ধানের দাম নিয়ে হতাশার পর এবার পাটের দাম নিয়েও চিন্তিত কৃষকরা। দেশের বিভিন্ন স্থানে বছরের পর বছর মিল মালিকদের কাছে বকেয়া টাকা পড়ে থাকায় এবার পাট কিনতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না পাট ব্যবসায়ীরা। এতে পাটের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ কৃষকরা। পাট ব্যবসায়ীরা জানান, এ বছর মূলধনের অভাবে পাট কিনতে পারছেন না তারা। অনেক পাট ব্যবসায়ী ব্যাংক লোন ও বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা নিয়ে ব্যবসা করছেন। এদিকে, পাটের দাম কমে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা; কোনো কোনো ক্ষেত্রে উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না তারা। মাগুরা জেলার এক পাট ব্যবসায়ী জানান, বিভিন্ন পাটকল মালিকদের কাছে প্রায় দুই কোটি টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। এজন্য এ বছর পাট কিনতে পারছি না। সরকারের নির্ধারিত দাম থাকলেও মূলধনের অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান শ্যামলা পাট ১৫০০ টাকা মণ ও লালি পাট ১৭০০ টাকা মণে ক্রয় করছি। নগদ টাকা দিয়ে পাট কিনতে হয়। বিক্রি করতে হয় বাকিতে। এবার আমি প্রায় ২০ গাড়ি পাট ডেলিভারি দিয়েছি। যার মূল্য প্রায় এক কোটি টাকা। দেনা রয়েছি প্রায় ৫ লাখ টাকা। তিনি আরও বলেন, পাট চাষিরা অধিকাংশ সময় স্থানীয় বাজারে পাট বিক্রি করেন। পরিবহন এবং আর্থিক সংকটের কারণে প্রান্তিক কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য না পেয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাগুরা জেলার আরেক বলেন, সাধারণ ব্যবসায়ীরা যদি সরকারি ক্রয় কেন্দ্রে পাট দিতে পারে তাহলে কিছুটা হলেও লাভবান হবে। কিন্তু সেখানে একটি গ্রুপ আছে তারা পাট বিক্রি করে থাকে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলিত মৌসুমে মাগুরায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩৬ হাজার ১১০ হেক্টর। পাট চাষ হয়েছে ৩২ হাজার ৫৫৫ হেক্টর। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৮৩ বেল (১ বেল = ১৮৭ কেজি)।
একইভাবে ফরিদপুরে পাটের দরপতনে হতাশ চাষিরা। দাম কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে চাষিদের সঙ্গে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ‘পাটের রং ভালো না হওয়ায়’ উৎপাদিত পাটের দরপতন হয়েছে বলে মনে করছে। সোনালি আশের ঐতিহ্য হিসেবে খ্যাত ফরিদপুর জেলার কানাইপুর, তালমা, কাদিরদী, সাতৈরে বর্তমানে ভালো মানের পাট মণপ্রতি ১৫শ টাকা থেকে ১৯৫০শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। কোরবানি ঈদের আগেও মণপ্রতি পাট ২২শ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল স্থানীয় বলে চাষিরা জানান। ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কান্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, এ বছর জেলায় মোট পাটের আবাদ হয়েছে ৮২ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমিতে। এ বিপরীতে পাটের উৎপাদন ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮১হাজার ৯৩০ মেট্রিক টন।
অর্থকরী ফসল হিসেবে চাষিদের কাছে পাটের গুরুত্ব রয়েছে। তবে চাষিদের ঘরে থাকা পর্যন্ত পাটের দাম বৃদ্ধি পায় না। কৃষকরা তাদের পাটের ন্যায্যমূল্য পায় না। এর পরিবর্তে মধ্যসত্বভোগী ও পাটের অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক লাভবান হচ্ছে বলে অভিযোগ পাট চাষিদের। একজন কৃষি কর্মকর্তা বলেন, অধিকাংশ কৃষক গরিব হওয়ায় তারা পাট শুকিয়ে তাড়াহুড়ো করে বিক্রি করে দেয়, এতে তারা পাটের সঠিক দাম পায় না। সরকারিভাবে পর্যাপ্ত পাট ক্রয় কেন্দ্র না থাকায় ব্যবসায়ীরা কৃষকদের দুর্বলতার সুযোগ নেয়। এদিকে পাট চাষে উৎপাদন খরচ বাড়ছে কিন্তু বিক্রির সময় ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। যে কারণে পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষিরা। এতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হচ্ছে না।