ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন হচ্ছে নগরবাসীর প্রত্যক্ষ সেবক। মানুষের বসবাস ও চলাচলে যাতে বিঘœ সৃষ্টি না হয় সেটি দেখার দায়িত্বে এই সংস্থার। নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে রাজধানীকে দুই ভাগ করা হয়। কিন্তু শহরবাসীর দুর্ভাগ্য যে, সিটিকে দ্বিখ-িত এবং মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরও দুর্ভোগ যেনো দ্বিগুণ বেড়েছে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নাগরিক সেবার কার্যক্রম কার্যত ভেঙে পড়েছে। ঢাকায় ঘর থেকে বের হলেই যানজট, ময়লা-আবর্জনা, খানাখন্দ দুর্বিষহ করে তুলেছে মানুষের জীবন। দুর্ভোগই যেন নিয়তি হয়ে গেছে। প্রধান সড়ক থেকে পাড়া-মহল্লার অলিগলি পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি রাস্তারই বেহালদশা। খানাখন্দে ভরপুর থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। তারপরও যথেষ্ট কোনো উদ্যোগ নেই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং ঢাকা দুই সিটি কর্পোরেশনের।
নগরের ভাঙা রাস্তা, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, মশানিধন ও ফুটপাত মুক্ত করতে ব্যর্থতার জন্য জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নেই সংস্থাগুলোর। সেবার নামে সরকারি সংস্থাগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানাভাবে মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলছে। হোল্ডিং ট্রাক্স থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্যের ট্রেডলাইসেন্স, আয়কর দিলেও সেবা দিতে পারছে না সরকারের সংস্থাগুলো। অথচ হোল্ডিং ট্রাক্স, আয়কর ও ট্রেডলাইসেন্স নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ করতে না পারলে জরিমানা ও মামলা করা হয়।
স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমেরও লেজে-গোবর অবস্থা। মশার উপদ্রবে নগর জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। মশা দমন, মশক প্রজননস্থল যেমন- ডোবা, নালা, বিল, ঝিল, নর্দমায় নিয়মিত কীটনাশক ছিঁটানোর কথা থাকলেও সেসব বিষয় সিটি কর্পোরেশন শুধু বক্তৃতা, সেমিনার, লিফলেটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছে। বাসাবাড়ি থেকে বেরিয়ে পথে পা রাখার উপায় নেই। নানা সেবা সংস্থার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, মেরামতের নামে সড়কে পিচ-সুরকি ফেলে রাখা আর পানি জমে কাদা-আবর্জনায় সয়লাব রাস্তাঘাট যেন নাগরিকদের নিত্যসঙ্গী। বিভিন্ন এলাকার কিছু রাস্তা দিনের পর দিন নোংরা পানিতে নিমজ্জিত থাকায় কোনটা রাস্তা আর কোনটা ড্রেন-নর্দমা তা বুঝার উপায় নেই।
মূল সড়কগুলোতে খুব সকালে নিযুক্ত ঠিকাদারের তত্ত্বাবধানে ময়লা ঝাড়–দারদের যৎকিঞ্চিৎ ঝাড়– দিতে দেখা গেলেও ভেতরের সড়কগুলোতে কোনোদিন তাদের দেখা গেছে, তা বলা যাবে না। সেকেলে পন্থায় ঝাড়– দ্বারা ধূলিকণা ঝাড়– দেয়া হলেও বাতাসে উড়ে সেই ময়লা মানুষের নাকে, কানে আসবাবপত্রের ওপর পড়ছে, একই সাথে সেটি যেমন অস্বস্তিকর, তেমনি স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
মূলতঃ একটি দীর্ঘমেয়াদি সমন্বিত পরিকল্পনা ছাড়া ঢাকার দুই সিটির সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে সরকার, সংস্থা, বিশেষজ্ঞ ও ভুক্তভোগী সবার অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।