আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’ বাংলাদেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন। এর প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ছাত্রলীগের অগ্রণী ভূমিকা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ এর শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং এগারো দফা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় স্বাধীকার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধের উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগ মুজিব বাহিনী গঠন করে, যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং বাংলাদেশ বিজয় লাভে ভূমিকা পালন করে। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ পুনর্গঠনেও ছাত্রলীগের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু ইদানিং ক্ষমতাসীন দলের আশীর্বাদপুষ্ট ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা একের পর এক অনাকাঙ্খিত ঘটনার নজির স্থাপন করে চলেছেন।
জবরদস্তি, দখল, ত্রাস সৃষ্টি, মাদকের কারবার, খুন, ধর্ষণ, ছিনতাইয়ের মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার পাশাপাশি দলীয় কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারের নামে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়া নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই উদাহরণ- চলতি মাসের শুরুর দু’দিনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনা। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুই শিক্ষকসহ অন্তত ১০ জন আহত হন। এ ঘটনার জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিতে ডিপার্টমেন্ট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। অন্যদিকে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ছাত্রলীগের অন্তত পাঁচ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এ ঘটনার রেশ ধরে আহতদের সহকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শাটল ট্রেনের হোসপাইপ কেটে দেয় এবং ট্রেনের চালককে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
এসব ঘটনায় নিজেরা হতাহতের পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পড়াশোনার ক্ষতি, ভাংচুরের কারণে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী একটি সংগঠনের কাছ থেকে এরকম আচরণ আশা করা যায় না। যে ছাত্রলীগ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস বদলে দিয়েছে, সেই ছাত্রলীগ নিয়েই আজ সর্বত্র আতঙ্ক। ছাত্রলীগের সব অর্জন যেন আজ বিফলে যেতে বসেছে- পরিণত হচ্ছে বিসর্জনে। একের পর এক সংঘর্ষ-অপকর্ম থেকে দলটিকে সরিয়ে আনতে না পারলে ইতিবাচক অর্জনগুলো অচিরেই ম্লান হয়ে যাবে। একারণে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দ্রুত তাদের এই সগযোগী সংগঠনকে রক্ষায় ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরতে হবে। নৈরাজ্য-সহিংসতার পথ পরিহার করে ছাত্রলীগকে ইতিবাচক, গঠনমূলক ও কল্যাণকর রাজনীতি করার আহ্বান জানাই।