বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু তারপরও রফতানি বাড়ছে না। বরং দেশের পাট রফতানি বহুমুখী সঙ্কটে রয়েছে। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে পণ্যের দাম বেশি পড়া। তাছাড়া পাটের ব্যবসায় পুঁজির সংকট, প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া, আধুনিক প্রযুক্তির অভাব- এসব কারণে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানির পরিমাণ দিন দিন কমছে। ইপিবি এবং পাটখাত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পাটের বহুমুখী ব্যবহার বাড়াতে ইতিমধ্যে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। পাটের তৈরি পলিথিন তৈরি করা হয়েছে। এ পলিথিন ১৫ দিনের মধ্যে মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। যে কারণে এটি পরিবেশসম্মত। কিন্তু এখনো এটি দেশের ভেতরে ব্যাপকভাবে প্রচলন করা সম্ভব হয়নি। কারণ এর দাম বেশি পড়ছে। তাছাড়া পাট পাতা থেকে চা তৈরি করে সেগুলো রফতানি করা হচ্ছে। কিন্তু দেশের বাজারে এটি এখনো ব্যাপকভাবে বাজারজাত করা সম্ভব হয়নি। ফলে পাটজাত পণ্যের রফতানি বাড়ানো যাচ্ছে না।
এদিকে ইপিবি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিগত ২০১০-১১ অর্থবছরে এদেশ থেকে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতারি হয় ১১১ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। ২০১১-১২ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ৯৬ কোটি ৭৩ লাখ ডলারে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে সেটি আবার বেড়ে দাঁড়ায় ১০৩ কোটি ৬ লাখ ডলারে। কিন্তু ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা আশঙ্কাজনকভাবে কমে ৮২ কোটি ৪৪ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ খাতের রফতানি আয় আবার কমে ৮৬ কোটি ৮৫ লাখ ডলার হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রফতানি সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ৯১ কোটি ৯৫ লাখ ডলারে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই রফতানি সামান্য বেড়ে হয় ৯৬ কোটি ২৪ লাখ ডলার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রফতারি আয় বেড়ে হয় ১০২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই খাত থেকে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১০৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার। অর্জিত হয়েছে ৮১ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ২০ দশমিক ৪১ শতাংশ কম। আর চলতি অর্থবছরে এ খাতে ৮২ কোটি ৪০ লাখ ডলারের রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, যা গত অর্থবছরের চেয়ে সামান্য বেশি। এর আগে এই লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রফতানি আয়ের নজির রয়েছে।
অন্যদিকে দেশের পাট ও পাটজাত পণ্য প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জুট গুডস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম জানান, বিদেশি বাজারে এখন পাটপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। যে কারণে রফতানিও বাড়ছে। কিন্তু চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। এছাড়া বিদেশের বাজারে প্রতিযোগিতায় পাটপণ্য পিছিয়ে পড়ছে। কেননা দেশে পাটজাত পণ্যের দাম বেশি পড়ছে। এ ব্যবসায় সবচেয়ে বড় সংকট পুঁজির। কেননা ব্যাংকগুলো এ খাতে ঋণ দিতে চায় না। ফলে উদ্যোক্তারা ব্যবসাকে এগিয়ে নিতে পারেন না।