জয়পুরহাটের কালাই উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো নজর কাড়া রূপে সেজেছে। দেখলে মনে হবে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো যেন একেকটি বাংলাদেশ। উপজেলার ৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিটি ভবনই লাল সবুজের রং আঁকিয়ে জাতীয় পতাকার চিত্রে মুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এখন আর কাউকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় খুঁজতে হবে না। লাল-সবুজ পতাকায় মোড়ানো ভবন দেখলেই বুঝবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পেশাদার শিল্পীদের দিয়ে ভবনগুলো অঙ্কন করায় জাতীয় পতাকায় মোড়ানো দৃষ্টিনন্দন স্কুল ভবনগুলো উপহার দেয়া হয়েছে শিশুদের আর প্রতিটি স্কুলকে দেখলেই মনে হয় যেন একেকটি লালসবুজের বাংলাদেশ।
সরেজমিনে ও উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, কালাই উপজেলায় ৪৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এব মধ্যে ৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি ভবন, দরজা জানালা লাল সবুজের রং আঁকিয়ে জাতীয় পতাকার চিত্রে মুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এমন রূপে সাজানোর ফলে বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীরা সহজে জাতীয় পতাকার রং জানতে ও বুঝতে পারবে। সেই সঙ্গে লাল-সবুজ রংগে বিশেষত্ব সম্পর্কে অবগত হয়ে শহীদদের ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে শিশু শিক্ষার্থীরা।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপকরন হিসেবে অফিস কক্ষসহ প্রতিটি শ্রেণীকক্ষে মনীষি ব্যক্তিদের ছবি, ফল, ফুল, নদী ও বাঘ ছবি আঁকা রয়েছে। কোন কোন স্কুলের ভেতরের দেয়ালগুলোতে একইভাবে মনোরম চিত্রে শোভায়িত করা হয়েছে। আর সেখানে মুক্তিযুদ্ধের ভিবিন্ন চিত্র এঁকে তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমান ওইসব বিদ্যালয়গুলো দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসা ও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বেড়েছে।
মাত্রাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফজিলাতুননেছা তমা ও রাহাদুর ইসলাম বলে,আগে আমাদের স্কুলটি দেখতে তেমন ভালো লাগত না। এখন নতুন ভাবে রং করার পর স্কুলে আসতে অনেক ভালো লাগে। উপজেলার মধুবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে নাজমুন নাহার নামের এক অভিভাবক বলেন, আমাদের সময়ে এই ধরনের স্কুল ছিলোনা। এমন সুন্দর বিদ্যালয়গুলো পেয়ে আমরা খুবই খুশি হয়েছি। এতে পড়াশুনার মান অনেক বেড়েছে।
উপজেলার তেলিহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ ফরিদ উদ্দিন বলেন, আমাদের বিদ্যালয়কে লাল-সবুজ রংগে সাজানোর জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে মৌখিক নির্দেশনা আছে। সে কারণে সংস্কারের সময় আমরা বিদ্যালয়টিকে নতুন করে রং করেছি। লাল সবুজ পতাকায় মোড়ানো ভবন মানেই আমাদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা দেশপ্রেমের চেতনাসহ স্কুলে আসা ও পড়াশোনা প্রতি আগ্রহ বাড়বে।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা মুনীশ চৌধুরী বলেন, ওইসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের পতাকা চেনা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত জাঁতি গঠন এবং আমরা একটি ঐক্যবদ্ধ জাঁতি সেটা তারা বোঝবে ও জানতে পারবে।
কালাই উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোছাঃ ইতিয়ারা পারভীন বরেন, শিশুদের স্কুলগামী করা, ঝরেপড়া রোধ, জাতীয় পতাকা ও সঙ্গীতের প্রতি শ্রদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধে শিক্ষা হাতেখড়ি দেয়ার লক্ষ্যেই আমরা এক ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ নিয়েছি। এই উপজেলায় ৪৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৩০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি ভবন, দরজা জানালা লাল সবুজের রং আঁকা হয়েছে। আর বাকি ২৪টি ক্ষুদ্র মেড়ামতের অর্থ পেরেই তা বাস্তবায়ন করা হবে।
কালাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন বলেন, কালাই উপজেলাতে যোগদানের পর থেকেই এই উপজেলাকে নতুন করে সাজানো হচ্ছে। জাতীয় পতাকার আদলে রং করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ নিয়েই বড় হয়ে উঠার পাশাপাশি দেশপ্রেমের সাথে পরিচিত হবে আমি মনে করি।