বাংলাদেশে চাঁদাবাজি একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সারা বছরই নীরব চাঁদাবাজি চলে। এটা এখন একরকম ‘ওপেন সিক্রেট’। গোপন তবে সবারই জানা। শীর্ষ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ী, ফুটপাতের হকার, মুদি দোকানদার, শিল্প কারখানার মালিক, সব ধরনের পরিবহন ব্যবস্থা এমনকি স্থানীয় বাসিন্দারাও চাঁদাবাজদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। এলাকা হিসেবে রাজধানী ঢাকা থেকে বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, উপজেলা বাণিজ্য কেন্দ্র সর্বত্রই চাঁদাবাজি চলছে। শীর্ষ স্থাণীয় একটি জাতীয় দৈনিকের খবর অনুযায়ী, কারাবন্দি, দেশের বাইরে থাকা এবং এমনকি নিহত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের চেলাচামুন্ডা, ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, পরিবহন শ্রমিক মালিক সমিতি এমনকি পুলিশের বিরুদ্ধেও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। ব্যাপক এই চাঁদাবাজির শিকার যদিও প্রাথমিকভাবে ব্যবসায়ীরা, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এর বেশির ভাগ ক্ষতি বহন করতে হয় সাধারণ মানুষ বা ক্রেতাদেরই। এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলার নিয়ন্ত্রক পুলিশও যে ওয়াকিবহাল তা স্পষ্ট হয় আইজিপির বক্তব্যে। তার ভাষ্যমতে, চাঁদাবাজি, চুরি, রাহাজানি ও ছিনতাই রোধে পুলিশ ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি নিয়েছে। প্রয়োজনে পুলিশকে গুলি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও চাঁদাবাজির স্থান হিসেবে শতাধিক পয়েন্ট চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্থাৎ পুলিশ চাঁদাবাজি সম্পর্কে সজাগ। এসব চিহ্নিত স্থানে সাদা পোশাকের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে এবং সতর্কতা হিসেবে সিসি ক্যামেরাও বসানো হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেসব সদস্যের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। চাঁদাবাজি ঠেকাতে টেলিফোনে হটলাইন খোলা হয়েছে। অর্থাৎ চাঁদাবাজি সম্পর্কে পুলিশ শুধু অবহিত হয়েই থাকেনি, ঠেকানোর ব্যবস্থাও নিয়েছে। এটা অবশ্যই স্বস্তির বিষয়। তবে পুরো স্বস্তি মিলেনি ব্যবসায়ী কিংবা সাধারণ মানুষের। এতসব ব্যবস্থার পরও চাঁদাবাজি থেমে নেই। বিশেষ করে পরিবহন খাতে ও মার্কেট গুলোতে এখনও চাঁদাবাজি হচ্ছে অহরহ। নতুন বাড়িঘর নির্মাণ, বিয়ে-শাদি এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানেও চাঁদা দিতে হচ্ছে। চাঁদা না দিলে কিংবা দিতে অস্বীকার করলে হামলা-মামলার শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে। এসব জায়গায় যারা চাঁদাবাজি করে তাদের অনেকেই এলাকাভিত্তিক চেনাজানা। চাঁদাবাজি ঠেকাতে পুলিশ যেসব প্রশাসনিক উদ্যোগ নিয়েছে তার জন্য পুলিশ বিভাগ অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। দেশবাসীর প্রত্যাশা তাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে এবং তারা চাঁদাবাজির উৎসমুখ বন্ধ করতে সচেষ্ট হবে।
চাঁদাবাজির স্বর্গ পরিবহন সেক্টর। চাঁদা ছাড়া গাড়ির চাকা ঘুরতে পারে না। গাড়ি ছাড়া থেকে শুরু করে প্রতি ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিয়েই গন্তব্যে পৌছতে হয়। চাঁদা না দিলে গাড়ি বের করাই দুরূহ ব্যাপার। দিবালোকে প্রশাসনের নাকের ডগায় এই চাঁদা তোলা হচ্ছে। যেন মগের মুল্লুকে বাস করছি আমরা। একটি গাড়ি প্রয়োজনীয় অনুমোদন নিয়েই রাস্তায় নামে। রাস্তায় নেমে পড়তেই শুরু হয় চাঁদাবাজি। কে নেয় না চাঁদা। নামে বেনামে চাঁদাবাজির উৎসবে মেতেছে বিভিন্ন নামধারী চাঁদাবাজি সংগঠন। এমন কোন সড়ক মহাসড়ক নেই যেখানে ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হয় না। চাঁদা দাও গাড়ি চালাও এই নীতিতে চলছে পরিবহন সেক্টর। রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসন, পুলিশ, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সহ মিলে মিশে একাকার চাঁদা তোলার এই মহা আয়োজনে। ৭০ কিলোমিটার যাত্রা পথে একটি বাস কে নয় শত টাকা চাঁদা দিতে হয় বলে জানান এক পরিবহন শ্রমিক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, চাঁদা না দিলে কোন টার্মিনাল থেকে যাত্রী বাহী কোন বাস বের হয় না। দিন দিন এই চাঁদার পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে চাঁদা নেয়ার ঘাটের সংখ্যাও বাড়ছে খুব দ্রুত। সেই সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে চাঁদার টাকার পরিমান। ব্যবসা করা দায় হয়ে পড়েছে। সড়ক পথের চাঁদাবাজির কারনে চাঁদা আদায় স্পট গুলোতে নিয়মিত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় গাড়ি চালক চাঁদা ফাঁকি দেয়ার জন্য চাঁদা আদায় এলাকায় দ্রুত গাড়ি চালায়। দ্রুত গতির গাড়িতে চাঁদা আদায়কারীরা হাতে থাকা ছোট লাঠি নিক্ষেপ করে। আর এতেই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। চাঁদা আদায় জায়গার সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। পরিবহন সেক্টরে প্রকাশ্য চাঁদা আদায় দেখে সাধারণ মানুষের মধ্যে অন্যায় করার প্রবনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা উপলদ্ধি করছে প্রকাশ্য দিবালোকে চাঁদা তুললেও তার বিচার হয় না। আর আড়ালে আবডালে করলে তার বিচার হবে কি করে। পরিবহন সেক্টরের চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে। রাজনৈতিক লাভের দিকে না তাকিয়ে আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে অবশ্যই পরিবহন সেক্টরের বেপরোয়া চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। সড়ক পথে চাঁদাবাজি বন্ধ হোক, নিরাপদ হোক সড়ক যোগাযোগ। সরকারের আন্তরিক হস্তক্ষেপ ছাড়া কোন ভাবেই এই চাঁদাবাজি বন্ধ হবে না।
যে গল্পের শেষ নেই-এর মতো আমাদের দেশে বছরের পর বছর চাঁদাবাজি চলে আসছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, এ দেশে চাঁদাবাজি কখনও বন্ধ হওয়ার নয়। পরিবহন মালিক সমিতি, ট্রেড ইউনিয়ন, পুলিশ, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নামে চলে আসছে এসব চাঁদাবাজি। পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও পুলিশের বাইরেও রয়েছে আরও অনেক ধরনের চাঁদাবাজ। ফেরিঘাট গুলোয় বাস-ট্রাকের জন্য নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুণও আদায় করা হয়। আগে চাঁদাবাজরা প্রধানত বড় বড় ব্যবসায়ী-শিল্পপতি ও ঠিকাদারের পিছনে লেগে থাকত। আজকাল তারা পাড়া-মহল্লার দোকানদার ও ফুটপাথের ক্ষুদে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে চাকরিজীবী পর্যন্ত কাউকেই ছাড় দিচ্ছে না। যারা দিতে চাচ্ছেন না বা সঙ্গতি না থাকায় দিতে পারছেন না, তাদের ওপর বিপদ নেমে আসছে। কারো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বা বাসাবাড়িতে হামলা ও ভাংচুর চালানো হচ্ছে। চাঁদাবাজি বন্ধে নানা ব্যবস্থা গ্রহণের কথা সরকারি তরফ থেকে বারবার শোনা গেলেও বাস্তবে তার কোনো সুফল জনগণ পাচ্ছে না, বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি আরও বেপরোয়া ও উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে। চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি বিভিন্ন মহল থেকে করা হলেও সরিষার মধ্যে ভূতের কারণে তা বন্ধ হচ্ছে না। দ্রব্যমূল্য সহনশীল রাখতে এবং মানুষের জানমাল নির্বিঘœ করতে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যে কোনো মূল্যে চাঁদাবাজি বন্ধে পদক্ষেপ নেবে বলেই সবার প্রত্যাশা।
দেশজুড়ে সীমাহীন চাঁদাবাজির খবর মুদ্রিত হচ্ছে বিভিন্ন পত্রিকার পাতায়। পত্রিকান্তরে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয় : ফুটপাতের ক্ষুদ্র দোকান, হকার থেকে শুরু করে শপিংমল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গার্মেন্টস মালিক, ঠিকাদার এমনকি সব্জি বিক্রেতা কেউই চাঁদাবাজি থেকে রেহাই পাচ্ছে না। শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ক্ষমতাসীন নেতার নামে চিহ্নিত ক্যাডাররা আদায় করছে মোটা অংকের টাকা। চাঁদা চেয়ে না পেলে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। বেনামে পাঠানো হয় কাফনের কাপড়। চাঁদা না পেয়ে দুর্বৃত্তরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ক্যাশ বাক্স লুটপাট এবং গুলী চালিয়ে, বোমা ফাটিয়ে অথবা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করছে ব্যবসায়ীদের। আর ভয়াবহ বিষয় হলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কিছু সদস্যও জড়িয়ে পড়েছে চাঁদাবাজিতে। চাঁদাবাজদের কাছে জিম্মি পরিবহন সেক্টরও। হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ দূরপাল্লার যানবাহনের মালিক ও চালকরা। চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিকার চাওয়া হয়েছে সরকারের কাছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, সরকারের পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য জড়িয়ে পড়েছে এসব অপকর্মে। যেসব চাঁদাবাজি সমাজের ক্ষতির কারন ওইগুলোকে মোটামুটি দুই ভাগে ভাগ করা যায় ১। তাৎক্ষণিক চাঁদাবাজি ২। সিস্টেমিক চাঁদাবাজি। এলাকায় নতুন বাড়ি তৈরি হচ্ছে। এলাকার ছেলেপেলের দিকে না তাকালে হয়! এলাকার ভালোমন্দতো ওরাই দেখে, আপনার পেশিবল না থাকলে চাঁদা দিতেই হবে। রাস্তা দিয়ে কোন এলাকার উপর দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন এলাকার উন্নয়নে আপনার পকেট থেকে কিছু খসাতেই হবে। এই টাইপের চাঁদাবাজি গুলোকে তাৎক্ষনিক হিসেবে চালিয়ে দেয়া যায়। এইসব ক্ষেত্রে আপনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনির সাহায্য অথবা কোর্টে মামলা করতে পারেন। এবার আসা যাক সিস্টেমিক চাঁদাবাজি!! এই চাঁদাবাজিটা অস্থির রকম সুন্দর। রাস্তায় বিভিন্ন পয়েন্টে দেখবেন সিএনজি, বাস জাতীয় প্রত্যেকটি পরিবহনকে একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা দিতে হয়। কোন রকম লুকোচুরির সুযোগই নেই। টিকেটের ব্যবস্থা আছে। আর রাস্তায় ট্রাফিকের চোখে পড়েছেন কাম সারছে। এইটা নিয়ম তাকে খুশি করতেই হবে। এটাকে কি চাঁদাবাজি বলা চলে? ও আপনি ফুটপাতে দোকানদারি করেন। আরে ভাই এইটাতো অবৈধ কাজ। বৈধ করতে হবে না। দেন চাঁদা। যাই হোক চোখে দেখা অনেকগুলো চাঁদাবাজি নিয়ে বললাম। তবে এতগুলো চাঁদা দিয়েও যদি ভালোভাবে চলাফেরা করা যেত!! হাইওয়ে গুলোতে চলাচল করা কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক গুলোর ড্রাইভাররা সবসময় চিন্তায় মগ্ন থাকে। কখন না যানি গাড়ি থামিয়ে দেয়। পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী গণপরিবহন থেকে দিনে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। অথচ সিটি করপোরেশন তত্ত্বাবধায়ন করলে পরিবহন খাত রাজস্ব আয়ের বড় উৎস হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজধানীর পরিবহন খাতে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ‘বিট চার্জ’, ‘লাইনম্যান চার্জ’, ‘স্টপেজ চার্জ’ নামে চলছে এসব চাঁদাবাজি। রাজধানীর অভ্যন্তরে চলাচলকারী গণপরিবহন বাস ও হিউম্যান হলারকে লেগুনা দিতে হচ্ছে এসব চাঁদা। উত্তর সিটি করপোরেশন নিয়ন্ত্রিত গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন দুই লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হচ্ছে। সিটি করপোরেশন চাইলে সিটি বাস সার্ভিস গুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করে বড় অংকের রাজস্ব আদায় করতে পারে।
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি শীর্ষ স্থাণীয় জাতীয় দৈনিকের খবর অনুযায়ী, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউক অধীনে বরাদ্দকৃত ব্যক্তিমালিকানাধীন প্লটের জিপিএস পরবর্তী উন্নয়ন কর্মকা-ে বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন পূর্বাচল উপশহরের প্লট মালিকরা। স্থানীয় সংঘবদ্ধ চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের দাবিকৃত চাঁদা না দিলেই খড়গ নেমে আসে তাদের উপর। কেউ কেউ প্লটের প্রাচীর নির্মাণ করে দেবেন বলে দাবি করছেন মূল খরচের ৩ থেকে ৬ গুণ টাকা। অধিক আর্থিক ব্যয় বহনে মালিকরা রাজি না হলেই তাদের প্লটের উন্নয়ন কাজ থেমে যায় তাদের বাঁধার মুখে। কেউ কেউ আইনের আশ্রয় নিলেও রাতের আঁধারে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তের হামলার শিকার হয় তাদের গড়া প্লটের প্রাচীর। ফলে ভেঙে দেয়া হয় তা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলাধীণ পূর্বাচল উপশহর এলাকায় ১নং থেকে ২৩নং সেক্টর পর্যন্ত প্রায় ১২টি সংঘবদ্ধ চক্র প্লটের কাজ করিয়ে দেয়ার নাম করে বাড়তি টাকা আদায় করছে। এছাড়াও রয়েছে বেশ কিছু চাঁদাবাজ চক্র। তাদের দাবিকৃত চাঁদার টাকা না দিলেই চলে তান্ডবলীলা। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা চাঁদাবাজির শিকার হয়ে বাড়তি ঝামেলা মনে করে থানায় অভিযোগ করছেন না। তবে স্থানীয় আধিবাসীদের প্লটের কাজে চাঁদাবাজদের দৌড়াত্ব্য থাকায় রূপগঞ্জ থানায় রয়েছে শতাধিক অভিযোগ। এসব অভিযোগের বেশিরভাগই চাঁদাবাজি ও প্লটের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে বাঁধা ও সন্ত্রাসী কর্মকা- বিষয়ক বলে জানা গেছে।
চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্য কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকার পাশাপাশি রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, গাজীপুর, আশুলিয়া, সোনারগাঁও, সিদ্ধিরগঞ্জ, আড়াইহাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়ও এ ধরনের চাঁদাবাজি নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের সর্বগ্রাসী থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না গণপরিবহন গুলোও। লাইন খরচের নামে তোলা চাঁদার ভাগ চলে যাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা থেকে শুরু করে অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদের পকেটে, যা খুবই দুঃখজনক। একটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদসূত্রে জানা গেছেÑ প্রতিদিন গ্যাস খরচের চেয়ে চাঁদায় খরচ করতে হয় বেশি। লাইন খরচের নামে চাঁদা দিতে হয় সাড়ে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা। এভাবে চাঁদা দিয়েই রাজধানীর রুটগুলোয় চলছে হিউম্যান হলারসহ গণপরিবহন গুলো। শুধু রাজধানীতে নয়, দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে যাত্রীবাহী পরিবহনসহ সর্বস্তরে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চাঁদাবাজরা। ফলে যাত্রীদের গুনতে হয় দ্বিগুণের বেশি ভাড়া। চাঁদাবাজি, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ভাড়া বেড়ে যায়। পথে এমন চাঁদাবাজি বন্ধ হওয়া জরুরি। এ চাঁদাবাজি বন্ধ হলে ভাড়া নৈরাজ্য অনেকটা কমে আসবে। স্বস্তি পাবেন জনসাধারণ। দেশে আইন আছে এবং সেই আইন প্রয়োগের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে। আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও অপরাধের কঠোর শাস্তিই পারে দেশজুড়ে পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে যে চাঁদাবাজি হচ্ছে, তা বন্ধ করতে। তাই চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।