সরকার দেশের খাদ্য সংগ্রহ নীতিমালা ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে। মূলত খাদ্য সংগ্রহ দুর্নীতিমুক্ত করতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর ফলে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহের সুযোগ তৈরি করা হকে। এ্যাপসের মাধ্যমে দেশের এলাকাভিত্তিক সকল কৃষকের তালিকা তৈরি করে তা অনলাইনে প্রকাশ করা হবে। কোন ব্যক্তি নয়, মিল মালিকের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করা হবে। আর কোন সিএসডি সরাসরি চাল সংগ্রহ করবে না। এলএসডি সংগ্রহ করে তা সিএসডিতে স্থানান্তর করবে। যে কোন পর্যায়ে অনিয়ম পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের সকল কৃষকের ডাটাবেজ তৈরি করা হবে। এলাকা ভিত্তিক ওই তালিকা তৈরি করে তা অনলাইনে প্রকাশ করা হবে। কোন কৃষক ঠিক কি পরিমাণ জমি চাষাবাদ করছেন তা ওই তালিকায় থাকবে। অনলাইনে প্রকাশের পর কোন অসঙ্গতি দেখলে তা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিলে যাচাই-বাছাই করে তা সংশোধন করে দেয়া হবে। উপজেলা পর্যায়ের এই কমিটিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তাসহ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা থাকবেন। আবাদের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করে দেয়া হবে কে কত পরিমাণ ধান সরকারের কাছে বিক্রি করবে। উপজেলা পর্যায়ের কমিটির উপদেষ্টা থাকবে সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্য। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকবেন এর সদস্য সচিব। কোথাও কোন অসঙ্গতি থাকলে কৃষকের সর্বশেষ আশ্রয় স্থল থাকবে স্থানীয় সংসদ সদস্য। উপজেলা কমিটিতে যাচাই-বাছাইয়ের পর কোন কৃষকের আপত্তি থাকলে তা আবার সংসদ সদস্যের কাছে অভিযোগ করতে পারবেন। সংসদ সদস্য প্রয়োজনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ডেকে পর্যবেক্ষণ করবেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন। সে অনুযায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তালিকা চূড়ান্ত করবেন।
সূত্র জানায়, খাদ্য পরিধারণ কমিটির বৈঠকে ধান সংগ্রহের পরিমাণ ও মূল্য নির্ধারণ করার ১৫ দিনের মধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, কৃষি কর্মকর্তা, খাদ্য কর্মকর্তা প্রান্তিক চাষীদের শ্রেণী ভেদে তালিকা তৈরি করবে। এই তালিক স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তা চূড়ান্ত করবে। চূড়ান্ত তালিকাটি অনলাইনে প্রকাশ করা হবে। নীতিমালাটি চূড়ান্ত হলে মিল মালিক ছাড়া অন্য কেউ চাল সরকারের কাছে বিক্রি করতে পারবেন না। খাদ্য গুদামও মিল মালিক ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে মিলের ‘ক্র্যাশিং ক্যাপাসিটি’র ওপর নির্ভর করে মিলগুলোর তালিকা তৈরি করা হবে। প্রতি জেলার জেলা প্রশাসক এই তালিকা তৈরি করবেন। অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে চাল সংগ্রহের অন্তত ১৫ দিন আগে জেলা প্রশাসক এই তালিকা খাদ্য অধিদফতরে পাঠাবেন। এর একটি তালিকা খাদ্যমন্ত্রণালয়ে সচিব এবং মন্ত্রী বরাবরও পাঠাবেন জেলা প্রশাসকরা। কোন অবস্থায় কোন বন্ধ মিল মালিক সরকারের কাছে চাল বিক্রি করতে পারবেন না।
সূত্র আরো জানায়, নতুন নীতিমালার আলোকে কোন সিএসডি গোডাউন সরাসরি চাল কিনতে পারবে না। এলএসডিগুলোর মাধ্যমে চাল কেনা হবে। এলএসডি থেকে সিএসডিতে চাল পাঠানো হবে। সেখানে চাল গুদামজাত করে রাখা হবে। মিল মালিকরা চাল সরবরাহ করলে তাতে অবশ্যই ক্রয়ের তারিখ থাকতে হবে। গুদামে নির্ধারিত সময়ের বেশি পুরানো চাল পাওয়া গেলে তার সম্পূর্ণ দায়ভার থাকবে খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার। এছাড়া গুদামে ক্রয়ের তারিখ এবং ডব্লিউকিউসি ব্যতীত কোন বস্তা পাওয়া গেলে বা বিবর্ণ চাল পাওয়া গেলে এবং নিয়ম বহির্ভূত কিছু ঘটলে সংশ্লিষ্ট গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানান, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও তার অধীনস্থ সকল স্তরকে দুর্নীতি মুক্ত করতে চাই। এ লক্ষ্যে খাদ্য সংগ্রহ নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আশা করি এতে ৬০ ভাগ দুর্নীতি কমে যাবে।