মেহেরপুরের গাংনীতে সাথী খাতুন নামের এক শিশুকে ঢিল ছুড়ে গুরুতর জখম করার অভিযোগে একটি মামলায় ৮ বছর বয়সী শিশু সিমায়কে গ্রেফতারের ১৩ ঘন্টায় মাথায় জামিন দিয়েছে আদালত। শিশুটির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট,গ্রেফতার নিয়ে এলাকায় পুলিশের বিরুদ্ধে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে গাংনী উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের পলাশীপাড়া গ্রামে। মামলার এজাহারে বলা হয়, গতবছর ৫ অক্টোবর দেলোয়ারের বাড়ির উঠানে তার প্রথম শ্রেণি পড়ুয়া মেযে সাথী খাতুন এবং প্রতিবেশী গিয়াস উদ্দীনের ছেলে সিয়াম খেলা করছিলো। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে কুটক্তিকে কেন্দ্র করে বাকবিতন্ডার ঘটনা ঘটে। ওই সময় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে গিয়াস উদ্দীনের পিতা ইনজাল কারিকর ঘর থেকে বেরিয়ে এসে আমার মেয়েকে মারধর করে। আমার মেয়ে পালাতে গেলে ইনজাল কারিকরের ইটের টুকরো ছুড়ে মারে। তাতে তার ডান চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। এ ঘটনায় ইনজাল কারিকর কে একমাত্র আসামি করে মেহেরপুর সিনি॥যর জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে গত ২৮/১১/১৮ ইং তারিখে একটি মামলা দায়ের করে। মামলাটি নথিভুক্ত করতে গাংনী থানার ওসিকে নির্দেশ দেন আদালত। আদালতের নির্দেশনা পেয়ে গাংনী থানার তৎকালিন ওসি হরেন্দ্র নাথ সরকার মামলাটি নথিভুক্ত করেন। পরে মামলা টি তদন্তের জন্য গাংনী থানার এসআই আশরাফুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তদন্ত শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম আসামি ইনজাল কারিকরের নাম বাদ দিয়ে তার ৭ বছর ১১মাস বয়সী নাতি দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র সিয়ামকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। ওই অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে আদালত পরোয়ানা জারি করলে গত ৯ অগাস্ট রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় শিশুটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। পরদিন আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে জামিন দেন। সিয়ামের পিতা গিয়াস উদ্দীনের বলেন, সেদিন গভীর রাতে পুলিশ বাড়ি ঘেরাও করে। ঘুমন্ত অবস্থায় আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে যায়। সকালে গাংনী থানায় গেলে পুলিশ মামলার কথা জানায়। আইনের নামে অবিচারের কারণে আমার ছেলে এখন আসামি। ওর মা নেই। সারাদিন এখন ও পুলিশের আতঙ্কে থাকে। সিয়ামের দাদা ইনজাল কারিকর সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, যেদিনের ঘটনায় মামলা হয়েছে সেদিন তিনি বাড়িতেই ছিলেন না। অভিযোগপত্রে তার নাম বাদ দিয়ে নাতির নাম যোগ করার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “উপরে আল্লাহ জানে আর নিচে পুলিশ জানে কেন এটা হল। মেহেরপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি শফিকুল আলম বলেন, শিশুটিকে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা ঠিক হয়নি। শিশুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, ৩২৬ ধারায় অভিযোগ, সেটা আদালতে গ্রহণ কোনটিই আইনসিদ্ধ হয়নি। পুরো প্রক্রিয়াটিই ভুলে ভরা। আর এই ভুলের কারণে শিশুটির প্রতি অবিচার হল। মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, আইনি প্রক্রিয়াগত একটা ভুলের ঘটনা। আগামি ৯ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠনের শুনানির দিনে মামলাটি শিশু আদালতে স্থানান্তরের আবেদন করবেন তারা।