি জমে আছে। বাড়িঘরের চারপাশ পানিতে ডুবে আছে। কারও কারও বাড়ির উঠোনেও পানি চলে গেছে। শুক্রবার বিকেলে ও রোববার সকালে সরেজমিনে পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের চরগঙ্গা গ্রামে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।
আষাঢ়ের অতিবর্ষণের কারণে চরগঙ্গা গ্রামে এক সপ্তাহ ধরে এ জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কিন্তু পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে চলতি মৌসুমে বীজতলা তৈরি করতে না পারায় আমন আবাদ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এমন অবস্থায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন তারা। স্থানীয় কৃষকদের মতে, পানি নিষ্কাশনে বাঁধা প্রভাবশালীদের মাছের ঘের। খাল-নালা দখল করে প্রভাবশালীরা মাছের ঘের করায় কৃষি জমি থেকে পানি নামছে না।
বড়বাইশদিয়া ইউনিয়নের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আবু জাফর বলেন, ‘চরগঙ্গা গ্রামে ১৩০ হেক্টর কৃষি জমি। এরমধ্যে ১০০ হেক্টর জমি আমন আবাদের উপযোগী। কিন্তু প্রতিবছরই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় চাষবাসে সমস্যা হচ্ছে। ওইখানে অনেকগুলো মাছের ঘেরের কারণে স্লুইসগেট দিয়ে কৃষি জমির পানি নামছে না। এবারও কিছু জমিতে বীজতলা তৈরি করলেও জলাদ্ধতায় নষ্ট হয়ে গেছে। এখন ক্ষেতে পানি থাকায় আমন বীজতলা তৈরি করা যাচ্ছে না। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় আষাঢ়ের এই শেষ সপ্তাহের অতিবর্ষণে চরগঙ্গা গ্রামের কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এখন বিস্তীর্ণ ফসলি ক্ষেতজুড়ে পানি আর পানি। শুধু কৃষি জমিতে নয়, বাড়িঘরের আশপাশও পানিতে টইটুম্বুর। তাই বিপর্যস্ত হচ্ছে জীবন-জীবিকা। পূর্ব চরগঙ্গা গ্রামের কৃষক আজিজ হাওলাদার বলেন, ‘বৃষ্টির পানিতে আমার ক্ষ্যাত , বাড়িঘর তলাইয়া রইছে। বীজতলা করতে পারতাছি না। এইবার মনেহয় আমার ৫ একর জমিই খিল থাকবে।’ ওই গ্রামের বাসিন্দা কলিমুল্লাহ হাওলাদার বলেন, ‘পানি সরানোর ব্যবস্থা না করলে লাগাতার বৃষ্টিতে পুরা গ্রাম তলাইয়া যাইবে। এখনি ঘরের চাইরপাশে পানি। ঘর থেকে বাইর হইতে পারি না।’
জানা গেছে, ওই গ্রামে প্রায় তিন হাজার মানুষের বসবাস। এরমধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ কৃষি পেশার ওপর নির্ভরশীল। তাই চাষবাস করেই চলে তাদের জীবন-জীবিকা। কিন্তু বর্ষা মৌসুম (আষাঢ়-শ্রাবণ) এলেই দুশ্চিন্তায় পরতে হয় তাদের। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। আষাঢ়ের এই শেষ সপ্তাহের অতিবর্ষণে কৃষি জমিতে জলাবদ্ধতার কারণে চলতি আমন মৌসুমে বীজতলা তৈরি করতে না পেরে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে কৃষকরা। কৃষক জাফর হাওলাদার বলেন, ‘ভাবছিলাম ৭ একর জমিতে এইবার আমন দিমু । কিন্তু পানির লাইগ্যা পারমু না মনেহয়।’
স্থানীয় কৃষকরা জানায়, বর্ষা মৌসুমে ওই গ্রামের কৃষি জমির বৃষ্টিবর্ষার পানি খাল-নালার মাধ্যমে চরগঙ্গা স্লুইসগেট দিয়ে সরে যেত। কিন্তু কৃষি জমি ঘেঁষে বয়ে যাওয়া সরকারি খাল-নালা ১০ বছর আগেই দখল করে অন্তত ১০-১৫টি মাছের ঘের করেছে প্রভাবশালীরা। যার কারণে কৃষি জমিতে বৃষ্টিবর্ষায় জলাবদ্ধতা দেখা দিলেও স্লুইসগেট দিয়ে পানি নিষ্কাশনে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। তবে পানি নামার বিকল্প হিসেবে থাকা একমাত্র কালভার্টটিও দুই বছর আগে ভেঙে গেছে। এই কারণে কৃষকদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে। স্থানীয় কৃষক বারেক মৃধা ও হানজেলা প্যাদা বলেন, ‘সব জায়গায় ঘের। পানি নামার সুযোগ নেই। খাল-নালা বাঁধ দিয়ে ঘের করার কারণে পানি সরছে না। ঘেরে মাছ চাষ করে কিছু মাথাওয়ালা প্রভাবশালীরা লাভবান হয়। কিন্তু চাষবাস না করে শত শত কৃষক অভাবে পড়ে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ধিমান মজুমদার বলেন, ওই বিষয়টি আমরা শুনেছি। ডিডি স্যারকে অবহিত করা হয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে ডিডি স্যারকে প্রতিবেদন পাঠাবো।