রাজধানীতে দৃশ্যমান হচ্ছে মেট্রোরেলের কাজ। অধিকাংশ পিলারের উপরে বসছে স্প্যান। মেট্রোরেলের প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিলো পাইলিং। সব চ্যালেঞ্জ জয় করে উত্তরা থেকে মতিঝিলের ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড মেট্রো-রেলের সার্বিক নির্মাণ কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এ পর্যন্ত প্রকল্পটির ৩০ দশমিক ৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া, উত্তরা ও আগারগাঁওয়ের মধ্যকার ৪৬ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড -ডিএমটিসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক জানান, বর্তমানে উত্তরা ও আগারগাঁওয়ের মধ্যকার ১২ কিলোমিটার মেট্রোরেলের ৫.৮৬ শতাংশ দৃশ্যমান হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ফাস্ট ট্রাক প্রকল্পের আওতায় ঢাকা মহানগরীতে দেশের প্রথম এলিভেটেড মেট্রো রেল ম্যাস-র্যাপিড ট্রান্সপোর্ট (এমআরটি) লেন-৬ এর নির্মাণকাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জনগণের জন্য উদ্বোধনের লক্ষ্যে দ্রুত গতিতে কাজ করা হচ্ছে। মোট আটটি প্যাকেজে ২০ কিলোমিটার মেট্রো-রেল নির্মাণের প্রকল্পটি সম্পন্ন হচ্ছে। আগারগাও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২৩.৫০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। দ্বিতীয় প্যাকেজের আওতায় ৫২ শতাংশ কাজ দৃশ্যমান হয়েছে এবং অবশিষ্ট কাজও শিগগিরই শেষ হবে। বর্তমানে ১১.৭৩ কিলোমিটার রেলপথ ও নয়টি স্টেশনের নির্মাণ কাজ চলছে। উত্তরা থেকে আগারগাওয়ের মধ্যে ৩য় ও ৪র্থ প্যাকেজের আওতায় এটি হচ্ছে। ১ম প্যাকেজের আওতায় ভূমি উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এটি ২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছিল এবং নয় মাস আগেই সম্পন্ন হয়। ৮ম প্যাকেজ রোলিং স্টোক অ্যান্ড ডিপোট ইকুইপমেন্ট কালেকশন) এর আওতায় এমআরটি লাইন-৬ এর জন্য ২০১৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জাপানী কোম্পানিটি বগি নির্মাণ শুরু করে। কারওয়ান বাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৪.৯২২ কিলোমিটার রেলপথ ও চারটি স্টেশনের ১৬.৭৪ শতাংশ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন হবে বলে দাবি করছে মেট্রোরেল প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী (পূর্ত) আবদুল বাকি মিয়া বলেন, প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। শুধু দেশে নয় জাপানেও মেট্রোরেল প্রকল্পের কিছু অংশের কাজ হচ্ছে, যেমন- কোচ নির্মাণ কাজ। মেট্রোরেলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কাজই চ্যালেঞ্জিং। তারপরও প্রধান চ্যালেঞ্জ ইতোমধেই সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। তিনি আরো বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্প এলাকায় দেখলেই সবাই বুঝতে পারছেন প্রতিনিয়তই পরিবর্তন হচ্ছে। একের পর এক স্প্যান পিলারে বসছে। বর্তমানে স্টেশন নির্মাণ কাজও এগিয়ে যাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে নির্দিষ্ট সময়েই প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন করতে পারবো। রাজধানীতে নির্মিতব্য ভূ-উপরিস্থ রেল ব্যবস্থার নাম ঢাকা মেট্রো। ঢাকা মেট্রো রেল ব্যবস্থাকে ম্যাস র্যাপিড ট্রানযিট সংক্ষেপে এমআরটি (গজঞ) হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। ২০০০ সাল থেকে অতি জনবহুল ঢাকা মহানগরীর ক্রমবর্ধমান যানবাহন সমস্যা ও পথের দুঃসহ যানজট কমিয়ে আনার লক্ষ্যে এই ম্যাস র্যাপিড ট্রানযিট ব্যবস্থা স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। এই উদ্দেশ্যে একটি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয় যার নাম ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট। ২০১৬ থেকে এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ২২ হাজার কোটি টাকা যার মধ্যে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)’র প্রকল্প ঋণ ৭৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ২৫ শতাংশ। ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকা। বাকি পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার জোগান দিচ্ছে সরকার। প্রকল্প পরিকল্পনা অনুযায়ী উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রো রেল চালু হলে দুই দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। থাকবে ১৬টি স্টেশন। মেট্রো রেল ব্যবস্থায় প্রথম ধাপে প্রতিদিন ২৪টি ট্রেন চলাচল করবে। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলবে ট্রেনগুলো। প্রতি ট্রেনে থাকবে ছয়টি বগি। একটি ট্রেনে এক হাজার ৬৯৬ জন যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব হবে। এর মধ্যে বসে যেতে পারবেন ৯৪২ জন, বাকীরা দাঁড়িয়ে যেতে পারবেন। একটি স্টেশনে ট্রেন অবস্থান করবে ৪০ সেকেন্ড। যাত্রীরা ফুটপাত থেকে সিঁড়ি, এসকেলেটর কিংবা লিফটে উঠতে পারবেন ট্রেনে। মেট্রো রেলের প্রতিটি পিলারের ব্যাস হবে দুই মিটার, ভূগর্ভস্থ অংশের ভিত্তি হবে তিন মিটার ও উচ্চতা হবে ১৩ মিটার। একটি স্তম্ভ থেকে আরেকটির দূরত্ব হবে ৩০ থেকে ৪০ মিটার। স্তম্ভের ওপরে পাশাাপাশি ও সমান্তরাল দুটি রেলপথ থাকবে এবং লাইনগুলোর প্রস্থ হবে প্রায় ৯.১ মিটার। মেট্রো রেলের চূড়ান্ত রুট অ্যালাইনমেন্ট হলো- উত্তরা তৃতীয় ধাপ-পল্লবী, রোকেয়া সরণির পশ্চিম পাশ দিয়ে (চন্দ্রিমা উদ্যান-সংসদ ভবন) খামারবাড়ী হয়ে ফার্মগেট-সোনারগাঁও হোটেল-শাহবাগ-টিএসসি-দোয়েল চত্বর-তোপখানা রোড থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত। এ রুটের ১৬টি স্টেশন হচ্ছে- উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, আইএমটি, মিরপুর সেকশন-১০, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, সোনারগাঁও, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, জাতীয় স্টেডিয়াম ও বাংলাদেশ ব্যাংক। ট্রেন চালানোর জন্য বিদ্যুৎ নেওয়া হবে জাতীয় গ্রিড থেকে। ঘণ্টায় দরকার হবে ১৩.৪৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এর জন্য উত্তরা, পল্লবী, তালতলা, সোনারগাঁ ও বাংলা একাডেমি এলাকায় পাঁচটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র থাকবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০.১০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথটির প্রথম ধাপ চালু হবে পল্লবী থেকে সোনারগাঁও হোটেল পর্যন্ত। এই ১১ কিলোমিটার রেলপথ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে চলতি ২০১৯ সালের মধ্যে। দ্বিতীয় ধাপে সোনারগাঁও হোটেল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত ৪.৪০ কিলোমিটার পথ চালুর পরিকল্পনা রয়েছে ২০২০ সালে। তৃতীয় পর্যায়ে পল্লবী থেকে উত্তরা পর্যন্ত ৪.৭ কিলোমিটার চালুর পরিকল্পনা করা হয়েছে ২০২২ সালে।