দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে অসংখ্য ক্লিনিক-হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এগুলোর ভাল দিক হল মানুষ ঘরেই কাছেই চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে। ছোটখাট কাজ যেমন, রক্ত, কফ, প্র¯্রাব, জন্ডিস ডায়াবেটিস ইত্যাদি পরীক্ষার জন্য বড় শহর বা বিভাগীয় পর্যায়ে যেতে হয় না। এতে বড়বড় হাসপাতালগুলোতে যেমন রোগীর অতিরিক্ত চাপ কমছে তেমনি সাধারণ মানুষও উপকৃত হচ্ছে। তবে এই ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো তখনই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যখন অনভিজ্ঞ ও হাতুড়ে ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।
পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, ফরিদপুরে প্রসূতির পেটের ভেতর গজ-ব্যান্ডেজ রেখেই সেলাই করার সাড়ে তিন মাস পর ফের অস্ত্রোপচার করে তা বের করা হয়েছে। ১৩ আগস্ট জেলা শহরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকার বেসরকারি হ্যাপি হাসপাতালের চিকিৎসক স্বপন কুমার বিশ্বাস ফরিদা বেগম (২৬) নামে এক নারীর পেটে অস্ত্রোপচার করে এই গজ-ব্যান্ডেজ পেয়েছেন। এর আগে গত ২৫ মে জেলা শহরের পশ্চিম খাবাসপুর এলাকার বেসরকারি সাফা মক্কা হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে ফরিদার মেয়ে হয়। এর তিন দিন পর ফরিদাকে ছাড়পত্র দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তার পেটেব্যথা দিন দিন বাড়তে থাকে। শেষে হ্যাপি হাসপাতালে নিয়ে আলট্রাসনোগ্রাম করলে গজ-ব্যান্ডেজ মেলে। চিকিৎসক স্বপন জানান, ওই নারীর অস্ত্রোপচার করে পেট থেকে কয়েক ইঞ্চি পরিমাপের এক টুকরো গজ-ব্যান্ডেজ বের করা হয়েছে। রোগীর অবস্থা বেশ সংকটাপন্ন ছিল। সিজারের সময় রোগীর পেটে গজ-ব্যান্ডেজ রেখেই সেলাই করা হয়। সেটা পচে রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। তবে আশার বিষয় হল বর্তমানে ওই রোগী আশংকামুক্ত ও সুস্থ আছেন।
অস্ত্রোপচারের সময় এই গজ-ব্যান্ডেজ পেটে রেখেই সেলাই করা কখনই সুষ্ঠু চিকিৎসা নয়। দেশের আনাচেকানাচে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা এসব চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের কাছে বহুদিন থেকেই রোগীরা জিম্মি। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রশাসনের নিয়মিত তদারকি নেই। আর অনেকগুলোর অনুমোদনও দেওয়া হয় মালিদের রাজনৈতিক সমর্থন ও মোটা টাকার বিনিময়ে। এসব ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকেন না, আর থাকলেও চুক্তির ভিত্তিতে অল্প কিছু সময়ের জন্য এসে রোগীদের দেখে যান। তাড়াহুড়ো করে চিকিৎসা দিতে গেলে গড়বড় যে হবে সেটাই স্বাভাবিক।
এছাড়া চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও অহরহ ঘটছে। ফরিদপুরের ঘটনার একই দিনে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে দুটি নবজাতকের মৃত্যুর হয়েছে। এঘটাতেও চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনেছেন নবজাতকদুটির স্বজনরা।
ফরিদপুর ও জামালপুরে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে তার জন্য দায়ী চিকিৎসক ও ক্লিনিক মালিকের বা কৃর্তপক্ষকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হোক। যারা এধরণের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত তারা অবশ্যই অপরাধী। আর অপরাধীরা ছাড় পেয়ে গেলে সমাজে অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যায়।