জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাতে চাচ্ছে। সেজন্য দেশে প্রথমবারের মতো তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে নীতিমালা তৈরি করতে যাচ্ছে সরকার। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর জাতীয় অর্থনীতি ও উৎপাদনশীলতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি অনুসন্ধানে একটি সুনির্দিষ্ট নীতি অনুসরণ করে কাজ করতে চাচ্ছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। কারণ সরকার পরিবর্তন এবং জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের জ্বালানি খাতের নীতি ও সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হয়। েেক্ষত্রে শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে নীরব প্রতিযোগিতাও চলে। বর্তমানে দেশজ গ্যাসের সন্ধান কমে যাওয়ায় আমদানি নির্ভর হয়ে পড়ছে জ্বালানি খাত। ফলে শিল্প উৎপাদনে ব্যয়বৃদ্ধিসহ সকল পর্যায়েই জ্বালানি বাবদ ব্যয় বাড়ছে। জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশজ প্রাকৃতিক তেল-গ্যাস অনুসন্ধান নীতিমালা প্রণীত হলে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নেতিবাচক প্রতিযোগিতার সুযোগ কমবে। অনুসন্ধান শুরু ও শেষ করার কাজটি একটি কাঠামোর মধ্যে আনা যাবে। পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে থমকে থাকা অনুসন্ধান কার্যক্রমও গতি পাবে। ইতিমধ্যে দেশজ প্রাকৃতিক তেল-গ্যাস অনুসন্ধান নীতিমালা-২০১৯ প্রণয়নে একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এটি চূড়ান্ত করা হবে। সূত্র জানায়, তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দেশের স্থলভাগকে ২২টি ব্লকে এবং সমুদ্রভাগকে ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। খসড়া নীতিমালার ভূমিকায় বলা হয়েছে- দেশে ব্যাপক ভিত্তিতে গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের উৎপাদিত গ্যাস এই বর্ধিষ্ণু চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট নয়। লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস (এলএনজি) আমদানির মাধ্যমে গ্যাসের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আমদানি করা এলএনজি অত্যধিক ব্যয়বহুল হওয়ায় দেশে সরবরাহকৃত জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই সুপরিকল্পিতভাবে দেশের গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম গ্রহণ করা দরকার। সরকারি অনুসন্ধান বা উত্তোলন কোম্পানিসমূহ কর্তৃক গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে পূর্বনির্ধারিত মানদ- অনুসরণ করবে। এ লক্ষ্যে বাপেক্স একটি পূর্ণাঙ্গ ম্যানুয়াল তৈরি করবে এবং তার অনুসরণ নিশ্চিত করবে। স্থলভাগের যেসব সম্ভাবনাময় এলাকায় এখনো ভূতাত্ত্বিক জরিপ সম্পাদন করা হয়নি সেসব এলাকায় ধারাবাহিকভাবে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে ভূতাত্ত্বিক জরিপ সম্পাদন করা হবে। ক্ষেত্রবিশেষে অনুসন্ধান কাজে সম্ভব হলে বাপেক্সের সঙ্গে জিএসবিকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ভূতাত্ত্বিক জরিপের ভিত্তিতে অনশোরে যেসব সম্ভাবনাময় এলাকায় এখনো দ্বিমাত্রিক ভূকম্প জরিপ (২ডি সাইসমিক সার্ভে) সম্পাদন করা হয়নি, সেসব এলাকায় নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে ক্লোজ গ্রিড জরিপ সম্পাদন করতে হবে। দ্বিমাত্রিক জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে চিহ্নিত ও সম্ভাবনাময় এলাকাগুলোতে ত্রিমাত্রিক ভূকম্প জরিপ পরিচালনা করার পর কূপ খনন করতে হবে। দীর্ঘদিনের চর্চা অনুযায়ী ব্লক ব্যবস্থাপনায় বিদেশি কোম্পানির (আইওসি) অংশগ্রহণ এবং তাদেরকে আকর্ষণ করার জন্য পিএসসি পরিবর্তনের সুযোগ রাখা হয়েছে নীতিমালায়। সূত্র আরো জানায়, খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী তেল-গ্যাস অনুসন্ধান, উন্নয়ন ও উৎপাদনসহ আহরিত যাবতীয় প্রাথমিক ও প্রক্রিয়াজাত ডাটা সুপ্তভাবে সংরক্ষণ, ব্যবহার ও শেয়ারের লক্ষ্যে একটি ডাটা পলিসি এবং ডাটা ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম তামিম জানান, দেশে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমে আশঙ্কাজনক ধীরগতি রয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। নীতিমালা এক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। তবে তা অনুসরণ না করলে কোনো সুফল আসবে না।