ফরিদপুরের দিকে দ্রুত গতিতে তেড়ে আসছে চন্যার পানি। প্রতি মিনিটে মিনিটে গোয়ালন্দ পয়েন্টে বাড়ছে পদ্মা নদীর পানি। পদ্মা নদীর পানি বর্তমানে বিপৎসীমার ৩৪ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এর ফলে বন্যার পদধ্বনী, শোনা যাচ্ছে। ফরিদপুরের চর এলাকাবাসী জানায় আগামি দুই দিন এই গতিতে পানি বাড়তে থাকলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আাকার ধরাণ করবে।
গোয়ালন্দ পয়েন্টের গেজ রিডার ইদ্রিস আলী জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ওই পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি আরও ২৪ সেমি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ওই পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার (৮ দশমিক ৬৫) ৩৪ সে. মি (৮ দশমিক ৯৯) উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
গতকাল দুপুরে ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের কাইমদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে ওই এলাকার যোগযোগের একমাত্র কালুর বাজার থেকে পান্নুর দোকন পর্যন্ত সোয়া কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পাকা সড়কে এক কিলোমিটার অংশ তলিয়ে গেছে। তার মধ্যে দিয়েই শিক্ষার্থী ও পথচারীরা চলাচল করছে।
কাইমদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামের নব্বম শ্রেণির ছাত্রী আয়শা পারভীর স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় পানি উঠে যাওয়ায় যাতায়াতের সমস্যার কথা উল্লেখ্য করে বলেন, যে ভাবে পদ্মার পানি বাড়ছে তাতে আজ হয়তো স্কুলে যেতে পারলাম, কাল কি হবে বলতে পারছি না। পানিতে ¯্রােতও অনেক বেশি। একই এলাকার বাসিন্দা গৃহবধূ মাজেদা বেগম (৫৩) বলেন, দুই-তিন দিনের পানি বেড়ে যাওয়ায় ছোট ছেলে- মেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। এখন যাদের নৌকা নাই তারাতো বাজারেরও যেতে পারছে না। ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাকুজ্জামান জানান, বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ইউনিয়নের কাইমদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামে কালুর বাজার থেকে পান্নুর দোকন পর্যন্ত সোয়া কিরোমিটার দৈর্ঘ্যরে পাকা সড়কে এক কিলোমিটার অংশ তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া মনসুরাবাদ এলাকায় মনসুরাবদ মোড় থেকে রিয়াজউদ্দিনের বাড়ি পর্যন্ত ইট বিছানো সড়কটির অর্ধ কিলোমিটার তলিয়ে গেছে।
মোস্তাকুজ্জমান আরও বলেন, হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ইউনিয়নের চর নটাখোলা, কবিরপুর, নর্থ চ্যানেল ও ৪২৩৮ দাগ গ্রামের ৩০০ একর আউশ ধান ও ভুট্টো পানিতে তরিয়ে গেছে।
ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ইউনিয়নের কাইমুদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী, পরান বিশ্বাসের ডাঙ্গী, আয়জদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী ও শুকুর আলীর ডাঙ্গী গ্রামের সাড়ে তিনশ পরিবার পানি বন্দী হয়ে পড়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুণর্বাসন কর্মকর্তা মো. সাইদুর রহমান বলেন, পানি বৃদ্দি পাওয়ায় নদী ভাঙ্গনের শিকার হযেছে সদরপুর উপজেলার ৪৫ এবং ভাঙ্গা উপজেলার ১৪টি পরিবার। তাদের বসত ভিটা নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। তিনি বলেন, এ উপলক্ষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মনিটরিং সেল চালু করা হয়েছে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেরা প্রশাসক (সার্বিক) রোকসানা রহমান জানান, ফরিদপুর এখনও বন্যা কবলিত জেলায় পরিণত হয়নি। তবে পানি বাড়ায় এ জেলার চারটি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের ৫০ গ্রামের মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, দুর্গতদের সাহায্যের জন্য ফরিদপুর সদর ও সদরপুরে ১৫ মেট্রিক টন করে, চরভদ্রাসনে ১০ মে.টন এবং ভাঙ্গায় ২ মে.টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ওই চার উপজেলার সরকল সরকারি কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেন, বন্যার সময় আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়াও সংশ্লিষ্ট স্কুল ও মাদ্রাসা গুলো খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ফরিদপুরের সিভিল সার্জন এনামুল হক বলেন, পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য ফরিদপুর জেলায় মোট ৯২টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।