সোনারগাঁয়ে ছেলে ধরা গুজবে আতঙ্কিত হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। স্কুল গুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতির সংখ্যা কমে শতকরা প্রায় ৩০-৪০ জনে নেমে এসেছে। গুজব প্রতিরোধে সোনারগাঁ উপজেলা প্রশাসন ও সোনারগাঁ থানা পুলিশ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে জনসচেতনতামুলক সভা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানরা নোটিশের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। তার পরও কোনভাবেই গুজব ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে।
জানা যায়, উপজেলার প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরে ৩৫টি, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১৩ টি এরং মাদ্রাসা ও কলেজ রয়েছে ১৩টি। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে উপস্থিতির হার শতকরা ৩০ ভাগে নেমে এসেছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের নির্দেশনার পরও এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারেনি। ছেলে ধরার আতঙ্কে সবচেয়ে বেশি ভয়ের মধ্যে রয়েছে প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এতে করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নাজুক অবস্থায় রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার ও সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
সরেজমিনে সোনারগাঁয়ের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা গেছে, ছেলে ধরা গুজবে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমে গেছে। শ্রেণীকক্ষে বেশির ভাগ বেঞ্জই খালি পড়ে রয়েছে। শিক্ষার্থীরা ভয়ে স্কুলে আসতে ভয় পাচ্ছে। অভিভাবকরাও তাদের প্রিয় সন্তানদের স্কুলে একা পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন। অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের স্কুলে পৌঁছে দিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেক অভিভাবক স্কুল ছুটির অপেক্ষায় সারা দিন স্কুলেই অপেক্ষা করছেন। ছুটি শেষে সন্তানদের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য।
সোনারগাঁও জি.আর.ইনস্টিটিউশন মডেল স্কুল এ- কলেজের অভিভাবক আছিয়া বেগম জানান, কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও মানুষের মুখে মুখে ছেলে ধরার খবরটি শুনে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। ছেলে ধরার হাত থেকে রক্ষা পেতেই মেয়েকে নিয়ে প্রতিদিন স্কুলে আসি।
মোগরাপাড়া এইচ জি জি এস স্মৃতি বিদ্যায়তনের অভিভাবক নাদিয়া সুলতানা ও আসাদুল ইসলাম বলেন, আমরা আমাদের সন্তানদের নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। যদিও বিষয়টি গুজব। তারপরও নিজের মনকে শান্তনা দিতে পারছি না। ছেলে-মেয়েদের ভয় কাটাতে আমরা নিজেরাই স্কুলে নিয়ে আসি।
ভট্টপুর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ুয়া শিমুল বিশ্বাসের অভিভাবক আখিঁ বিশ্বাস বলেন, মানুষের মধ্যে ছেলে ধরা আতঙ্ক বিরাজ করছে। ছেলেকে স্কুলে দিতে ভয় লাগছে। আগে ছেলে একা স্কুলে আসতো। ছেলে ভয় পাওয়ার কারণে নিজেই ছেলেকে স্কুল দিয়ে যাই এবং ছুটি শেষে ছেলেকে বাড়ি নিতে আসি।
সোনারগাঁ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিখিল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ছেলে ধরা নিছক গুজব। এটা ভিত্তিহীন। স্কুলগুলোতে উপস্থিতি বাড়াতে ব্যাপক প্রচারনা চলছে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের উপস্থিতি বাড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার থেকে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অভিভাবক সমাবেশ ডেকে তাদের সচেতন করার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
সোনারগাঁ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম প্রধান বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। গুজবে কান না দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে। তবে প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক কাজ করছে।
সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, ছেলে ধরা বিষয়টি একেবারেই গুজব। গুজবে কান না দিয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠানো জন্য অভিভাবকদের অনুরোধ করছি। তবে কাউকে সন্দেহ হলে পুলিশকে খবর দিতে হবে। তাছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সভা সমবেশ করে যাচ্ছি। আশা করি দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসবে।
সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, ছেলে ধরা বিষয়টি ভিত্তিহীন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি বাড়াতে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের সচিবদের প্রতিটি এলাকায় মাইকিং করে মানুষকে সচেতন করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।