বর্ষায় হাতে কাজ নেই নাটোরের বড়াইগ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষের। তাই মাছ ধরার উপকরণ চাঁই বুনে বিকল্প আয়ের পথ বেছে নিয়েছেন তারা। এই আয় থেকেই উপজেলার প্রায় পাঁচ হাজার পরিবারে জীবিকার ব্যবস্থা হয়েছে। কারণ, এ সময়টাতে চলনবিলসহ বিভিন্ন জলাশয়ের পানিতে মিলছে নানা প্রজাতির ছোট-বড় মাছ। এসব মাছ ধরার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে মাছ ধরার ফাঁদ চাঁই। এদিকে স্বল্প আয়ের মানুষের হাতে তৈরি চাঁই ঘিরে উপজেলার মৌখাড়া হাটে বসছে চাঁইয়ের বড় মোকাম। সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার এই হাট বসছে। বড়াইগ্রামসহ পাশের গুরুদাসপুর, সিংড়া ও চাটমোহর উপজেলা থেকে চাঁই বিক্রি করতে আসেন মানুষ। চলনবিল এলাকা ছাড়াও ঢাকার পাশের মানিকগঞ্জ ও হাওর এলাকার পাইকারেরা এসে চাঁই কিনে নিয়ে যান।
শুক্রবার সরেজমিনে এসব ফাঁদ তৈরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা সবাই কমবেশি দিনমজুর ও নি¤œ আয়ের মানুষ। জমিজমা নেই। বর্ষায় হাতে কাজ থাকে না তাদের। বিকল্প আয় হিসেবে মাছ ধরার ফাঁদ তৈরির আয় থেকে সংসার চলে। তা ছাড়া এই কাজে পুঁজিও লাগে কম।
বড়াইগ্রামের চন্ডিপুর গ্রামের আবদুল বাতেন জানান, চাঁই বানাতে বাঁশ আর তালগাছের ডাগুরের শাঁস ও নাইলন সুতা লাগে। দিনে পরিবারের সদস্যরা মিলে কমপক্ষে পাঁচ-ছয়টি মাছ ধরার ফাঁদ তৈরি করা যায়। তবে সংসারে যাঁদের সদস্য বেশি, তাঁরা ১০-১৫টি ফাঁদ তৈরি করতে পারেন। প্রতিটি ফাঁদ তৈরিতে ৮০ থেকে ১৬০ টাকা টাকা ব্যয় হয়। বিক্রি করেন ২২০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে। খরচ বাদে লাভ হয় ভালো। এ কারণে তাদের দেখাদেখি অনেক মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজনও এই পেশায় ঢুকে পড়েছেন।
বড়াইগ্রাম ইউপি চেয়ারম্যান মো. মমিন আলী বলেন, ইউনিয়নটির চারদিকেই বিল রয়েছে। নিজেদের প্রয়োজনেই স্থানীয়রা মাছ ধরার ফাঁদ তৈরি করে মাছ শিকার শুরু করেন। বর্তমানে তার ইউনিয়ন এলাকায় পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ বাণিজ্যিকভাবে চাঁই তৈরি ও বিক্রি করে সংসার চালাচ্ছেন। তাদের দেখাদেখি চলনবিলকেন্দ্রিক অন্য উপজেলায়ও কমবেশি এ প্রচলন শুরু হয়েছে। মাছ ধরার উপকরণগুলোর মধ্যে রয়েছে চাঁই (খোলসুন), ধুন্দি, বানা, খাদন, খালই, বিত্তি ও ভাইর। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক জোড়া চাঁই (খোলসুন) আকারভেদে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, বিত্তি ৩৫০ টাকা, ভারই ৩০০ টাকা, ধুন্দি ২৫০ টাকা, বানা ৪০০ টাকা, খাদন ৪৫০ টাকা ও খালই ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকার মানিকগঞ্জ থেকে আসা পাইকার আবদুল খালেক ও ইয়াকুব আলী বলেন, প্রতি হাটে তিনি প্রায় এক লাখ টাকার চাঁই, বানাসহ মাছ ধরার বিভিন্ন সামগ্রী কিনে তা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করেন। এতে তাঁর খরচ বাদে প্রতি হাটে ২৫ হাজার টাকার মতো লাভ হয়।