যশোরের শার্শা উপজেলার লক্ষণপুরে দারোগা ও তার সোর্স কর্তৃক গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন স্থানীয়রা। একইসাথে সংশয় রয়েছেন আইনজ্ঞীবীরাও। তাদের দাবি পুলিশ ক্ষমতার অপব্যবহার করায় ইতিমধ্যেই মামলার ম্যারিট নষ্ট হয়ে গেছে। তবে আলোচিত এ মামলার তদন্ত সংস্থার দাবি অপরাধী যেই হোক সেটি বিবেচনায় নেয়ার সুযোগ নেই, তদন্তে প্রমাণিত হলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত ২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে নিজ বাড়িতে গণধর্ষণের শিকার হন দুই সন্তানের জননী ওই গৃহবধূ। তার অভিযোগ স্থানীয় গোড়পাড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই খায়রুল আলম ও তার সোর্স কামারুল তাকে ধর্ষণ করেছে। এ ছাড়া লতিফ ও কাদের নামে আরো দুজন সে সময় ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল। পরদিন ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য সরাসরি যশোর জেনারেল হাসপাতালে গেলে বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর পুলিশ ওইদিনই তাকে হেফাজতে নিয়ে ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করে মামলা নেয় এবং তিনজনকে আটক করে। তবে মামলায় প্রধান অভিযুক্তের নাম বাদ দেয়া হয়। আর এতেই ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে স্থানীয়দের মনে দানা বেধেছে নানা সন্দেহের। তাদের ধারণা অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে বাঁচাতেই মামলায় তার নাম রাখা হয়নি। তাদের দাবি এর আগেও গোড়পাড়া ক্যাম্পের আরেক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সাংবাদিক হত্যার অভিযোগ উঠলেও পার পেয়ে যান তিনি এবং এবারও তার পুণরাবৃত্তি ঘটতে পারে। তবে স্থানীয়দের একটাই দাবি ন্যায় বিচার নিশ্চিত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হোক।
গোড়পাড়া এলাকার মমিনুর রহমান বলেন, গৃহবধূ ধর্ষিত হয়েছে এটা প্রমাণিত। ধর্ষণকারী যেই হোক না কেন তার যেন শাস্তি হয় এটা আমাদের দবি। তিনি যদি ন্যায়বিচার না পান তাহলে আমাদের সমাজে ধর্ষণ আরো বেড়ে যাবে। ধর্ষণকারীর উপযুক্ত শাস্তি চাই। যাতে আমাদের সমাজে আর কোন মেয়ে ধর্ষণের শিকার না হয়। একই গ্রামের শামীম হোসেন বলেন, ধর্ষিতা যেন ন্যায়বিচার পায়। যারা প্রকৃত অপরাধী তারা শাস্তি পাক। আর যারা নিরাপরাধী তারা যেন মুক্তি পায়। রক্ষক যতি ভক্ষক হয়, তাহলে কোনদিন এই গৃহবধূ ন্যায়বিচার পাবে না।
পুলিশ কর্মকর্তা ও তার সোর্স কর্তৃক গৃহবধূ ধর্ষণের ঘটনায় মামলায় অভিযুক্ত দারোগার নাম না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে লক্ষণপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন বলেন, ২০০৮ সালে সাংবাদিক জামাল হোসেন হত্যার সাথে তৎকালীণ গোড়পাড়া ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মাসুদের জড়িত থাকার অভিযোগ থাকলেও তার কোন শাস্তি হয়নি। ধর্ষণের ঘটনায় এসআই খায়রুল জড়িত থাকলে অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানান। তিনি বলেন, এ ঘটনা যেন সাংবাদিক জামাল হত্যার মত না হয়।
এদিকে, ন্যায় বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আইনজীবী বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট যশোরের কো-অর্ডিনেটর অ্যাডভোকেট মোস্তফা হুমায়ুন কবীর বলেন, শার্শায় যে গৃহবধূ ধর্ষণ হয়েছে তার ন্যায়বিচার নিয়ে অবশ্যই সংশয়ে আছি। কারণ ইতোমধ্যে মামলার ম্যারিট নষ্ট করে দিয়েছে পুলিশ। সনাক্তকরণের যে প্রক্রিয়া রয়েছে যেটাকে আইনের ভাষায় টিআই প্যারেড বলা হয়। সেটা আইন সম্মতভাবে হয়নি। সনাক্তকরণ প্রক্রিয়া হলো পিআরবি এক্টের ২৮২ ধারায় বলা হয়েছে একজন ম্যাজিস্ট্রটের উপস্থিতিতে অভিযুক্ত আসামির চেহারার মত ৮ জনকে হাজির করে কোন রকম চাপ প্রয়োগ ছাড়া ভূক্তভোগী আসামিকে চিহিৃত করবে। কিন্তু সেটা করা হয়নি। অভিযুক্ত মূল আসামির নাম মামলায় আসেনি।
এ বিষয়ে খুলনা বিভাগীয় পিবিআই পুলিশ সুপার আতিকুর রহমান মিয়া বলেন, একটি অপরাধ সংগঠিত হয়েছে। অপরাধ যে করেছে সেই অপরাধী। এখানে অন্য কিছু বিবেচনা করার সুযোগ নেই। অভিযোগ গ্রহণের আগেই আসামি সনাক্তে পুলিশের পদক্ষেপ আইনত হয়নি। যে কারণে মামলার থেকে নাম বাদ গেছে অভিযুক্তের।