সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবৈধ দখলে রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের শত শত একর জমি। আর অবৈধ দখলে থাকা ওসব জমির একটা বড় অংশেরই মালিকানা নিয়ে মামলা জটিলতা রয়েছে। তাছাড়া ইজারা নিয়ে শর্ত অনুযায়ী খাজনা না দেয়ার ফলেও কিছু জমি অবৈধ দখলে চলে গেছে। বর্তমান রেলপথমন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার পর রেলের অবৈধ দখলে থাকা জমি উদ্ধারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি নতুন করে রেলের জমি লিজ দেয়াও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাংলাদেশ রেলওয়ের মোট জমির পরিমাণ ৬১ হাজার ৮৬০ একর। তার মধ্যে অবৈধ দখলে রয়েছে ৩ হাজার ৮৪১ একর জমি। যার মধ্যে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান দখল করে রেখেছে ৯২২ একর জমি। পূর্বাঞ্চলে (চট্টগ্রাম) বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান দখলে রেখেছে ৫২৬ একর জমি। আর পশ্চিমাঞ্চলের (রাজশাহী) বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান রেলওয়ের ৩৯৬ একর জমি অবৈধ দখলে রেখেছে। কিন্তু অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে জমি উদ্ধাওে রেলওয়ের জোরালো পদক্ষেপের অভাব রয়েছে।
সূত্র জানায়, পূর্বাঞ্চল (চট্টগ্রাম) রেলওয়েতে সব মিলিয়ে জমি আছে ২৪ হাজার ৪৪০ একর। তার মধ্যে ঢাকা বিভাগে আছে ১৭ হাজার ১৬৯ একর। বাকি ৭ হাজার ২৭১ একর জমি পড়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে। তার মধ্যে ৮৫৪ একর জমি রয়েছে অবৈধ দখলে, যার ৫২৬ একর দখলে রেখেছে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান। পূর্বাঞ্চল রেলওয়েতে সবচেয়ে বেশি জমি অবৈধভাবে দখলে রেখেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)। নরসিংদী-মদনগঞ্জ সেকশনে ২২৫ দশমিক ৫৪ একর ও হবিগঞ্জ জেলায় ১৬ দশমিক ৬ একর জমি অবৈধ দখলে রেখেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাটি। একইভাবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দখলে আছে রেলওয়ের ১৩৩ একর জমি। তাছাড়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ৬ একর, বন বিভাগ ৫ দশমিক ১৬ একর, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ২ দশমিক ৬ একর, খাদ্য বিভাগ ২ একর, বারৈয়ারহাট পৌরসভা দশমিক ৩৩ একর, ফেনী পৌরসভা দশমিক ৬ ও টিঅ্যান্ডটি বিভাগ, ফুলগাজী দশমিক ৩৩ একর জমি দখলে রেখেছে। তাছাড়া ঢাকা বিভাগে গণপূর্ত বিভাগ (ঢাকা জেলা) ১ একর, নারায়ণগঞ্জের আইইটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ২ দশমিক ৩৮ একর, দ্বিতীয় পশুসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ৬ দশমিক ২৭ একর, ফায়ার সার্ভিস ১ দশমিক ১ একর, পানি উন্নয়ন বোর্ড ৬ দশমিক ৭ একর, বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ দশমিক ৪৫ একর, পাট করপোরেশন (নারায়ণগঞ্জ জেলা) ১২ দশমিক ৫৪ একর, এবং সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ১ দশমিক ৯৪ একর জমি অবৈধ দখলে রেখেছে। একইভাবে ঢাকা ওয়াসা দশমিক ২৯ একর, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগ ১০ দশমিক ৩৬ একর, গণপূর্ত বিভাগ ১৩ একর, সুনামগঞ্জের ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি দশমিক শূন্য ৫ একর, সিলেটে খাদ্য মন্ত্রণালয় ১ দশমিক ৭ একর, মৌলভীবাজারে খাদ্য মন্ত্রণালয় ১ দশমিক শূন্য ৩ একর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ওয়াপদা কর্তৃপক্ষ ২৪ একর জমি অবৈধ দখলে রেখেছে। তার বাইরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া খাদ্য বিভাগ ১ দশমিক ২ একর, ইউনিয়ন পরিষদ দশমিক ১ একর, আশুগঞ্জ খাদ্য বিভাগ ৬ দশমিক ৭৫ একর, আখাউড়া খাদ্য বিভাগ দশমিক ৫ একর, চিটাগং কোম্পানি কর্তৃপক্ষ দশমিক ২৬ একর এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান অবৈধ দখলে রেখেছে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের আরো ৩৫ দশমিক ৩৬ একর জমি।
সূত্র আরো জানায়, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে সাড়ে ২৪ হাজার একর জমির মধ্যে রেলওয়ে সরাসরি অপারেশন কার্যক্রমে ব্যবহার করছে ১৫ হাজার একর জমি। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ইজারা দেয়া আছে ৪ হাজার ৯৭২ একর। তার মধ্যে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে ৪৮৮ একর জমি ইজারা দিয়েছে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে। অবশিষ্ট জমি কৃষি, মৎস্য, নার্সারি/বনায়ন, সিএনজি স্টেশন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেয়া হয়েছে। পূর্বাঞ্চলে রেলওয়ের দখলাধীন অব্যবহৃত জমির পরিমাণ ৩ হাজার ৫৮৩ একর। তাছাড়া রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের (রাজশাহী) জমিও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের দখলে রয়েছে। ওই অঞ্চলে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান রেলওয়ের ৩৯৬ একর জমি অবৈধ দখলে রেখেছে। দুই অঞ্চল মিলিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের মোট জমির পরিমাণ ৬১ হাজার ৮৬০ একর। এর ৩ হাজার ৮৪১ একরই রয়েছে অবৈধ দখলে।
এদিকে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে থাকা অবৈধ জমির বিষয়ে জানতে রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পূর্বাঞ্চলে ৩০টির বেশি সরকারি প্রতিষ্ঠান রেলওয়ের জমি অবৈধ দখলে রেখেছে। জমি দখলে শীর্ষে রয়েছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর। এর বাইরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, পাট করপোরেশন, আশুগঞ্জ ওয়াপদা কর্তৃপক্ষ, খাদ্য বিভাগসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। একেক প্রতিষ্ঠান একেক কায়দায় জমিগুলো দখল নিয়েছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান দখল করা জমিগুলো নিজেদের বলে দাবি করে আসছে। ফলে ওসব জমির মালিকানা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এর বাইরে বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময় আমাদের কাছ থেকে জমি ইজারা নিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব প্রতিষ্ঠান ইজারার শর্ত অনুযায়ী রেলওয়েকে টাকাও দেয় না, আবার জমির দখলও ছাড়ছে না। এসব কারণে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের মোট জমির একটা বড় অংশ অবৈধ দখলে চলে গেছে। তবে ওসব জমি দখলমুক্ত করতে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে কাজ করে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানান, অবৈধ দখলে থাকা জমি উদ্ধারে মন্ত্রণালয় তৎপর রয়েছে। প্রতি মাসেই বিভিন্ন এলাকা থেকে অবৈধ দখলে থাকা জমি উদ্ধার করা হচ্ছে। এ কার্যক্রম আরো জোরদার করা হবে।