বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) জন্য বিদেশী ঋণের টাকা কেনা ৬টি নতুন জাহাজ লিজ দিয়ে দেয়া হয়েছে। অবশ্য পুরনো দুটি জাহাজ সংস্থাটি নিজে পরিচালনা করছে। ফলে ঋণের টাকায় কেনা নতুন জাহাজের প্রকৃত লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিএসসি। বরং লাভের অংশ চলে যাচ্ছে লিজ গ্রহীতার পকেটে। তাছাড়া নতুন কেনা জাহাজ থেকে আয় বাড়লেও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিএসসি কাক্সিক্ষত সক্ষমতা অর্জন করতে পারছে না। বিএসসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিদেশী ঋণ নিয়ে বিএসসির জন্য নতুন জাহাজ কেনার অন্যতম যৌক্তিকতা ছিল ওসব জাহাজে বিপিসির তেল পরিবহন করা হবে। ওই কারণে ৬টি জাহাজের মধ্যে তিনটি প্রোডাক্ট ট্যাঙ্কার ও তিনটি বাল্ক ক্যারিয়ার কেনা হয়। কিন্তু নতুন জাহাজগুলো লিজে দেয়ায় ওই উদ্দেশ্য অনেকটাই ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে বিএসসির বহরে যে আটটি জাহাজ রয়েছে সেগুলো হচ্ছে- বাংলার জ্যোতি, বাংলার সৌরভ, বাংলার জয়যাত্রা, বাংলার সমৃদ্ধি, বাংলার অর্জন, বাংলার অগ্রগতি, বাংলার অগ্রযাত্রা ও বাংলার অগ্রদূত। এর মধ্যে বাংলার জ্যোতি ও বাংলার সৌরভ দুটি ৩০ বছরের বেশি পুরনো।
সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে বিএসসির বহরে ৬টি নতুন জাহাজ যুক্ত হয়। চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায় ১ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে বিএসসির জন্য জাহাজগুলো নির্মাণ করে চীনের জিয়াংজু নিউ ইয়াংজি শিপ বিল্ডিং কোম্পানি লিমিটেড। ওই টাকার মধ্যে চীন দিয়েছে ১ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা এবং বিএসসি দিয়েছে ৩৯৫ কোটি টাকা। সব জাহাজই ৩৯ হাজার টন ধারণক্ষমতার (ডিডব্লিউটি)।
সূত্র আরো জানায়, বিএসসির সক্ষমতা ও আয় বাড়াতেই জাহাজ ৬টি কেনা হয়। কিন্তু ওয়ারেন্টি পিরিয়ডেই ওসব জাহাজ লিজে দেয়া হয়েছে। ফলে বিদেশি কোম্পানি বিএসসির জন্য কেনা নতুন জাহাজগুলো এখন পরিচালনা করছে। তাতে লাভের একটি অংশই ওই বিদেশী কোম্পানি নিয়ে যাচ্ছে, যা বিএসসির পাওয়ার কথা ছিল। আর বিএসসি বর্তমানে যে দুটি জাহাজ বিএসসি পরিচালনা করছে, তা অনেক পুরনো। এসব জাহাজ স্রোতের বিপরীতে ঠিকভাবে চলতে পারে না। বরং জোয়ার-ভাটা হিসাব করে চলাচল করে। আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএমওর বিধান অনুযায়ী, ২৫ বছরের বেশি পুরনো জাহাজ সমুদ্রে চলার কথা নয়। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের জাহাজ হওয়ায় সেগুলো এখনো চলাচলের অনুমতি পাচ্ছে। আর নতুন জাহাজ চালাচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এ প্রসঙ্গে বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর ইয়াহইয়া জানান, নতুন কেনা ৬টি জাহাজের তিনটি প্রোডাক্ট ক্যারিয়ার ও তিনটি বাল্ক ক্যারিয়ার। এদেশে আমদানি বেশি হয়, রফতানি কম হয়। আর যেটুকু রফতানি হয় তা কনটেইনারে যায়। আমরা কনটেইনার বহন করতে পারি না। এ কারণে ওয়ানওয়ে পণ্য পরিবহন করে পোষাতে পারি না। তাই চার্টারে জাহাজ দেয়া হয়েছে। নতুন ছয়টি জাহাজ থেকে এ পর্যন্ত ৯৪ কোটি টাকা লাভ হয়েছে।