রোহিঙ্গাদের জন্য ধারালো অস্ত্র তৈরি করছে কক্সবাজারের বেসরকারী এনজিও সংস্থা মুক্তি। উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নানা প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করা মুক্তি এনজিও কর্তৃক বানানো সাত শতাধিক ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে উপজেলা প্রশাসন। এ সময় ধারালো অস্ত্র তৈরির কামার অধীর দাসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। সোমবার দুপুরে এসব ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।এদিকে সম্প্রতি এনজিও মুক্তি কর্তৃক রোহিঙ্গাদের জন্য এই ধারালো অস্ত্র তৈরি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা সহিংসতার আশঙ্কা প্রকাশ করে সমালোচনা ঝড় ওঠে। পরে বিষয়টি নজরে নেয়া উখিয়া উপজেলা প্রশাসন। একপর্যায়ে সোমবার দুপুরে উখিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার ফখলুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ উখিয়ার কোটবাজারস্থ বালুখিয়ার রাস্তার মাথার কামারের দোকানে অভিযান চালায়। অভিযানে তৈরিকৃত প্রায় সাড়ে ৩শ’সহ ৭শ’ ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। আটক করা হয় দোকান মালিক কামার অধীর দাসকে। অভিযুক্ত এনজিও সংস্থা মুক্তির প্রধান নির্বাহী বিমল চন্দ্র দে সরকার বলেন, রোহিঙ্গাদের দিয়ে সহিংসতা সৃষ্টির জন্য ধারালো অস্ত্র তৈরির বিষয়টি সত্য নয়। মূলত কৃষি কাজের জন্য কক্সবাজার শহরের এয়ারর্পোট রোডস্থ মহিলা কলেজের সামনে কৃষি বিপণী নামের প্রতিষ্ঠানের মালিক আজিজুল হককে দুই হাজার ৬শ’ এই কৃষি কন্নি অর্ডার দেয়া হয়েছিল। প্রতিটির দাম ধরা হয়েছিল ৮৯ টাকা। তবে সেই কৃষিকন্নি কেন ক্যাম্প এলাকায় বানাতে দেয়া হয়েছে জানিনা। সূত্রমতে, কৃষি বিপণী প্রতিষ্ঠানের মালিক মোঃ আজিজুল হক একজন জামাত নেতা। আর প্রতিষ্ঠানটি একটি কৃষিপণ্য বিক্রয়ের প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান নিরানী বা চাপাতি কিংবা ধারালো অস্ত্র তৈরির কারখানা না। মুক্তি এনজিও সংস্থা নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে কেন এই জামায়ত নেতার নামে বা দোকানে চাপাতি তৈরি অর্ডার দিয়েছে তা খুবই রহস্যজনক। পাশাপাশি ওই চাপাতি বা নিরানী কক্সবাজার তৈরি না করে ক্যাম্পের আশপাশে করার বিষয়টিও সচেতনমহলকে ভাবিয়ে তুলেছে। তবে আজিজুল হকের দাবী, কক্সবাজার শহরে এই নিরানী তৈরির জন্য কেউ অর্ডার না নেয়ার কারণে উখিয়ার কোটবাজারে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি আজিজ নিজেকে জামাতের কোন সদস্য নয় বলে দাবী করেন। অভিযান পরিচালনাকারি সহকারী কমিশনার কর্মকর্তা ফখলুল ইসলাম বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে ওই দোকানে অভিযান চালানো হয়। এই সময় দোকান মালিক জানান, সাইফুল নামে এক ব্যক্তি এসব চাপাতি (ধারালো অস্ত্র) রোহিঙ্গাদের জন্য বানাতে দিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানান। এই দোকানে দুই হাজার ছয়শ’টির মতো চাপাতি বানাতে দেওয়া হয়েছিল। এগুলো গত ৯ আগস্ট সাপ্লাই দেওয়ার কথা ছিল। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দোকানি অধীর দাস সাংবাদিকদের বলেন, মুক্তি নামে একটি এনজিও সংস্থার লোক পরিচয়ে ভালুকিয়ার বাসিন্দা সাইফুল এক মাস আগে দুই হাজার ৬০০ পিস চাপাতি তৈরির অর্ডার দেন। এর জন্য আমাকে ৩০ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়েছিলেন। এর বাইরে কিছুই জানি না। স্থানীয়রা জানান, রোহিঙ্গাদের জন্য এক লাখ ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে আড়াই হাজারের বেশি চাপাতি বানাতে দেওয়া হয়। এর জন্য দোকানদারকে ৩০ হাজার টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়েছিল। পরে এক লাখ টাকা দিয়ে এগুলো নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। তাদের ধারণা, এসব চাপাতি দিয়ে রোহিঙ্গাদের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ পরিবেশ অশান্ত করার পাঁয়তারা করছে। উখিয়া থানার ওসি নুরুল ইসলাম জানান, চাপাতি উদ্ধারের ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।