দেশের বৃহত্তর স্থলবন্দর বেনাপোল। প্রতিদিন ওই বন্দরে প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে পণ্য নিয়ে সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ ট্রাক প্রবেশ করে। কিন্তু বন্দরে পর্যাপ্ত শেড বা গুদাম না থাকায় খোলা আকাশের নিচে রাখা হচ্ছে আমদানিকৃত পণ্য। ফলে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে পণ্যের গুণগত মান। পাশাপাশি বন্দরের ভেতর ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় শেডের ভেতর বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়ছে। আবার অনেক শেডে বৃষ্টির পানি পড়ে মালামাল ভিজে যাচ্ছে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমদানিকারকরা। আমদানিকারক ও বেনাপোল বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বেনাপোল বন্দর থেকে সরকার প্রতিবছর সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে। ওই বন্দরে ৪২টি শেড থাকলেও সংস্কারের কারণে ১০টি শেড ভেঙে ফেলা হয়েছে। বর্তমানে আছে ৩২টি শেড। বন্দরে চারটি ওপেন ইয়ার্ড ও একটি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড রয়েছে। বন্দরে পণ্য রাখার ধারণ ক্ষমতা ৪৬ হাজার মেট্রিক টন। গত দুই বছর আগে প্রতিদিন এ বন্দর দিয়ে ২৫০ থেকে ৩০০টি পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করতো। দুই বছর আগে দু’দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বাড়াতে দুই দেশের সরকার বেনাপোল ও পেট্রাপোল বন্দর সপ্তাহে সাত দিন ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। তারপর থেকে দু’দেশের মধ্যে আমদানি-রপ্তানি বেড়ে যায়। আগে যেখানে ২৫০ থেকে ৩০০টি পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করতো, এখন সেখানে ৪৫০ থেকে ৫০০টি পণ্যবাহী ট্রাক বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করে। আর বন্দরে পণ্য ধারণ ক্ষমতা ৩৬ হাজার মেট্রিক টন থেকে ৪৬ হাজার মেট্রিক টন করা হলেও বর্তমান প্রতিদিন এ বন্দরে ৩ লাখ টনের অধিক পণ্য ওঠানামা করে থাকে।
সূত্র জানায়, বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি বাড়লেও সে তুলনায় বন্দরে শেড বা গুদাম ও ইয়ার্ড তৈরি করা হয়নি। যে কারণে আমদানিকৃত পণ্য খোলা মাঠে রাখতে হচ্ছে। আমদানিকৃত পণ্য খোলা আকাশের নিচে রাখায় পণ্য রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে একদিকে যেমন এর গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমদানিকারকরা। আর এসবের কারণে আমদানিকারকরা বেনাপোল ছেড়ে অন্য বন্দর দিয়ে আমদানি করছেন। তবে এসব সমস্যা সমাধানের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ২৪.৯ একর জমি অধিগ্রহণ করেছেন। আরো ২৬ একর জমি অধিগ্রহণ প্রস্তাবনায় রয়েছে। এসব জমি অধিগ্রহণের পর সেখানে নতুন নতুন শেড/ গুদাম/ ইয়ার্ড নির্মাণ করা হলে বন্দরে আর জায়গা সংকট থাকবে না বলে জানিয়েছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, বেনাপোল স্থলবন্দরে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্য রাখার জন্য ৩২টি শেড ও চারটি ওপেন ইয়ার্ড রয়েছে। যার ধারণক্ষমতা ৪৬ হাজার মেট্রিক টন। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে গতিশীলতা বাড়াতে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে আধুনিক চেকপোস্ট নির্মাণ করলেও বেনাপোল বন্দরকে আধুনিকায়ন করা হয়নি। জরুরিভিত্তিতে ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল রাখার জন্য একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গুদামসহ ১৫টি শেড নির্মাণের দাবি জানানো হয়েছে। তাছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে দুটি এক্সপোর্ট শেড ও একটি ছাউনিযুক্ত ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড নির্মাণের দাবিও করা হয়েছে।
অন্যদিকে বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক মো. মামুন কবীর তরফদার জানান, এ পথে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের অধিক সুযোগ-সুবিধা থাকলেও কিছু সমস্যার কারণে আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। দুই দেশের বাণিজ্যের স্বার্থে দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।