নিরক্ষরতার অভিশাপ হতে মুক্তির জন্য বহুকাল পূর্ব হতেই চলছে একক, যৌথ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা। জ্ঞান বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের দিনে পৃথিবীতে আজ ও লক্ষ লক্ষ মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে যারা নিজের নাম পরিচয়টুকু ও লিখতে পারে না। ইউনেস্কো ৮ সেপ্টেম্বরকে আন্তর্জাতিক স্বাক্ষরতা দিবসের মর্যাদা প্রদান করে। এক বিশেষ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রতি বছর এই দিবসটি পালন করা হয়। কোন বিশেষ দিবসের প্রতিপাদ্য বা স্লোগান সে দিবসের মাহাত্ব্যকে কেবল মহিমান্বিত করে না বরং তা পালনের মূল উদ্যেশ্য নতুন করে সবার সামনে উন্মোচন করে দেয়।এ বছর দিনটির প্রতিপাদ্য-“বহু ভাষার স্বাক্ষরতা”।
স্বাক্ষরতা হলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এক মানবীয় অধিকার। একসময় কেউ বর্নমালা পড়তে বা নিজের নাম লিখতে পারলেই তাকে স্বাক্ষর বলে মনে করা হতো।বর্তমানে এ ধারনা অনেকটা প্রসারিত হয়েছে। এখন স্বাক্ষরতার জন্য তিনটি শর্তের কথা বলা হয়েছে। ১.ব্যক্তি নিজ ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য বলতে পারে। ২. নিজের ভাষায় সহজ ও ছোট বাক্য লিখতে পারে। ৩.দৈনন্দিন জীবনে স্বাভাবিক হিসেব নিকেশ করতে পারে।
কেবল স্বাক্ষরতার মাধ্যমে আর্থিক মুক্তিই নয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মানসিক মুক্তি আনয়নের মাধ্যমে প্রাত্যহিক জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যে বিশেষ হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। এর মাধ্যমে অধিকার ও দায়িত্ব সম্বন্ধে সজাগ হয়ে ভাল-মন্দ বিচার করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হয় মানুষ। প্রাথমিক শিক্ষার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে স্বাক্ষরতা প্রদান করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করা সম্ভব।
আমাদের সংবিধানে (দ্বিতীয় ভাগের ১৭ নং অনুচ্ছেদে) সকল শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করনে সরকারের দায়িত্ব হিসেবে বিবৃত করা হয়েছে। সে অনুযায়ী স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করন, ২০১৩ সালে ২৬,১৯৩টি রেজিস্টার্ড বেসরকারী, কমিঊনিটি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরন করা হয়।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা, মসজিদ ভিত্তিক ও মন্দির ভিত্তিক প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচী, অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা, উপবৃত্তি প্রদান কর্মসূচি ,বিনামূল্যে পাঠ্যপূস্তক সরবরাহ, হাওড় বাওড় ও দুর্গম এলাকার শিশুদের শিক্ষার জন্য বিশেষ বিশেষ শিক্ষা কর্মসূচি গ্রহন, স্কুল ফিডিং কর্মসূচি ইত্যাদি।
স্বাক্ষরতা বয়ে আনুক সবার জন্য অনুপম, সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির সুবাতাস। স্বাক্ষরতা হোক দক্ষ হয়ে জীবন তৈরি ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার দুর্বার ও দূর্জেয় হাতিয়ার।