পদ্মা-যমুনা নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে নৌযান চলাচলে প্রায় অচলবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রচন্ড স্রোতের বিপরীতে ফেরিগুলো চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। ৪টি ফেরি চলাচল করতে না পারায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। যান্ত্রিক সমস্যায় সংস্কারে আছে রুটের ৭টি ফেরি। এতে করে ফেরির সংকটও দেখা দিয়েছে প্রকট আকারে।
এ সকল কারণে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে এ রুটে যানবাহন পারাপার চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উভয় ঘাটে নদী পারের অপেক্ষায় আটকে পড়ছে সহ¯্রাধিক যানবাহন।
শুক্রবার সকালে ১১টা নাগাদ দৌলতদিয়া ঘাট থেকে গোয়ালন্দ রেলগেট পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার জুড়ে মহাসড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। যানজটে আটকে পড়ে সহস্রাধিকার যানবাহন। আটকে পড়া যাত্রী ও চালকরা সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ৩/৪ দিনেও নদী পার হতে পারছে না অপচনশীল পণ্যবাহী যানবাহন। ১-২ দিন ধরে আটকে থেকে কয়েকশ কাঁচামালবাহী ট্রাকের পণ্য পঁচতে/পাকতে শুরু করেছে। পাটুরিয়া ঘাটেও একই অবস্থা বিরাজ করছে।
সূত্র মতে, তীব্র স্রোতের কারণে আগে থেকেই বন্ধ হয়ে আছে রোরো ফেরি খানজাহান আলী ও ইউটিলিটি ফেরি শাপলা-শালুক। এছাড়া রুটের ৫টি ফেরি প্রায় ১ মাস ধরে সংস্কারে আছে নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ডে। বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত এ রুটে সচল ছিল মাত্র ১১টি ফেরি। কিন্তু ফেরিগুলোর নদী পার হতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ২-৩ গুণ সময় বেশী লাগছে। এভাবে ফেরি সার্ভিস চালু রাখা আমাদের জন্য খুবই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। উভয় পারে অসংখ্য গাড়ী আটকে পড়ে যাত্রী, চালকসহ সংশ্লিষ্ট সকলে প্রচন্ড দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। কিন্তু প্রকৃতির উপর আমাদের কারো হাত নেই।
দৌলতদিয়া ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে গোয়ালন্দ রেলগেট পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার জুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হয়েছে। মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে দুই/৩ সারির সৃষ্টি হয়ে যান চলাচল একেবারে ধীরগতি হয়ে গেছে। সড়কে আটকে আছে সহ¯্রাধিক বিভিন্ন যানবাহন। এসময় একাধিক বাস চালক অভিযোগ করেন, তীব্র গরমের মধ্যে দীর্ঘ সময় সিরিয়ালে আটকা থেকে অনেক যাত্রীই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। কিন্তু এরকম দূর্ভোগের মধ্যে যাত্রীবাহী যানবাহনের সাথে দালালদের মাধ্যমে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে অনেক পন্যবাহি ট্রাক ফেরিতে উঠে যাচ্ছে। এ অবস্থায় অন্তত ৫ শতাধিক অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান গত ২/৩ দিন ধরে ঘাট এলাকায় আটকে থেকে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
বরিশাল থেকে আসা ঈগল পরিবহনের চালক মিরাজ হোসেন বলেন, তিনি বৃহস্পতিবার দুপুরে দৌলতদিয়া আসি। ঘন্টার পর ঘন্টা দীর্ঘ সিরিয়ালে আটকে আছি। যাত্রী ও তারা সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। তবে কিছু কিছু যাত্রী লঞ্চ ও ফেরিতে নদী পার হয়ে গেছে।
যশোর থেকে আসা কলা, পিয়াজ, কাচা মরিচ বোঝাই ট্রাক চালক নুরুদ্দিন, সুমন হোসেন, বিল্লাল মিয়াসহ কয়েকজন জানান, দুদিন ধরে মহাসড়কেই দাঁড়িয়ে আছি। প্রচন্ড রোদ ও গরমে কাঁচা পণ্যগুলো পাকতে ও পঁচতে শুরু করেছে। দ্রুত পণ্যগুলো গন্তব্যে পৌছাতে না পারলে ব্যাপক ক্ষতি হবে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া অফিসের ব্যবস্থাপক আবু আব্দুল্লাহ রনি জানান, এই রুটে চলাচলকারী ১৫টি ফেরির মধ্যে তীব্র স্রোতের কারণে ৪টি ফেরি চলাচল করতে পারছে না। অন্য ফেরিগুলো ট্রিপে অতিরিক্ত সময় লাগায় ঘাট এলাকায় যানবাহনের সিরিয়ালের সৃষ্টি হয়েছে। তবে মানুষের দূর্ভোগ কমাতে যাত্রীবাহি যানবাহনগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপার করা হচ্ছে। পন্যবাহি ট্রাক পারাপার বিষয়ে তিনি বলেন, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পচনশীল পন্যবাহি কিছু ট্রাক বাসের সাথে দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, মেরামতে থাকা রুটের ৫টি ফেরি আগামী সপ্তাহে রুটে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।