গত ১২ আগস্ট পুরো বিশ্বে একযোগে উযযাপিত হয়ে গেলে মুসল্লিম উম্মার সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদ উল-আযহা। অর্থাৎ কোরবানির ঈদ। ‘কুরব’ শব্দ থেকে কোরবানি শব্দটি এসেছে। যার অর্থ নৈকট্য, সান্নিধ্য ও নিকটবর্তী হওয়া। কোরবানি মানে মূলত উৎসর্গ। এ উৎসর্গের মূল্যায়ন আর্থিক ভিত্তিতে নির্ধারিত হয় না, বরং একমাত্র আল্লাহভীরুতার ওপর। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কেবল কোরবানি। কোরবানির মাধ্যমে কোনো কিছু আল্লাহর নামে উৎসর্গ করে তাঁর নিকটবর্তী হওয়া। আল-কোরানের সুরা কাওসার-এ কোরবানি করার জন্য আল্লাহতায়লা পক্ষ থেকে নির্দেশ রয়েছে। আল্লাহর সন্তুষ্টির অর্জনে প্রতি বছর ঈদুল আযহায় কোরবানি করা হয়ে থাকে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঈদু উল-আযহা বিভিন্ন নামে পরিচিত। মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, মিসর এবং লিবিয়ায় কোরবানির ঈদকে বলা হয় ‘ঈদুল কিবির’। আফ্রিকার অনেক এলাকায় ‘তাবাসকি’ বা ‘তোবাসকি’ নামে পরিচত। নাইজেরিয়া এবং পূর্ব আফ্রিকায় পরিচিত ‘বাব্বার সালাহ’ নামে। সোমালিয়া, কেনিয়া এবং ইথিওপিয়ায় বলা হয় ‘সিডওয়েনি’। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পাকিস্তানে ‘বকরি ঈদ’ হিসেবে পরিচিত। এসব দেশে বেশিরভাগই ছাগল কোরবানি করা হয়। ইন্দোনেশিয়াতে ‘ঈদুল আযহা’ ও ‘ঈদুল আদহা’ বলা হয়। তুরস্কে বলা হয় ‘কোরবান বেরামি বা ত্যাগের উৎসব’। অন্যদিকে বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা, আলবেনিয়া এবং বুলগেরিয়ায় বলা হয় ‘কোরবান বাজরাম’। কাজাখস্তানে বলা হয় ‘কোরবান এইত’। কুর্দিশরা বলে ‘সেজনা কোরবান’। আফগানিস্তানে আছে কয়েকটি নাম। দারি ভাষার লোকেরা বলে ‘ঈদ-ই কুরবান’। পোশতু ভাষার লোকেরা বলে ‘লয় আখতার বা কোরবানি আখতার’। মালয়েশিয়ায় বলা হয় ‘আইদিল আদহা’। ‘হারি রায়া কোরবান’ নামেও ডাকা হয়ে থাকে। এর অর্থ হচ্ছে ত্যাগ স্বীকারের উৎসব। কোরবানির ঈদ একেক দেশে একেকভাবে পালিত হলেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এ ধারা একই রকম। ঈদের নামাজের পরপরই মুসলিমরা তাদের পশু নিয়ে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে যান। হোক সেটা রাস্তা অথবা কোনো খেলার মাঠ। ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও মালদ্বীপে এ চিত্র লক্ষ করা যায়। অনেকটা বাংলাদেশের আদলে উদযাপিত হয় ঈদুল আযহা। আমাদের বাংলাদেশে কোরবানির ঈদের পরিচিতি ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ নামে। অনেকের কাছে বড় ঈদ বলেও পরিচিত।
ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত হয়ে বিভিন্ন দেশে কোরবানির ঈদ বিভিন্নভাবে পালন করা হয়ে থাকে। পাঠকদের উদ্দেশ্যে যৎসামান্য আলোকপাত-
অস্ট্রেলিয়া : ঈদুল আযহার দিন অস্ট্রেলিয়ায় সরকারি ছুটি না থাকলেও ইসলামিক স্কুল, সামাজিক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো এ দিনটিতে বন্ধ থাকে। অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়ের বসবাস প্রধানত সাবারবান শহরকে কেন্দ্র করে। এখানে আলাদা কোরবানির পশু কিনে লালন-পালন করার সুযোগ না থাকায় কয়েকটি পরিবার মিলে একজনকে পশু কেনার এবং যতœ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ঈদের দিন সকালে মুসলমানরা মসজিদে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে তারা কোরবানি করেন। মুসলমান ছাড়াও অন্য ধর্মাবলম্বীদেরও কোরবানির গোশত উপহার হিসেবে দান করা হয়। চামড়ার টাকা গরিবদের দান করেন। অস্ট্রেলিয়ার মুসলমানরা এদিন ‘বাকলাঙা’ এবং ‘লোকুম’ নামের দুটি তার্কিশ ডিম রান্না করে।
যুক্তরাজ্য : ১৭০৭ সালে যুক্তরাজ্য গঠনের শুরু থেকেই গ্রেট ব্রিটেনে মুসলমানদের বসবাস। ২০১১ সালের আদম শুমারি অনুসারে যুক্তরাজ্যে মুসলমানের সংখ্যা সাড়ে ২৭ লাখ। যা মোট জনসংখ্যার ৪.৮ ভাগ। বাংলাদেশেরও অনেক মুসলমান যুক্তরাজ্যে আছেন। অধিকাংশ মুসলমানই ইংল্যান্ডে ও ওয়ালেসে বসবাস করেন। এ দুটি এলাকার ১৬.৮ ভাগ মুসলমান বাংলাদেশী। দুই ঈদে মুসলমানরা ট্রাফালগার স্কয়ারে মিলিত হন এবং ঈদ উদযাপন করেন। তবে সেখানকার ঈদ বাংলাদেশ বা উপমহাদেশের অন্যান্য দেশের মতো তেমন আড়ম্ব্বরপূর্ণ হয় না। যুক্তরাজ্যে প্রকাশ্য পশু জবাই করা নিষিদ্ধ হলেও নির্ধারিত এলাকায় সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান থেকে কোরবানি দেওয়া যায়। স্থানীয়ভাবে অনেক এশিয়ান বা বাংলাদেশি গ্রোসারি ঈদের সময় কোরবানির জন্য আগ্রহীদের নাম সংগ্রহ করে থাকে। ঈদের প্রায় এক মাস আগে থেকে দোকানে দোকানে সাইনবোর্ড ঝোলানো থাকে ‘এখানে কোরবানির অর্ডার নেওয়া হচ্ছে’। এর অর্থ হচ্ছে এখানে নাম লিখিয়ে প্রতি নামের বিপরীতে অর্থ দিয়ে যেতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোরবানির পর গরু বা ভেড়ার গোশত ঈদের পরের দিন গ্রাহকদের কাছে সরবরাহ করে তারা।
যুক্তরাষ্ট্র (নিউইয়র্ক) : নিউইয়র্কে প্রায় ৮০ হাজার বাংলাদেশি বসবাস করেন; যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপন করে থাকেন তারা। সবচেয়ে বৃহত্তম ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় সেখানকার অন্যতম বাংলাদেশিপ্রধান এলাকা জ্যামাইকায়।
শহরের ম্যানহাটন, জ্যাকসন হাইটস, উডসাইড ও ব্রুকলিন এলাকায় বাংলাদেশিদের পরিচালিত জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি) হাইস্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয় এ জামাতটি। নিউইয়র্কে বাংলাদেশের মতো পশু কেনাবেচার খোলা হাট না থাকায় এবং নির্ধারিত সøটার হাউস বা কসাইখানা ছাড়া পশু জবাইয়ের অনুমতি না থাকায় অন্তত দেড় মাস আগ থেকে কোরবানি দিতে আগ্রহীরা বেশিরভাগই বাংলাদেশী বা পাকিস্তানি মালিকানাধীন কোরবানির অর্ডার গ্রহণকারী গ্রোসারিগুলোতে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী অর্থ জমা দেন। এরপর বিকালে তারা প্রত্যেকের জন্য কোরবানির গোশত গ্রোসারিতে এনে রাখেন বা কোরবানিদাতার কাছে পৌঁছে দেন। এছাড়াও অনেকে নগরীর অদূরে অবস্থিত ফার্মে গিয়ে গরু, ছাগল, ভেড়াসহ নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী পশু কিনে ফার্মের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কোরবানি দিয়ে থাকেন। তবে গ্রোসারির মাধ্যমেই কোরবানি দেয়াকে অধিকাংশ বাঙালি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
চীন : চীনের জনসংখ্যার শতকরা ১২ জন মুসলমান। এ হিসাবে ১৩৬ কোটি মানুষের চীনে আছেন সাড়ে ১৬ কোটি মুসলমান। হুই, উইঘুর, কাজাক, উজবেক, তাজিক তাতার, খালখাস, সালার, ডংঝিয়াং ও বাওয়ান ইত্যাদি সংখ্যালঘু গোষ্ঠীতে বিভক্ত তারা বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছেন। ঈদুল আযহাকে বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন নামে আখ্যায়িত করা হয়। ঈদুল আযহায় তারা সাধারণত কয়েকজন মিলে একটি পশু কোরবানি করেন। নিজ নিজ বাড়িতে কোরবানি না করে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় এলাকার সবাই কোরবানি করেন।
ফিনল্যান্ড : ফিনল্যান্ডজুড়ে মুসলমানরা উদযাপন করেন বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা। ফিনল্যান্ডে প্রবাসী বাংলাদেশিরা সমবেত হন ঈদের জামাতে। রাজধানী হেলসিঙ্কিতে অনুষ্ঠিত হয় ঈদের জামাত। সালাতুল ঈদ শেষে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি এবং সমৃদ্ধি কামনায় করা হয় দীর্ঘ মোনাজাত।
জার্মানি : ৬০ ও ৭০ দশকের পর থেকে জার্মানিতে ইসলাম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী জার্মানিতে মুসলমান আছেন ৪৩ লাখ (মোট জনসংখ্যার ৫.৪ ভাগ) এবং তাদের মধ্যে জার্মান নাগরিক হলেন ১৯ লাখ (মোট জনসংখ্যার ২.৪ ভাগ)। জার্মানির মুসলমানদের শতকরা ৬৩ ভাগ তুর্কি বংশোদ্ভূত। জার্মান মুসলমানদের জন্য দুঃখজনক ব্যাপার হলো তারা দুই ঈদসহ কোনো ধর্মীয় উৎসবেই সরকারি ছুটি পান না। যেসব মুসলমান সরকারি চাকরিজীবী তাদের খ্রিস্টান সহকর্মীদের ধর্মীয় উৎসবে ছুটি দেওয়া হলেও মুসলমানরা তা পান না। জার্মানিতে তাই মুসলমানদের ঈদে ততটা সমারোহ হয় না। অধিকাংশ মুসলমান বার্লিনে বা শহরাঞ্চলে থাকেন বলে ওখানেই ঈদের নামাজ আদায় করেন। তবে সবাই যে ঈদের নামাজ পড়েন তা নয়, কোরবানিও তারা তেমন একটা করতে পারেন না।
দক্ষিণ আফ্রিকা : দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রতি বছরই দেশটির রাজধানীতে ঈদের জামাতগুলোতে চোখে পড়ে লাখো মুসল্লিদের ঢল। নামাজ শেষে তারা নির্দিষ্ট স্থানে পশু কোরবানি করেন। ধনী-গরিব, মালিক-শ্রমিক ভেদাভেদ ভুলে সবাই মশগুল হন একে অপরকে দাওয়াত দিতে ও দাওয়াত নিতে।
সুইডেন : সুইডেনে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় মসজিদের উদ্যোগে ওসা জিমনেশিয়ামে বৃহত্তম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জামাতে প্রবাসী অনেক বাঙালি অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের রেওয়াজ অনুযায়ী সেখানেও নামাজের আগে কোরবানির তাৎপর্যের ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা হয়। নামাজ শেষে বাংলাদেশ ও মুসলিম উম্মাহর সুখ-সমৃদ্ধি কামনায় করা হয় বিশেষ মোনাজাত।
সৌদি আরব : সৌদি আরব হচ্ছে ইসলামিক ঐতিহ্য, প্রথা ও সাংস্কৃতির প্রধান কেন্দ্র। ঈদ উল আযহার সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হজ পালন করতে সৌদি আরবে আসে। তাই সৌদি আরবের লোকজন ছাড়াও অন্যান্য দেশের মানুষ ঈদে ছাগল বা দুম্বা জবাই করে ঈদ পালন করে। এছাড়া ঈদে সৌদি আরবের লোকজন ব্যায়বহুল কাপড় ছাড়াও বিশাল জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করে।
ভারত : ভারতে ঈদ উল আযহা উপলক্ষে বিশেষ প্রার্থনা, উপহার ও শুভেচ্ছা মাধ্যমে ঈদ উদযাপন করা হয়। ভারতে এই দিনকে সরকারি ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ভারতে ঈদ উল আযহা ‘ঈদ-উল যুহা’ নামে পরিচিত। এই দিনে ভারতের প্রচুর মুসলিম নতুন জামা কাপড় ছাড়াও উন্মুক্ত আকাশের নীচে ঈদ-উল আযহার নামাজ আদায় করে। ঈদে ভারতের অধিকাংশ মুসলিম রাজ্যে ভেড়া, ছাগল ও গরু দিয়ে উৎসব পালন করে। এই কোরবানির গোশত পরিবার, প্রতিবেশি ও গরীব মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া ঈদের দিন যেন প্রত্যেক মুসলিম ধর্মালম্বীদের বাড়িতে একবেলা গোস্ত রান্না করা হয়, এই দিকটি ভারতের মুসলিমরা নিজেদের দায়িত্ব বলে মনে করেন। তবে রাষ্ট্রীয় নিশেধাজ্ঞা থাকায় বর্তমানে বিশেষ করে গরু কোরবানি দিতে অনেকটাই হিমশিত খাচ্ছেন তারা।
তুরস্ক : ঈদ-উল আযহার সময়ে তুরস্কে সরকারিভাবে চার থেকে পাঁচ দিনের ছুটি দেওয়া হয়। তুরস্কের লোকজন পশু জবাই করার পর উদ্বৃত্ত গোশত দাতব্য সংস্থাগুলোকে দান করে দেন। এছাড়া অনেকে পশু জবাই না করে কোরবানি পশুর টাকা দাতব্য সংস্থাগুলোতে দিয়ে দেওয়া হয়।
বাহরাইন : কোরবানির ঈদ একটা উৎসব হিসেবে পালিত হয় বাহরাইনে। বাহরাইনে ঈদে সরকারিভাবে তিন দিনের ছুটি থাকে। পশু জবাই ছাড়াও বাহরাইনের স্থানীয়রা একটা রীতি পালন করে। শিশুরা সুন্দর সাজপোশাক পরে সন্ধ্যাবেলায় বন্ধু বা প্রতিবেশীদের বাড়িতে যায়।
পাকিস্তান : পাকিস্তানে সরকারও ঈদ উল আযহাতে তিন দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করে থাকে। বড়রা কোরবানি দেয়ার জন্য তাদের সাধ্য অনুযায়ী সবচেয়ে ভালো ও স্বাস্থ্যবান গরু, ছাগল বা সম্ভব হলে অন্য কোনো পশু কেনার জন্য পশুর হাটে যান।
ইরান : ইরানে ঈদের দিনটি ছুটি থাকে। ঈদের প্রাসঙ্গিক প্রার্থনা বা দেখা-সাক্ষাতের বিষয়টি থাকলেও অন্যান্য দেশের ঈদ আনন্দের অন্যতম আয়োজন খাওয়া-দাওয়া নিয়ে এখানে মাতামাতি নেই। মনে করা হয়, ইরানের আবহাওয়া বৈচিত্র্যের সঙ্গে খাবার-দাবারের একটা বাৎসরিক হিসাব তৈরি থাকে। যে কারণে গরম বা শীতে ঈদ যখনই হোক না কেনো তার জন্য খাদ্য তালিকায় ব্যত্যয় ঘটে না। তাছাড়া ইরানে শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমান বেশি হওয়ায় সেখানে ঈদ উৎসবের জাঁকজমক অন্য মুসলিম দেশের তুলনায় একটু কমই হয়ে তাকে।
ইরাক : ঈদের দিনে সকালের নাস্তাতে মহিষের দুধের সরের সঙ্গে মধু ও রুটির আয়োজন থাকে। ভুরিভোজের আয়োজনে ভেড়াও জবাই করা হয়।
মিসর : মিসরে ঈদ উদযাপন হয় মোট চারদিন, তবে তার প্রস্তুতি নিতে সবাই ব্যস্ত থাকে আগের কয়েকটা দিনও। ওইদিন বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের খাওয়ানোর জন্য বিশেষ বিস্কুট বানানো হয়। বাড়ির পুরুষরা সকালে নামাজ আদায় করতে মসজিদে যান এবং মসজিদ থেকে ফিরে এসে পশু কোরবানির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
ফিলিস্তিন : গাজায় পশু জবাইয়ের মাধ্যমে ঈদ পালন করা হয়। সম্প্রতি ইসরাইলী হামলা বেড়ে যাওয়ায় ঈদের উৎসবে ও গাজার অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ থাকার পরও ফিলিস্তিনিরা পশু জবাই করে ঈদ পালন করে। যদিও এখানে খুব কম সংখ্যক স্থানীয়রা পশু জবাই করে। গাজায় অধিকাংশ কোরবানির পশু আসে পাশের দেশ ইজিপ্ট থেকে টানেলের মাধ্যমে। কিন্তু সম্প্রতি যুদ্ধের সময়ে এই টানেল ভেঙ্গে যাওয়ায় দারিদ্রতা ও বেকারত্ব ও পশু জবাই করে ঈদ উদযাপনের রীতি ভেঙ্গে পড়েছে। গত কয়েক বছর ধরে গাজায় কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা ঈদের সময় পশু জবাই করে গাজায় গরীবদের মাঝে গোশত বিতরণ করে। গাজায় প্রতিবছর প্রায় ৫২ হাজার পশুর প্রয়োজন হয়।
মালয়েশিয়া : মালয়েশিয়ায় কোরবানিতে ভেড়াই প্রধান পশু। তবে গরু, ছাগলেরও বিপুল উপস্থিতি দেখা যায়। মালয়েশিয়ানরা সাধারণত সমাজবদ্ধভাবে কোরবানি করতে পছন্দ করেন। স্থানীয় মসজিদে সেখানকার সব পশু একসঙ্গে করে সব গোশত একসঙ্গেই বণ্টন করা হয়।
সুইডেন : সুইডেনে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় মসজিদের উদ্যোগে ওসা জিমনেশিয়ামে বৃহত্তম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জামাতে প্রবাসী অনেক বাঙালি আছেন। বাংলাদেশের মতো সেখানেও নামাজের আগে কোরবানির তাৎপর্যের ওপর সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়। নামাজ শেষে মুসলিম উম্মাহর সুখ-সমৃদ্ধি কামনায় করা হয় বিশেষ মোনাজাত।
বাংলাদেশ : বাংলাদেশের মুসলমানরাও যথাযথ ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় ঈদ উল-আযহা পালন করে থাকেন। ঈদের দিন সকালে প্রথম আনুষ্ঠানিকতা হলো নতুন জামাকাপড় পরে পুরুষরা ঈদগাহে নামাজ পড়তে যান। ঈদের নামাজ শুধু পুরুষদের জন্য। ঈদের নামাজ পড়ার পরপরই গরু, মহিষ, ছাগল ইত্যাদি পশু কোরবানি দেওয়া হয়। এ উপলক্ষ্যে কয়েকদিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। ঈদগা ছাড়াও বিভিন্ন মসজিদ-ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় রেডিও-টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হয় এবং পত্রপত্রিকাগুলোয় ঈদু উল-আযহার তাৎপর্য তুলে ধরে মূল্যবান নিবন্ধ প্রকাশিত হয়।
(এম. কে. দোলন বিশ্বাস, দৈনিক সংবাদের সাবেক সহ-সম্পাদক )