বাংলাদেশে একদিকে বাড়ছে ধর্ষণের মাত্রা অন্যদিকে বাড়ছে মানুষের উদ্বেগ। সবকিছুকে ছাড়িয়ে ধর্ষণ এক মহামারীতে রূপান্তরিত হয়েছে সারা দেশ জুড়ে। নতুন নতুন পদ্ধতি, নতুন নতুন প্রক্রিয়ায় এগিয়ে চলে ধর্ষণের হার। গণধর্ষণ, পালাক্রমে ধর্ষণ, উপুর্যোপুরি ধর্ষণ, আটকে রেখে ধর্ষণের খবর বেরোচ্ছে প্রতিদিন। আইনের কঠোরতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা কোন কিছুই যেন রোধ করতে পারছেনা ধর্ষণের মহামারী। নারীদের জন্য বিশেষ বক্ষবন্ধনী, শারীরিক কলাকৌশল ও আত্মরক্ষার নানা কৌশল নিয়ে নানা ফর্মুলা ও উপদেশবাণী প্রয়োগ করা হলেও কোন কাজে আসছে না এসব তরিকা। শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক নারী পর্যন্ত বাদ যাচ্ছে না ধর্ষকদের হাত থেকে। প্রশ্ন হল বাংলাদেশে কেন এই ধর্ষণের মহামারী এবং ধর্ষণের মহোৎসব। এর কারণ হচ্ছে চলচ্চিত্রে, টেলিভিশনে এবং সংস্কৃতিতে নগ্নতার ছড়াছড়ি এমন হয়েছে যে, দেশে নারীরা যেন শুধুমাত্র যৌনতার প্রতীক। সেখানে এমন একটি সংস্কৃতি চালু হয়ে গেছে যে, যে নারী যত নগ্ন হতে পারবে, যে নারী যত সংস্কার বিরোধী হতে পারবে তাকে ততো বেশি মূল্যায়ন করা হবে। অর্থ-বিত্ত, প্রতিপত্তি সব তাদের পায়ে লুটাবে। এর প্রভাব পড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। নারীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বিরাজ করে কে কাকে টেক্কা দিয়ে শরীর থেকে কাপড় কত ছাড়তে পারে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এদেরকেই আবার উৎসাহিত করা হয়। আমরা জানি চলচ্চিত্রের একেকজন তারকা ক্ষমতাবান যে কোন নেতা-নেত্রীদের চেয়ে বেশি মূল্যায়িত হন। তাই একদিকে গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি দেওয়ার এই চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে। এই অবস্থা বজায় রেখে ধর্ষণ মহামারী থেকে বাংলাদেশ কিছুতেই রেহাই পেতে পারে না। মানুষের ঘরে ঘরে বিস্তার ঘটিয়ে এখন মন্দিরের চৌহদ্দি খুলে তা যে ভেতরে প্রবেশ করেছে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এটা দেশের কর্মফল শুধুমাত্র।
বর্তমানে ধর্ষণের ঘটনা অনেকের কাছে খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার মনে হলেও আলোচনা সমালোচনায় অংশ নিয়েছেন সবাই। কারো দৃষ্টিতে ধর্ষণের জন্য দায়ী নারীরা নিজেই এবং তাদের পোশাকআশাক। কেউ বলছেন ধর্মীয় অনুশাসন মেনে না চলা, ধর্মীয় এবং মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় এবং নৈতিক চরিত্রের স্খলনই এর কারণ। নির্মমভাবে ধর্ষণের শিকার হয়ে তনুর মতো অনেক বোন পৃথিবী ছেড়েছে। বিচার না পেয়ে আদরের মেয়েকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাপ দিয়ে অভিমানে পৃথিবী ছেড়েছে হতোভাগা পিতা! এমন অনেক ঘটনা আজ আমরা ভুলে গেছি! সেসব চাপা পরেছে ক্ষমতার ঘৃণ্য চাদরে! টাকা আর ক্ষমতার কাছে ধর্ষিত হয়েছে বহু বোনের ইজ্জত! আইনের শাসন নাই, ধর্ষণের বিচার নাই! তাই ধর্ষকরা অট্টহাসিতে ফেটে পরে আর ডুকরে কাঁদে ধর্ষিত বোনের আত্বা! যখন ধর্ষক-লুটেরাদের ক্ষমতার দাপটে টাকার গরমে ধর্ষিতার ঋণ পরিশোধ হয়ে যায়, তখনি বন্ধু কর্তৃক বান্ধবী ধর্ষণের খবর পাওয়া যায়! মসজিদের ইমাম কর্তৃক কিশোরী ধর্ষণের খবর পাওয়া যায়! মন্দিরের পুরোহিত কর্তৃক শিশু ধর্ষণের খবর পাওয়া যায়! কি ইমাম আর কি ঠাকুর কিংবা পুরোহিত সব জায়গায় নৈতিক চরিত্রের চরম অবক্ষয়! ধর্মীয় মূল্যবোধ তো পরের কথা! নেই মানবিক মূল্যবোধ! নুণ্যতম মানবিকতা থাকলে বাবা বয়সী একজন রাক্ষস ৫ বছরের শিশুর সাথে ধর্ষণের মতো নোংরা কাজ করতে পারে? শ্বশুর হয়ে বউ মাকে ধর্ষণের মতো ঘটনার সাক্ষী এ জাতি! এমনকি বাবার হাতে মেয়েও রেহাই পায়নি! তাহলে কি দাড়ায়? সমস্যা কোথায়? এভাবেই চলতেই থাকবে? এ মহামারী থেকে সমাজকে রক্ষা করার জন্য আমাদের কি কিছুই করার নেই? দেশের নীতিনির্ধারকেরা এ জন্য কি কোনো পদক্ষেপ নিবেন না? তারা মোটেও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না! অবস্থার পর্যবেক্ষণ করে তাদেরকেই প্রথমে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নৈতিকতা, মানবিকতা, চারিত্রিক পরিবর্তন সব কিছুর আগে প্রয়োজন ধর্ষণের অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান। আর সেই সর্বোচ্চ শাস্তি হতে হবে মৃত্যুদন্ড অথবা আমৃত্যু কারাদন্ড।
ঘরে-বাইরে নারীরা যেভাবে ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, তা অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত। যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের মাত্রা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ব্যাপকহারে বেড়ে গেছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতিমাসে ৩০০টিরও বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। প্রকৃত অর্থে এ সংখ্যা আরও বেশি হবে সংগত কারণে যে, গ্রাম-গঞ্জ এমনকি শহরেও অনেকেই লোকলজ্জার ভয়ে ধর্ষণের কথা প্রকাশ করতে চান না। যেহেতু ধর্ষণের শিকার নারীটির ওপরই সামাজিকভাবে ঘৃণা বর্ষিত হয়। এমনকি এজন্য ধর্ষিতার পরিবার-পরিজন কিংবা তার অভিভাবকদেরও সুনজরে দেখা হয় না বললেই চলে। তাই অনেকে ধর্ষণের শিকার হয়েও থানায় মামলা করেন না। আর থানায় মামলা দিতে গেলেও অনেক অনাকাঙ্খিত প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় ধর্ষিতাকেই। এরপর সাহস করে যারা ধর্ষণের মামলা থানায় বা আদালতে করেন সেই মামলার সিংহভাগ অভিযুক্তই রাজনৈতিক কারণে রেহাই পেয়ে যায়। এছাড়া ধর্ষণের মামলা তদন্ত করতে গিয়েও একশ্রেণীর পুলিশ কর্মকর্তা ধর্ষিতাকেই নানাভাবে হেনস্তা করে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। নারী অধিকার বিষয়ক সংস্থা বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের হিসাব মতে, দেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত চার মাসে প্রায় দেড় হাজার ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২৫৮টি ধর্ষণ ও ৫৫টি গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় ১৫ জনকে। ধর্ষণচেষ্টার ঘটনা ঘটে ৬০টি। ২০১৭ সালের প্রথম চার মাসে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপ, নারী ও শিশু পাচার, যৌন নিপীড়ন, আত্মহত্যা, বাল্যবিয়ে, অপহরণ ছাড়াও বিভিন্নভাবে এক হাজার ৫৬৬ নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। জানুয়ারিতে ৫৮, ফেব্রুয়ারিতে ৬২, মার্চে ৭১ ও এপ্রিল মাসে ৬৭ নারী ধর্ষণের শিকার হয়। অন্যদিকে গত বছর ৮৪০ নারী ধর্ষণের শিকার হয়। তারা বলছে, আগের বছরের তুলনায় এই সংখ্যা কিছুটা কম হলেও ধর্ষণ, নির্যাতনের ধরণ ছিলো নির্মম ও নিষ্ঠুর। এ ঘটনা গুলোকে 'ধর্ষণ, গণধর্ষণ ও ধর্ষণের পর হত্যা' এই তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, যেসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে সেগুলো বেশির ভাগ আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ধর্ষণের শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদন্ড আর ধর্ষণের কারণে মৃত্যু হলে তাতে মৃত্যুদন্ডের বিধানও রয়েছে। সম্প্রতি রাজশাহী মহানগর জাতীয় পার্টির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘প্রতিদিন খবরের কাগজ খুললেই দেখি-কোন না কোন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণ আমাদের জাতীয় ক্রীড়া হয়ে গেছে। কাগজ খুললেই ধর্ষণ। কারণ কী? আমরা তো এমন ছিলাম না, মহিলাদের আমরা সমীহ করতাম, সম্মান করতাম। বিচারহীনতার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ধর্ষকরা জানে, ধর্ষণ করলে বিচার হবে না।’ আইনবিদের মতে, যৌনতা মানুষের জীবনের একটি অন্যতম অধিকার। তবে এই যৌনতাকে বিকৃত করে উপস্থাপনই হচ্ছে ধর্ষণ। ধর্ষণের সঙ্গে যৌনতার চেয়েও ক্ষমতার বিষয়টি বেশি সম্পর্কিত। আমি পুরুষ, আমার ক্ষমতা আছে যেকোনো সময় যেকোনো নারী বা শিশুকে ভোগ করার। একজন যৌনকর্মীরও অধিকার আছে তিনি কার সঙ্গে যৌনকাজ করবেন আর কার সঙ্গে করবেন না। একজন যৌনকর্মী যদি ‘না’ করেন, তা মানা নাহলে তা হবে ধর্ষণ। একইভাবে একজন স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে সহবাস করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করতেই পারেন। স্ত্রীর ইচ্ছার সম্মান না দিয়ে জোর করে সহবাস করা হলেও সেটি হবে ধর্ষণ। কিন্তু এই বিষয়গুলো সমাজে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়নি বলেই ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। ধর্ষকের হাত থেকে তিন বছরের শিশুরাও রেহাই পাচ্ছে না। পরিচিতজনদের মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনাও বাড়ছে। সবকিছুর মূলে আছে মূল্যবোধের অভাব। অবাধ পর্নোগ্রাফির বিস্তার, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্বল্প পরিচয়ের পর ওই ছেলের সঙ্গে বাছবিচার না করে মেলামেশা, বিভিন্ন চ্যানেল, বিশেষ করে পাশের দেশ ভারতের বিভিন্ন চ্যানেলে যা দেখানো হয়, তা-ও ধর্ষণের মতো অপরাধকে উসকে দিচ্ছে। বিজ্ঞাপন দেখে একটি ছোট ছেলেও জানতে পারছে, শরীরকে উত্তেজিত করতে হলে কী খেতে হবে। ছেলেমেয়েরা ইন্টারনেটে কোন সাইট দেখছে, তা-ও অভিভাবকেরা কখনো নজরে আনছেন না। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ধর্ষণের পর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিবার সামাজিকতার ভয়ে বিষয়টি গোপন রাখতে বাধ্য হয়। বনানীর ধর্ষণের ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী সাহস করে তা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এ ঘটনার ক্ষেত্রেও অনেকেই বলছেন, মেয়ে দুটো রাতে হোটেলে গেল কেন? নারীদের যেকোনো জায়গায় যাওয়ার অধিকার আছে। রাতে গিয়েছে বলেই তাঁদের ধর্ষণ করতে হবে? বারবার আলোচনায় আসছে, ওই দুই ছাত্রীর সঙ্গে ধর্ষকদের আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল। আগে থেকে সম্পর্ক থাকার সঙ্গে ধর্ষণের কোনো সম্পর্ক নেই। এই সমাজ শুধু ধর্ষণের শিকার নারীর দিকে আঙ্গুল তুলে তা-ই নয়, ওই নারীকেই প্রমাণ করতে হয়, তিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পরীক্ষায় ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ নিয়ে এত আলোচনার পরও তা বন্ধ হয়নি। বর্তমানে ধর্ষণের শিকার হয়ে অনেকেই সাহস করে মামলা করছেন। তবে ‘লিগ্যাল প্রসিকিউশন’ এখন পর্যন্ত নারীবান্ধব হয়নি। বনানীর ঘটনা এবং এর আগে রাজধানীতে মাইক্রোবাসে গারো তরুণী ধর্ষণের পর থানাগুলো যে ভূমিকা পালন করেছিল, তা সবার জানা।
ধর্ষণ কোন সাধারণ অপরাধ নয়। এটি একটি গর্হিত ও অমার্জনীয় অপরাধ। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে এ অপরাধের কঠোর শাস্তি রয়েছে। এই কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য অপরাধের মাত্রা দেশে ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এর একটি মাত্র কারণ, ধর্ষকরা শাস্তির মুখোমুখি না হয়ে নানাভাবে ছাড়া পেয়ে যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক ও ক্ষমাহীন যে কারণটি হচ্ছে তা রাজনৈতিক। এ কারণে ধর্ষণের মতো অপরাধ করেও অনেকে বেঁচে যায়। ফলে এমন অপরাধ দেশে বেড়েই চলেছে। ধর্ষণের অপরাধীদের কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়াতে একশ্রেণীর বিকৃত মানসিকতার মানুষ প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে মেয়েদের ইজ্জত-সম্ভ্রম লুটে নেবার দুঃসাহস করে। যারা ধর্ষণের মতো মারাত্মক অপরাধ করে তাদের বিবেকের মৃত্যু ঘটে। তারা মানুষ থাকে না। পশুতে পরিণত হয়। আর এদের প্রতিহত এবং নিরপরাধ নারীদের রক্ষা করতেই তৈরি হয়েছে কঠোর আইন। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে যদি ধর্ষকদের বিচারের মুখোমুখি না করা যায়, তাহলে এমন অপরাধ দিন দিন বাড়বে বই কমবে না কখনই। ধর্ষকদের আইনানুগভাবে বিচারের মুখোমুখি করতে পারলেই বাংলাদেশের মেয়েরা সমাজে নিরাপদে নির্বিঘেœ চলাফেরা করতে যেমন সক্ষম হবে, তেমনই অপরাধের সংঘটকরাও অনেকটা ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে। বিশেষত ধর্ষণ কাজে জড়িত অপরাধীদের যেন রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় না দেয়া হয় সে বিষয়টি সম্পর্কে সজাগ থেকে তাদের আইনের হাতে তুলে দেবার ব্যাপারে যতœবান থাকতে হবে সবাইকে। এছাড়া প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এ ব্যাপারে জবাবদিহির আওতায় আনাও জরুরি।
ধর্ষণ প্রতিরোধে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি, তা থেকে বের হতে হবে। ধর্ষককে দৃষ্টান্তমূলক সাজার আওতায় আনতে হবে। ২০০৩ সালে সংশোধিত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের বিচারে যে সময় নির্ধারণ করা আছে, সেই সময়ের মধ্যেই তা শেষ করতে হবে। এই আইনের বিধিমালা প্রণয়ন করাও জরুরি। সরকার এখন পর্যন্ত ভিকটিম ও সাক্ষীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারিনি। এটি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। আর ধর্ষণের জন্য শুধু পুরুষদের দায়ী না করে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবকে দায়ী করতে হবে। আর এ মনোভাব ভাঙতে হলে পুরুষদের সঙ্গে নিয়েই ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটার পর বিভিন্ন গণমাধ্যম এমনভাবে খবরটা প্রকাশ বা প্রচার করছে, তাতে বিষয়টিতে অন্যদের আরও বেশি করে সুড়সুড়ি দেওয়া হচ্ছে। এ প্রবণতা থেকে বের হতে হবে। বাংলাদেশে নারী ধর্ষণের ঘটনা আগেও ছিল এবং ভবিষ্যতেও হয়তো তা পরিপূর্ণভাবে দূর করা সম্ভব হবে না। তবে কয়েকটি পদক্ষেপ যদি রাষ্ট্রীয়ভাবে নেওয়া যায় তাহলে ধর্ষণের ঘটনা কমবে। যেমন- ব্লুøফিল্ম, পর্নসাহিত্য, অশ্লীল ম্যাগাজিন, অশ্লীল ছায়াছবি, অশালীন পোশাক, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এর নামে অশ্লীলতা, তরুণ-তরুণীদের হোটেলে অবাধ চলাফেলার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা। পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার বাড়ানো গেলেও ধর্ষণের বীভৎসতার হাত থেকে হাজারো নারীর ইজ্জতকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। ধর্ষণ প্রতিরোধে পরিবার এবং নারীদের সচেতনতাও বাড়াতে হবে। সর্বোপরি যে কোন মূল্যে দেশে ধর্ষনের মহামারী দ্রুত থামাতে হবে।