পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শেরপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এতে শেরপুর-জামালপুর মহাসড়কের পোড়ার দোকান এলাকায় কজওয়ের (ডাইভারশন) ওপর দিয়ে প্রবলবেগে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। শুক্রবার (১৯ জুলাই) সকাল থেকেই এই মহাসড়কে শেরপুর থেকে জামালপুর হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
গত ২৪ ঘন্টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি শেরপুর ফেরিঘাট পয়েন্টে ২ মিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা ছুইঁ ছুঁই করছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পুরাতন ভাঙণ অংশ দিয়ে বন্যার পানি দ্রুতবেগে প্রবেশ করায় চরাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
শুক্রবার (১৯ জুলাই) সকাল সাড়ে দশটার দিকে শেরপুর-জামালপুর মহাসড়কের কজওয়েতে গিয়ে দেখা যায়, মোটরসাইকেল ও ছোট ছোট যানবাহন নৌকাযোগে পারাপার হচ্ছে। আবার রাস্তার মধ্যে পানির ব্যাপক স্রোত থাকায় কেউ কেউ মাছ ধরছে। শেরপুর সদর উপজেলার নন্দির জোত এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হক, আবুল হোসেন ও হাসমত আলী বলেন, বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) রাত ১১টার পর থেকে পানি বাড়তে শুরু করেছে। এতে এ মহাসড়ক দিয়ে সব ধরণের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তারা আরও বলেন, সরকার যদি এই ডাইভারশনে ব্রিজ নির্মাণ করে তাহলে হয়তো এতো ভোগান্তি থাকবে না। তারা দ্রুত এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানান। একই এলাকার বাসিন্দা আব্দুল বারি মিয়া, কৃষক ফারুক মিয়া ও পোড়ার দোকান এলাকার নির্মাণ শ্রমিক মোস্তফা মিয়া বলেন, বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যায়ও আমাদের এলাকায় পানি ছিল না। হঠাৎ করেই রাত ৮টার দিকে বন্যার পানি এলাকায় ঢুকে পড়ে। বন্যার পানিতে তাদের বীজতলা, সবজী ও পাটের আবাদ তলিয়ে গেছে, বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকেছে।
জেলা ত্রাণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, টানা বর্ষণ ও উজানের পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় শেরপুরের ৫ টি উপজেলার ৩৫ টি ইউনিয়নের ১৭২ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ৬৩ হাজার লোক পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। জেলায় ৫২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ওঠায় ৭ দিন ধরে পাঠদান বন্ধ রয়েছে ।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় জেলার ১২৫ হেক্টর সবজি ক্ষেত এবং ৭৪৭ হেক্টর রোপা আমন ধানের বীজতলা এবং ১৬৫ হেক্টর জমির আউস ধানের ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে।
বন্যায় জেলার বিভিন্ন পুকুর, জলাশয় এবং খামারের মাছ ভেসে এবং পাড় ভেঙে প্রায় ৫ কোটি ১৮ লাখ টাকার মৎস্য সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আনোয়ারা বেগম।
এদিকে গত ৫ দিনে শেরপুরে বন্যার পানিতে ডুবে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে । এ পর্যন্ত বন্যা দুর্গতদের মাঝে ৩৫ মে.টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।