৯৩% ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ! এর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিশ্বে কোথাও আছে কী? নেই, থাকা সম্ভবও নয় হয়তো! তাও আবার খোদ দেশের রাজধানী ঢাকায়! ঢাকায় এই অবস্থা হলে গ্রামের অবস্থা কী? তাহলে ঢাকার বাইরে পুরো শতভাগ ওষুধই মেয়াদোত্তীর্ণ নয়তো! জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মান এরকম, ভাবা যায়! বর্তমানে যারা একটু কর্মক্ষম ও সুস্থ রয়েছেন, তাদের জন্য আগামীতে কি অশনি সংকেত অপেক্ষা করছে! এসব মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খেয়েই মানুষের রোগ কমেতো না-ই আরো বেড়ে যায়! বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাসপাতালগুলো রুগি ও জেলখানাগুলো আসামী শূন্য হচ্ছে। আর আমাদের সোনার দেশের হাসপাতাল আর জেলখানাগুলোর অবস্থা আর না বললেও পাঠক সমাজের বুঝতে বাকী নেই।
একজন অসুস্থ মানুষ বেচে থাকার ও আরোগ্য লাভের আশায়ই ওষুধ খেয়ে। আর সেই ওষুধ যদি হয় ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ তবে আর আশা কী? ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ উৎপাদক ও বিপনণকারীরা ঠাণ্ডা মাথার গণ-হত্যাকারী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদণ্ড আইন করা জরুরি। এখনই যদি এর যথাযথ ব্যবস্থা সরকার না নিতে পারে, তাহলে বলতে বাধ্য হতে হয়; ৯৩ শতাংশই যেখানে অনিয়ম, সেখানে এটাকে আর অনিয়ম না বলে নিয়ম হিসেবেই গ্রহণ ও ঘোষণা করা হোক!
জীবন রক্ষার ওষুধ নিয়ে যারা অসৎ ব্যবসা করে, তাদের শুধু জরিমানা করলেই হবে? মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ মানে বিষ! যারা জেনে, শুনে, বুঝে এই জীবনঘাতী বিষ মানুষের মুখে তুলে দেয়, তাদের শাস্তি কী শুধুই জরিমানা? শুধু জরিমানা করলে সাময়িক বন্ধ হবে হয়তো। কিন্তু এটা চুড়ান্তভাবে কতটা ফলপ্রসূ হবে? জনশ্র“তি রয়েছে, অসাধু ব্যবসায়ীরা (সেটা যেকোনো ব্যবসায়ী হতে পারে) তাদের লভ্যাংশ হতে একটা প্রভিশন রেখে প্রস্তুত থাকে পরবর্তী জরিমানার জন্য। বছর জুড়ে লাখো কোটি টাকার অবৈধ লভ্যাংশ থেকে এরকম হালকা হাত ধোয়ানি (জরিমানা) দিলে ওদের কতটুকু ক্ষতি, আর জনগণের কতটুকু লাভ?
ওষুধের পাতায় বা প্যাকেটে উৎপাদন ও মেয়াদের তারিখগুলো এত দুর্বলভাবে মুদ্রিত থাকে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা বুঝতে হলে অনুবীক্ষণ যন্ত্রের দরকার হবে। আবার কিছু প্যাকেটের গায়ে এমনভাবে মুদ্রিত থাকে, যাতে কালিগুলো ছাড়া ছাড়া হওয়ায় লেখাগুলো ভাল করে বুঝাও যায়না। শুধু ওষুধ কেন অধিকাংশ ভোগ্য পণ্যের ক্ষেত্রেই একই কথা প্রযোজ্য। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে বরাবরই নির্বিকার! ওষুধের নাম যেভাবে, যে সাইজে স্পষ্ট প্রিন্ট করা থাকে, ওষুধের উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখও একইভাবে থাকার আইন করে দেশবাসীকে বাঁচাতে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে।
ওষুধ ক্রয়ের সময় আমরা প্রায় ৯৫ ভাগ ওষুধের উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ দেখি না। আর এই সুযোগই নিচ্ছে অসাধু ওষুধ ব্যবসায়ীরা। এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য সরকারের কঠোর নজরদারির পাশাপাশি ক্রেতাদেরও সচেতন হতে হবে। একথা ঠিক যে, সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। খাদ্যসংকট নিয়ে দুশ্চিন্তা না থাকলেও এখন নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
দেশে খাদ্যে ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ, ফলে ফরমালিন, পানি আর্সেনিক আর জীবাণুতে পূর্ণ, বাতাস দুষিত, হাস মূর্গী মাছ মাংসে এন্টিবায়োটিক, ধান চাল শাক সবজিতে রাসায়নিকের ছড়াছড়ি! এসব খেয়ে খেয়ে লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ কিডনি, ক্যান্সার, প্রেসার, ডায়াবেটিস, গ্যাস্টিক, আমাষয়, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে! জীবন রক্ষাকারী ওষুধই জীবনহানির বিষ হয়ে আছে! আমাদের দেশের মানুষ ‘এক্সপায়ার’ হয়, কিন্তু কোন পণ্য ও খাবার সামগ্রী এক্সপায়ার হবার নয়! একোন বিষময় দেশে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ?
ঢাকা শহরের ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখা হয় বলে মন্তব্য করেছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। সম্প্রতি ফার্মগেটের খামারবাড়িতে আ. কা. মু গিয়াস উদ্দিন মিলকী মিলনায়তনে ‘বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত বাজার তদারকির গেল ৬ মাসের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ঢাকা শহরের প্রায় ৯৩ শতাংশ ফার্মেসিতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে।’
মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখার দায়ে ভোক্তা আইনের বিভিন্ন ধারায় অনেক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করার পাশাপাশি কয়েকটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার। তিনি বলেন, এই ধরনের প্রতারণা রোধে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সারা দেশেই তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে। তদারকি টিম কখনো ক্রেতা সেজে, আবার কখনো ঝটিকা অভিযানের মাধ্যমে ফার্মেসিগুলোর কার্যক্রম নজরদারির আওতায় রেখেছে।