হাল জমানায় বিশ্বব্যাপী ‘অন্ধত্ব’ মহামারী আকারে রূপ নিয়েছে। চারিদিকে জেঁকে বসেছে অন্ধত্ব আর অন্ধত্ব। নেতৃত্বে অন্ধত্ব, দলে অন্ধত্ব, অন্ধত্ব ব্যক্তিতে, কর্মস্থলে অন্ধত্ব। পরিবারে অন্ধত্ব, সমাজ ও রাষ্ট্রে অন্ধত্ব। কথায় অন্ধত্ব। বন্ধুতে অন্ধত্ব। অন্ধত্ব সর্ম্পকে, অন্ধত্ব বিচারে। বলা যায়, অন্ধত্বের দাপটে পুরো বিশ্বই যেনো আজ অসহায়।
বলা যায়, অন্ধত্বের কালো থাবাক্রমণে আক্রান্ত হয়ে ব্যক্তি বিবেক আজ যেমন পতনবরণ করছে। তেমনই অন্ধত্বের কালাজ্বরে জর্জরিত বিশ্ব বিবেকও। এসব কিছুর মূলে রয়েছে ‘স্বার্থান্ধতা’ আর ‘অজ্ঞতা’ নামক ‘ভাইরাস’। স্বার্থান্ধতা ভাইরাসটির প্রবল ক্ষতিকার। স্বার্থের নিকট যারা পরাজয় বরণ করেন, তারা স্বভাবতই ব্যক্তি বিবেক বিসর্জন দেন। অজ্ঞতা ভাইরাসটি জ্ঞানসীমা রেখায় বিরাজ করে। ফলে অজ্ঞতা জ্ঞানের ওপর নির্ভর করায় বিবিধ ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হতে না হলেও সঠিক পথে চলার অন্তরায়। আজকের নিবন্ধে উল্লেখিত যুক্তি হয়তো এক চিটিয়া সর্বমহলে সমর্থন পাবে, এমনটি আশা করা বড়ই দুরুহ। কারণ ‘অন্ধত্ব’ যখন সমাজের রন্ধে রন্ধে ঢুকে মিলেমিশে একাকার। তখন অন্ধত্বকেই দৃষ্টি ভাবা ছাড়া বৈ কী? মোদ্দা কথা, অন্ধ সমাজে অন্ধত্বের বিপরীত কিছু কামনা করা বেকার খাটুনি খাটারই নামান্তর।
বাংলা উইকিপিডিয়া মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে জানা যায়, অন্ধ বা অন্ধত্ব (ইংরেজি: ইষরহফহবংং, ইষরহফ) কোনো কিছুকে দেখার সক্ষমতাহীনতা বা অক্ষমতাকে বুঝায়। যিনি অন্ধত্ব বরণ করেছেন, সমাজে তিনি ‘অন্ধ’ নামে পরিচিত। এছাড়া কিঞ্চিৎ দেখার অধিকারী ব্যক্তিও অন্ধ হিসেবে পরিচিত হয়ে থাকেন। কারণ তিনি অস্পষ্ট আকার অথবা রং ভিন্ন অন্য কোনো কিছুই স্পষ্ট ও সঠিকভাবে দেখতে পান না। ট্রাকোমা রোগে আক্রান্ত হয়ে যাবার ফলে পলকগুলো অন্তর্মুখী হয়ে যায় ও কর্ণিয়ার ক্ষতি বা অন্ধত্ব ঘটতে পারে।
অন্ধত্বের যেমন রয়েছে নানাবিধ দিক। তেমনই অন্ধেরও রয়েছে রকমফের। অন্ধ ও অন্ধত্ব বরণ বিষয়ে যৎসামান্য আজকের নিবন্ধে আলোকপাত করা হলো-
অন্ধত্বে আক্রান্ত জনগোষ্ঠী : বিখ্যাত অন্ধ ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রয়েছেন- গ্রিক মহাকাব্য রচয়িতা হোমার, লুই ব্রেল, স্টিভ ওন্ডার, রে-চার্লস, হেলেন কিলার প্রমূখ। আধুনিক তথা উন্নত দেশসমূহে স্বল্প সংখ্যায় তরুণ জনগোষ্ঠীকে অন্ধত্ব বরণ করতে দেখা যায়। সমগ্র বিশ্বে পুষ্টিহীনতা এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে বয়স্ক ব্যক্তিরা ট্রাকোমা এবং চোখের ছানিজনিত সমস্যায় ভোগেন। বিভিন্ন ধরনের রোগ কিংবা দূর্ঘটনাজনিত কারণে বিভিন্ন বয়সের মানুষও অন্ধত্বে আক্রান্ত হন। কখনও কখনও নবজাতক শিশু অন্ধ হয়েই জন্ম গ্রহণ করে। যার দরুণ পৃথিবীর রূপ দর্শন থেকে আজন্ম বঞ্চিত হয়।
বর্ণান্ধতা : চিকিৎসাবিজ্ঞানে বর্ণান্ধতা একটি পারিভাষিক শব্দ। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণ বর্ণান্ধতাকে রঙ দর্শনজনিত পার্থক্য নামে অভিহিত করে থাকেন। কিছু লোক পদার্থের রংজনিত সমস্যায় ভোগেন, যা বর্ণান্ধতা নামে পরিচিত। অর্থাৎ, ব্যক্তি জিনিসকে দেখেন ঠিকই, কিন্তু সঠিকভাবে রঙের নাম বলতে পারেন না অথবা রঙের পার্থক্য বুঝতে অক্ষম। তার মানে তারা কোনো রঙই দেখতে পান না।
সহায়ক সামগ্রী : যখন কোনো ব্যক্তি অন্ধ হয়ে পড়েন, তখন তিনি ব্রেইল পদ্ধতির ন্যায় পুস্তিকাদি পড়া ও লেখার কাজে ব্যবহার করে থাকেন। ফরাসী ব্যক্তিত্ব লুইস ব্রেইল কর্তৃক ব্রেইল পদ্ধতি আবিস্কারের ফলে এ নামকরণ হয়েছে। এতে অক্ষর, বর্ণের সংমিশ্রণ ঘটেছে। প্রত্যেকটি বর্ণ একগুচ্ছ বিন্দু দিয়ে তৈরী যা কাগজে বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। অন্ধজন তাদের আঙগুল দিয়ে অক্ষরের ফোঁটাগুলোকে অনুভবপূর্বক মর্ম উপলদ্ধি করে এর ভাবার্থ বুঝে নেন।
গুরুতরভাবে দৃষ্টিশক্তিহীন অনেক অন্ধ ব্যক্তি স্বাধীনভাবে চলাফেরার জন্যে সহায়ক সামগ্রী হিসেবে সাদা ছড়ি ব্যবহার করেন। সাদা ছড়ি অন্ধদের জন্যে আন্তর্জাতিক প্রতীকরূপে বিবেচ্য। লম্বা এ ছড়ি দিয়ে ব্যবহারকারী দূরের বস্তু স্পর্শের মাধ্যমে অবগত হন। লম্বাজাতিয় সাদা ছড়ি হুভার ছড়ি নামে পরিচিত যা ড. রিচার্ড হুভার কর্তৃক আবিস্কৃত। এর দৈর্ঘ্য ব্যবহারকারীর উচ্চতার উপর নির্ভর করে। কিছু কিছু সংগঠক এর চেয়েও লম্বা মাপের ছড়ি ব্যবহারের পক্ষপাতি।
পথ নির্দেশকের ভূমিকায় প্রশিক্ষিত কুকুরও তাকে দৈনন্দিন কাজে সহায়তা করে থাকে।
অন্ধের ধরণ : ধরণ ও প্রকার ভেদে ‘অন্ধ’ বিভিন্নভাবে হয়ে থাকে। কেউ ‘অন্ধ’ হয়েই জন্ম গ্রহণ করেন। কেউ চোখের দৃষ্টি হারিয়ে অন্ধের কাতারে পড়েন। আবার কেউ কেউ চোখে দেখেও না দেখার ভান করে ‘অন্ধ’ বনে যান। মানসিক দৃষ্টি হারিয়েও অনেকেই সামাজিক ভাবে অন্ধের শিকার হন। এভাবেই দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে অন্ধত্ব বরণ করেন। বাউল গায়কদের ভাষায় এমনও রয়েছে যাদের ‘চোখ থাকতে অন্ধ’ বলা হয়। এমন ‘অন্ধ’ সম্পর্কে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থেও ধারণা পাওয়া যায়। পবিত্র আল কুরআনের সূরা বাক্কারার ১৮ নম্বর আয়াতে উল্লেখ রয়েছে, ‘তারা বধির, মূক, অন্ধ, তারা আর ফিরবে না’। উল্লেখিত আয়াতে যারা চোখে দেখে না তাদের না বুঝিয়ে বরং জ্ঞান ও ইন্দ্রিয় দিয়ে উপলব্ধি করতে পারে না তাদের কথা বোঝানো হয়েছে। (তথ্যসূত্র : তাফসির আহসানুল বয়ান পৃষ্ঠা- ৬)
আইন অন্ধ : ‘আইন অন্ধ’ এ কথাটি রাষ্ট্রীয় ভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত না হলেও এটি সমাজে বিশ্বাসযোগ্যতা যে অর্জন করেনি, তা কিন্তু নয়। বরং বিচারাঙ্গন থেকে সমাজের সর্বস্তরে ‘আইন অন্ধ’ এ কথাটি অতিমূলবানে পরিণত হয়েছে। এ কারণে আইনের দোহাই দিয়ে অন্ধত্বের আবরণে অনেক সত্যই অন্ধকারে ঘোমরে মরে। যা আইনের বিচারের নামে অবিচারের নামান্তরই বটে।
বিচার অন্ধ : আইনসৃদ্ধ না হলেও ‘বিচার অন্ধ’ এ কথাটি প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন রাষ্ট্রে প্রচেষ্ঠা অব্যাহত রয়েছে। খোদ আদালত প্রাঙ্গনে একজন নারী মূর্তির চোখে কালো কাপড় বেঁধে, এক হাতে দাঁড়িপাল্লা, অন্য হাতে তলোয়ার দিয়ে ‘আধুনিক বিচার’ ব্যবস্থার প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া একদিকে যেমন গ্রাম্য সালিশ-বৈঠক থেকে শুরু করে শেষঅবধি বিচারাঙ্গন পর্যন্ত ‘বিচার অন্ধ’ মর্মে এ কথাটির ব্যাপক জনশ্রুতি রয়েছে। অন্যদিকে তেমনই বেদবাক্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে ‘বিচার অন্ধ’ কথাটি। ফলশ্রুতিতে বিচারের নামে অনেক কিছুই ঘটে যায় অন্ধত্বের বাতাবরণে। যা একদিকে ন্যায়বিচারের অন্তরায়। অন্যদিকে নিতান্তই অপ্রত্যাশিতও বটে। এসবের পরও নানা মহলে প্রশ্ন ওঠে, ‘বিচার কী অন্ধ হতে পারে’?
বিচারক অন্ধ : শাসকগোষ্ঠী অর্থাৎ রাজা, বাদশা, স¤্রাটদের চিন্তা-চেতনা থেকে বিচারব্যবস্থার উৎপত্তি। প্রজাদের যে পদ্ধতিতে শাসকগোষ্ঠী বিচার করতে চাইতেন, তাদের তৈরি করা পদ্ধতিতেই বিচারকার্য সম্পূর্ণ হতো। বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আগে দায়মুক্ত ছিলেন বিচারক। অর্থাৎ ওই সময় কোনো দায়বদ্ধতা ছিল না বিচারকের। স্বাভাবিক ধারণা থেকেই দোষী ব্যক্তির শাস্তি নির্ধারণ করতেন বিচারক। পর্যায়ক্রমে আইন প্রণয়নের ধারাবাহিকতা শুরু হলে বিচারক দায়বদ্ধতায় আসেন। যার ফলে বিচারকদের শাস্তি নির্ধারণ করতে হচ্ছে শাসক প্রণীত আইনের মাপকাঠির ওপর ভিত্তি করে। এ ক্ষেত্রে দোষী বা নির্দোষ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণে আইন বিচারকের সীমারেখা বেঁধে দেয়নি। এরপরও বিচারকে অন্ধ আখ্যা দিয়ে অন্ধত্বের বেদশাবরণে বিচারব্যবস্থাকে ঢেকে দিয়ে পুরো ব্যবস্থাকেই অন্ধকার কূপে ফেলে দেওয়া যে হয়নি, তা কিন্তু নয়। যদিও বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম বিচারপতি পদে স্থায়ী হওয়ার পর সংবর্ধনার উত্তরে বলেছিলেন, ‘আইন অন্ধ, কিন্তু বিচারক অন্ধ নন’। (তথ্যসূত্র : মীর জাফর যুগে যুগে পৃষ্ঠা-৫৯, ডি এল আর-২০০৯, অ্যাডভোকেট তৈয়মুর আলম খন্দকার এর নিবন্ধ- নয়াদিগন্ত- ০৪.০৪.২০১৮)
অন্ধত্বের সীমারেখা : উপলব্ধি ও জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা থেকে অন্ধত্বের সীমারেখা ওঠানামা করায় সৃষ্টি হয় মানসিক অন্ধত্বের। উপলব্ধি ও জ্ঞানের স্বল্পতার করণে মানুষ লোভের পুঁজারি হয়ে পড়ে। এতে ক্রমেই অন্ধত্বের দিকে ধাবিত হতে হয়। লোভ অন্ধ করে ফেলে। এ প্রবাদটি যুগ যুগ ধরে প্রচলিত। প্রবাদটি বেদবাক্য হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত। ভয় মানুষকে অন্ধ করে ফেলে। অর্থাৎ কোনো মানুষ যখন ভয় পায়, তখন তার বিবেক নিজ থেকেই অন্ধত্ব বরণ করে। যেকোনো অবস্থান থেকে ‘ভয়’ যে অন্ধত্ব সৃষ্টি করে, তা যেকোনো অন্ধত্বের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর। যেমন পারিবো না।
লোভ এবং ভয় অভ্যাসগতভাবে যখন কারো সামনে চলে আসে, তখন জ্ঞানের পরিসীমা পুরোপরি থাকলেও তাকে নীতিচ্যুত হতে হয়।
অন্ধ বিবেক : সাধারণ অর্থে অন্ধ শুধু দৃষ্টিহীনকে বুঝায়। কিন্তু দৃষ্টিহীনের চেয়ে অধিকত্বর দুষ্টক্ষত বিবেকের অন্ধত্ব। বিবেক অন্ধত্ব বরণ করলে মানুষ বিবেকহীন হয়ে যায়। বিবেকহীন মানুষের পক্ষপাতিত্ব আচরণ ফুটে ওঠে। অন্ধ বিবেক ওয়ালারা ‘জ্ঞানপাপী’ হিসেবে সমাজে পরিচিতি লাভ করে। সুযোগসন্ধানী ও সুবিধাভোগীদের তালিকাভুক্ত খাঁটি পৃষ্ঠপোষক হিসেবেও জ্ঞানপাপীরা অখ্যাতি অর্জন করে থাকে।
চিরঅন্ধ : চিরঅন্ধ হল- পৃথিবীতে যার দৃষ্টিশক্তি আছে, কিন্তু তা দিয়ে সে ‘আলো’ দেখতে পায় না। পার্থক্য করতে পারে না আলো-আঁধারের মাঝে, হক-বাতিলের মাঝে, সত্য-মিথ্যার মধ্যকারে। আলোকে ভাবে অন্ধকার, আর মরিচিকাকে ভাবে পিপাসা নিবারণকারী শীতল পানি। এরা ‘আল্লাহর নূর’-কে আলো বলে জানার পরও অন্ধকার ভেবে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আর ছোটে ‘অন্য আলো’র পিছে।
আল্লাহতায়ালা ওদের সম্পর্কেই বলছেন- ‘যে আমার উপদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবন হবে বড় সংকটময়। কিয়ামতের দিন আমি তাকে অন্ধ করে উঠাব। সে বলবে, হে রব! আমাকে যে অন্ধ করে ওঠালে? আমি তো দুনিয়ায় চক্ষুষ্মান ছিলাম! আল্লাহ বলবেন, এভাবেই তোমার কাছে আমার আয়াতসমূহ এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে। আজ সেভাবেই তোমাকে ভুলে যাওয়া হবে। (সূরা ত্ব-হা ১২৪-১২৬ নম্বর আয়াত)
ধর্মান্ধ : পশ্চাৎপদ ও কুসংস্কারকরা কাল কিয়ামতের দিন তারা দেখতে পাবে কারা অন্ধ আর কারা চক্ষুষ্মান! ওরা আসলে দুনিয়াতেও অন্ধ; যদিও ওদের চোখ আছে। কারণ অন্ধ যেমন বুঝতে পারে না, কোনটা সাদা কোনটা কালো, তেমনি ওরাও চিনতে পারে না সাদা-কালো, আলো-আঁধার। আল্লাহতায়ালা ওদেরকে দুনিয়াাতেও অন্ধ বলেছেন- ‘আর যে ব্যক্তি দুনিয়ায় অন্ধ হয়ে থেকেছে সে আখেরতেও অন্ধ ও অধিকতর পথভ্রষ্ট থাকবে।’ (সূরা বনী ইসরাঈল ৭২ নম্বর আয়াত)
আরেকটি বিষয় হল, বাস্তবেই যদি ধর্মান্ধ বলে তারা এরকম বোঝাতে চায় যে, ধার্মিক ব্যক্তিরা ধর্মের কারণে মঙ্গলপ্রদীপ, মঙ্গল শোভাযাত্রা, প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ ইত্যাদি সংস্কৃতি কিংবা হোক তা পৌত্তলিকদের ধর্মীয় বিষয় গ্রহণ করছে না, এগুলো থেকে বারণ করছে- এগুলো হল, ধর্মান্ধতা; তাহলে তাদের প্রতি করুণাই করতে হয়। এগুলোর পর ধর্ম বলে আর কী থাকে?
ধর্মান্ধ শব্দের আরেকটি কপটতা হল- যাদেরকে ‘ধর্মান্ধ’ বলছে তারা যেনো অন্ধভাবে ধর্ম পালন করছে। আখেরাতে অবিশ্বাসী, প্রবৃত্তিপূজারী, সত্য প্রত্যাখ্যানকারীও প্রকৃত অন্ধ। আল্লাহ ওদেরকে অন্ধ বলছেন আর ওরা যাদেরকে ধর্মান্ধ বলে গালি দিচ্ছে তাদের জ্ঞানী (চক্ষুষ্মান) বলছেন-‘আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে যে ব্যক্তি তা সত্য বলে বিশ্বাস করে আর যে অন্ধ তারা কী সমান? বস্তুত উপদেশ শুধু তারাই গ্রহণ করে, যারা জ্ঞানী।’ (সূরা রা’দ : ১৯ নম্বর আয়াত)
কে অন্ধ কে চক্ষুষ্মান : অন্ধ হল- যে চোখে দেখে না; যার দৃষ্টিশক্তি নেই। যার কাছে সূর্যের আলো আর অমাবশ্যার অন্ধকার সমান। যার কাছে আলো-আঁধার, সাদা-কালোর মধ্যে তফাৎ নেই। আর যে চোখে দেখে সে চক্ষুষ্মান। তাহলে কে অন্ধ কে চক্ষুষ্মান এ প্রশ্ন কেনো? আর এর জবাবই বা কী? এ অন্ধ তাহলে কোন্ অন্ধ?
প্রকৃত অন্ধ কে, এ প্রশ্নের জবাব আল-কোরআনে বর্ণনা রয়েছে। যেমন- কান দ্বারা শুনা যায়। হৃদয় দ্বারা উপলব্ধি করা যায়। আল্লাহতালা কোরআনের -সূরা হজ্বের ৪৬ নম্বর আয়াতের শেষাংশে উল্লেখ করেছেন- ‘প্রকৃতপক্ষে চোখ অন্ধ হয় না, বরং অন্ধ হয় বক্ষস্থিত হৃদয়।’
সূরা আলে ইমরানের ৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- ‘হে আমাদের পালন কর্তা! তুমি আমাদের যে হেদায়েত দান করেছ, তারপর আর আমাদের হৃদয়কে বক্র ও সত্যলংঘনপ্রবণ করো না। এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদেরকে বিশেষ রহমত দান কর। নিশ্চয় তুমিই মহাদাতা।
এ থেকে বুঝা যায়, হৃদয়ও অন্ধ হয়! বরং যার হৃদয় অন্ধ সেই সবচেয়ে বড় অন্ধ। হৃদয় যদি অন্ধ না হয়, তাহলে তো নবীকে চর্মচক্ষে না দেখেও একজন অন্ধ হেদায়তের আলো গ্রহণ করে সাহাবীর মর্যাদায় ধন্য হতে পারে। দৃষ্টির অন্ধত্ব আলোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না। কত অন্ধ আছে, যে হেদায়েতের আলোয় আলোকিত হচ্ছে। কিন্তু যার হৃদয় অন্ধ; সূর্যের আলোতেও সে পথ খুঁজে পায় না!
যনিকা : সব ধরনের অন্ধত্ব বরণ বিবেকহীনতার কুফসল। কারণ, যে যতো অকাম করছে, সে ততো বিবেকহীনতার পরিচয় দিচ্ছে। এভাবেই বিবেককে বিবেকহীনতায় করায়ত্ত করার জন্য মানসিকভাবে নগ্ন প্রতিযোগিতায় ব্যতিব্যস্ত। সুতরাং বলা যায়, বিকেহীনদের ‘যখন যেমন, তখন তেমন’ ভূমিকায় অভিনয় করতে কুন্ঠিতবোধ করতে দেখা যায় না। সুতরাং ‘ঈমানদার’ সাবধান!
[এম. কে. দোলন বিশ্বাস, দৈনিক সংবাদের সাবেক সহ-সম্পাদক]
ফঁষড়হনরংধিং@মসধরষ.পড়স
০১৭১৯-৬০১৪১৩
২৪.০৮.১৯