আমি অসভ্য, নিষ্ঠুর, খুনি; তা না হলে ক্রসফায়ারে সুখ পাই কি করে? বিচার বহিভূত হত্যা তথা ক্রসফায়ারের বিরোধীতা করে এযাবৎ বহু লেখা লিখেছি। বিচার না করেই একজন মানুষকে বন্ধুক যুদ্ধের গল্প সাজিয়ে দুনীয়া থেকে বিদায় করার পক্ষে আমি নই। সেই আমিই ফেসবুকে আমার ওয়ালে ষ্ট্যাটাস দিয়েছি “মাদক ব্যবসায়ী এবং ভেজাল কারবারীদের ক্রসফায়ার দেয়া হউক”। এমন কথা অন্তত কোন সভ্য মানুষ বলতে পারে না। অস্যভ্য আর নিষ্ঠুরদের কাতারে থেকেই আমি ওদের ক্রসফায়ার দাবি করেছি। এটা খুনের সামিল। খুনকে সমর্থন করা। তাই করেছি। বেশ করেছি। তাতে যদি আমার ফাঁসি হয় হউক। তবুও দেশে থেকে ভেজাল খাদ্য এবং মাদক নিয়ন্ত্রন হউক।
রাগঢাক না রেখেই বলি, মাদক নিয়ন্ত্রনে কোন সরকারই সচেষ্ট ছিলো না। উদাসিন ছিলো। মনে হয় মাদক ব্যবসায়ীদের ভয় পেতো সব সরকার। সরকারের এমন দুর্বলতায় প্রশাসনের লোকজনও মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদকের ভয়াবহতা উপলব্ধি করেছেন। তিনি নির্বাচনকে সামনে রেখেও মাদক ব্যবসায়ীদের পরোয়া করেননি। মাদকের কারনে দেশ আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, যুব সমাজ ধ্বংশ হচ্ছে আর এ চিন্তা থেকেই তিনি মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন। আর তাতেই প্রশাসন জেগে উঠেছে। থ্যাংস্কস মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাকে। আপনার নির্দেশে সারা দেশে মাদক ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ধড়পাকোড় চলছে। অল্প কয়েক দিনে ক্রসফায়ারে বেশ ক’জন মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে, অনেক মাদক ব্যবসায়ী দেশ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে। এ ধারাবাহিকতা অব্যহত রাখলে দেশে মাদক নিয়ন্ত্রন হবেই; হবে। মানুষ মরলে দেশের মানুষ খুশী হয় দেখিনি কখনো, কিন্তু মাদক ব্যবসায়ীরা ক্রসফায়ারে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে আর সবাই তাতে বাহবা দিচ্ছে। আসলে মাদকের বিষয়ে দেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পরেছে। মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদকসেবিরা দেশের মানুষকে এতটা বিপাকে ফেলে দিয়েছে যে তারা এখন তাদের মৃত্যু কামনা করছে।
মাদক সর্ব্বকালে ছিলো, এখনও আছে। ছোট বেলায় দেখতাম পাশের বাড়ির নুরা চাচা গাঁজা খেয়ে ঝিম ধরে থাকতেন। কেউ তার কাছে গেলে তিনি পারলে উপকার করতেন, কারো ক্ষতির চিন্তা কখনো করেননি। দিলদরিয়া মানুষ ছিলেন নুরা চাচা। এখন দেখি নেশা করে মানুষ বাবা-মাকে, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, আতিœয়-স্বজন, প্রতিবেশিকে হত্যা করে, ছিনতাই, ডাকাতি, রাহাজানী করে। নেশা এখন ইউনিট পর্যায়ে চলে এসেছে। ইয়াবা, ফেন্সিডিল আনতে গিয়ে প্রতিদিন দেশ থেকে কোটি কোটি টাকা মিয়ানমার আর পশ্ববর্তী ভারতে পাচার হয়ে যাচ্ছে। নেশা খেয়ে দেশের মানুষ শরীরে নানা রোগ বাধাচ্ছে; যার সর্বশেষ পরিনতি মৃত্যু। একজন নেশাগ্রস্থ্য মানুষ কেবল অন্যকে মারে না, নিজেও নিজেকে তিলেতিলে শেষ করে ফেলে।
প্রশ্ন একটাই দেশ থেকে মাদক নিয়ন্ত্রণ হয়না কেন? যারা মাদক নিয়ন্ত্রণ করবেন কি করছেন তারা? মাদক পাচার, ব্যবসা ও ব্যবহারকারীর ক্রমপ্রসার রোধকল্পে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পর্যায়ে নানারকম কার্যক্রম দেখা গেলেও তেমন কোনো ইতিবাচক ফল মিলছে না। মাদক শুধু একজন ব্যক্তি কিংবা একটি পরিবারের জন্যই অভিশাপ বয়ে আনে না, দেশ-জাতির জন্যও ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনছে। নানারকম প্রাণঘাতী রোগব্যাধি বিস্তারের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও খারাপ করে তুলছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতায় দেশের অভ্যন্তরে মাদকের বিকিকিনি এবং বিভিন্ন সীমান্তপথে দেশের অভ্যন্তরে মাদকের অনুপ্রবেশ নিয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগও দীর্ঘদিনের। এবার প্রত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে মাদক ব্যবসার অত্যন্ত নিরাপদ স্থানগুলোর একটি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। কারারক্ষীদের সতর্ক পাহারা থাকতেও যদি কারাগারে মাদক ঢুকতে পারে তাহলে সারাদেশের অবস্থা যে কী তা সহজেই অনুমান করা যায়।
এ যাবত মাদক সেবনের কুফল সম্পর্কে মহাসমারোহে আলোচনা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম হয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে বিপুল অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। বিভিন্ন এনজিও মাদক সেবন নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। মাদক পাচার, বহন ও ব্যবহারের বিভিন্ন শাস্তি রয়েছে। তবু মাদক ব্যবহার কমেনি। ফেনসিডিল, গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবা, প্যাথেডিনের ব্যবসা রমরমা। নারী, পুরুষ উভয় শ্রেণীর মধ্যে মাদক সেবন প্রবণতা বাড়ছে। ইন্টারনেটের যুগে বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসন এদেশের কোমলমতি ছাত্রছাত্রীকে সমকামী, নেশাগ্রস্ত ও পশুপাখি সহযোগে বাস করার মানসিকতা তৈরি করছে। ঘুমের ওষুধ, হেরোইন, গাঁজা, এমনকি কুকুর মারার ইনজেকশন সেবন করছে মাদকসেবীরা। বিষ শরীরে ঢুকিয়ে নেশা করার মতো অভ্যাস গড়ে উঠছে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে। এ ব্যাপারে প্রশাসন নির্বিকার। কাজের কাজ কিছুই করে না । আর করবেই বা কেন? মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন জানে এসব। জানে কোথায় মাদকদ্রব্য বিক্রি হয়, কোথা থেকে আসে এসব আর কারাই বা বিক্রি করে তা। এর সবই তাদের নখদর্পণে। যদিও এসব ধরার দায়িত্ব তাদের। কিন্তু মাদক ব্যবসায়ীদের ধরাতো দূরের কথা, সংশ্লিষ্টরা এর পাড় ঘেঁষেও দাঁড়াতে রাজি নয়। সময়মত মাসোহারা পেলেই তারা তুষ্ট থকেন। নিজেদের উদর পূর্তি হলেই হলো। এ ব্যাপারে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের বক্তব্য ছিলো এমন-কোথায় মদ? কোথায় ফেনসিডিল? কোথায় অস্ত্র? কোথায় হেরোইন? যেন কিছুই জানেন না তারা। আর জানবেনইবা কেন? নগদ পেলেতো সবার মুখেই কুলুপ এঁটে থাকে; তখন চোখ হয় অন্ধ। আর এ সুযোগে নেশার রাজ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে গোটা উপজেলার যুবসমাজ। এগুলোকে ঘিরে পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ঘটছে সহিংস ঘটনা। বেড়েছে চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি। তবে মাদক বিক্রেতাদের যে পুলিশ একেবারেই ধরছে না তা নয়। মাঝে মাঝে মাদকসহ ২/৪ জনকে গ্রেফতার করা হলেও মাদক বিক্রেতারা আইনের ফাঁক ফোকরে আবারও জেল থেকে বেরিয়ে এসে পুনরায় ব্যবসা পরিচালনা করছে।
আমাদের বর্তমান সমাজ জীবনে মাদকের ব্যবহার সবাইকেই উদ্বিগ্ন করেছে। এর বিষাক্ত ছোবল অকালে কেড়ে নিচ্ছে অনেক প্রাণ। অনেক সম্ভাবনাময় তরুণ-তরুণী হচ্ছে বিপথগামী। এ থেকে পরিত্রাণের আশায় ১৯৯০ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন (১৯৯০ সালের ২০ নং আইন) প্রণীত হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনকল্পে ওই আইন ১৯৯০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি প্রণয়ন করা হয়। ওই আইনের ২(ঠ) ধারায় মাদকের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। সে মতে মূলত অপিয়াম পপি বা তৎনিঃসৃত আঠালো পদার্থ; আফিম; আফিম থেকে উদ্ভূত মরফিন, কোডিন, হেরোইন ইত্যাদি এবং এদের ক্ষারগুলো; শতকরা ০.২% এর অধিক মরফিনযুক্ত যে কোনো পদার্থ, কৃত্রিম উপায়ে তৈরি আফিমের সমধর্মী দ্রব্য যথাথ পেথিডিন, হাইড্রোমরফিন, ডিমেরাল, বেটাপ্রোডাইন ইত্যাদি, কোকা পাতা এবং তা থেকে উদ্ভূত সব দ্রব্য, কোকেন এবং ০.১% এর অধিক কোকেনযুক্ত যে কোনো পদার্থ অথবা কোকেনের যে কোনো ক্ষার, চরস, হাশিশ, গাঁজাগাছ, গাঁজা, ভাংগাছ, ভাং, গাঁজা বা ভাং সহযোগে প্রস্তুত যে কোনো পদার্থ, এলকোহল এবং ০.৫%-এর অধিক এলকোহলযুক্ত যেকোনো পদার্থ, রেক্টিফাইড স্পিরিট এবং তৎসহযোগে যে কোনো ওষুধ বা তরল পদার্থ, বিয়ার, বারবিচুয়েটস, তাড়ি, পচুই, মেথিলেটেড স্পিরিট ইত্যাদি দ্রব্য মাদক হিসেবে পরিচিত। ভারতে তৈরি ফেনসিডিল সিরাপ আমাদের দেশে মাদক হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই সিরাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান আফিম থেকে উদ্ভূত কোডিন, এই কারণেই ফেনসিডিল সিরাপ সেবন করলে মাদকতা আসে। তাই ফেনসিডিল সিরাপ মাদক হিসেবে পরিচিত। এলকোহল ব্যতীত অন্য কোনো মাদকদ্রব্যের চাষাবাদ, উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বহন, পরিবহন, আমদানি-রফতানি, সরবরাহ, ক্রয়, বিক্রয়, ধারণ, সংরক্ষণ, গুদামজাতকরণ, প্রদর্শন, প্রয়োগ ও ব্যবহার ওই আইনের ৯ ধারায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিংশ শতাব্দীর নবম দশকে (১৯৮১ থেকে ১৯৯০ সাল) বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে মাদকের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় বিদেশ থেকে আসা মাদক সম্পর্কিত অপরাধের বিচার করা হতো ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন অনুসারে। সেখানে শুধু শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরাপথে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্য দেশে নিয়ে আসা বা নিজ হেফাজতে রাখার অপরাধেই আসামির বিচার হতো। জনজীবনে ব্যাপক ক্ষতি সাধনকারী এই মাদকসংক্রান্ত অপরাধ দমনের জন্য ওই আইন পর্যাপ্ত ছিল না। তাই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ এবং মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনকল্পে ১৯৯০ সালে 'মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন' প্রণয়ন করা হয়। ১৩৯৬ বঙ্গাব্দের ১৯ পৌষ মোতাবেক ১৯৯০ সালের ২ জানুয়ারি তারিখ থেকে এ আইন কার্যকর হয়। কিন্তু কুড়ি বছরেরও অধিককাল পথপরিক্রমায় মাদকদ্রব্য ব্যাপকভাবে নিযন্ত্রিত হয়নি। এর ব্যবহার এবং প্রসার বেড়েই চলেছে। অভিভাবকরা আজ চিন্তিত তাদের সন্তানদের মাদকাসক্তি নিয়ে। মাদকের হিংস্র ছোবল থেকে সারা জাতি চায় আত্মরক্ষা করতে। আইনের কার্যকর প্রয়োগ হয়নি বলেই আজ মাদক নিয়ে এতো সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বেড়েছে উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ।
আশির দশকে বাংলাদেশে মাদকের বিস্তার শুরু হয় মর্মে বিভিন্ন তথ্য মেলে। এ সময় লুকিয়ে-চুরিয়ে, প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক বিক্রি করা হতো। মাদক বিক্রি এখন আর অতটা গোপনে নেই বলেই প্রতীয়মান হয়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা যায়, রাজধানীতে ডিজে পার্টির নামে বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় মাদকের রমরমা আসর বসে। এখানে সাধারণত ধনী পরিবারের তরুণ-তরুণীদের যাতায়াত। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গামী তরুণ-তরুণীরাই মূলত মাদকের নেশায় বুঁদ। মাদক এখন আর অলিতে-গলিতে নয়, এর বিস্তার ঘটেছে ভদ্র সমাজে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও মাদকের ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে বলে এর আগে উলে¬খ করেছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব। আর এবার খোদ কারাবেষ্টনীতে মাদকের নিরাপদ বিস্তারের কথা জানা গেল। এ ঘটনাকে শর্ষের মধ্যে ভূত বলেই অভিহিত করা যায়।
দেশের প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় মাদকদ্রব্য বিকিকিনির বিষয়টি এ দেশে বলতে গেলে ওপেন সিক্রেট। বিভিন্ন সময়ে পুলিশি অভিযানে মাদকদ্রব্য আটক ও এর সঙ্গে জড়িতদের আটকের কথা শোনা গেলেও মাদক ব্যবসার নেপথ্যে থাকা 'গডফাদার'দের আটক করা হয়েছে কিংবা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে এমন কথা শোনা যায় না। ফলে মাদকবিরোধী নানা অভিযানের কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারো নতুন করে মাদক ব্যবসার প্রসার ঘটে। মাদক ব্যবসায়ীদের প্রধান টার্গেট হচ্ছে তরুণ সমাজ। দেশের তরুণ সমাজ মাদকের ভয়াবহ প্রভাবে বিপথগামী হচ্ছে। মাদকের নীল ছোবলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাদের আগামী প্রজন্ম। যা একটি দেশের ভবিষ্যতের জন্য ভয়াবহ দুঃসংবাদ বই নয়। সত্য যে, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার প্রকট রূপের পেছনে মাদক অন্যতম বড় একটি উপসর্গ হয়ে দেখা দিয়েছে। হত্যাকান্ড, ইভটিজিং, ছিনতাই, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধের ধরন বিশ্লেষণে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর দায়িত্বশীলরাও চমকে যাচ্ছেন। উদ্বেগের বিষয় হলো, নেশার জগতে নিত্য যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মুখ। মাদকের কারণেই গত বছর পুলিশের এক বড় কর্মকর্তা সস্ত্রীক খুন হন মেয়ের হাতে। এরপরও মাদকের বিস্তার রোধে আইনি সাফল্য যে খুব একটা নই তা মনে করার যৌক্তিকতা রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে অসাধুদের অস্তিত্ব যেমন এখনো রয়েছে তেমনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতেও যে রয়েছে এ অভিযোগ তোলা যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মাদক বিকিকিনির অর্থের বড় একটি অংশ যায় কারারক্ষীদের পকেটে। বাকি অংশ কয়েদি এবং মাদক ব্যবসায়ীদের। কারাগার মাদক ব্যবসার নিরাপদ স্থান হলে এর মতো উদ্বেগজনক ঘটনা আর কী হতে পারে?
মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন শুধু নগর-মহানগরেই সীমাবদ্ধ নেই, গ্রামবাংলা পর্যন্ত মাদক এখন সহজলভ্য। হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় মাদক। তবে মাঝেমধ্যে মাদকদ্রব্য বহনের দায়ে কেউ কেউ ধরা পড়লেও মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকে। দৃশ্যের আড়ালে এই যে অদৃশ্য মহাশক্তিধর চক্রটির জন্যই মাদকের ক্রমবিস্তার রোধ হয়ে উঠেছে অসম্ভব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে দেশে মাদক নিয়ন্ত্রনের ব্যাপক কাজ চলছে। এবার যদি কিছু একটা হয়। আমরা মনে করি মাদক সংশ্লিষ্ট চুনোপুঁটি থেকে রাঘব-বোয়াল পর্যন্ত প্রত্যেকের ব্যাপারেই আইন প্রয়োগে কঠোরতা দেখাতে হবে। মাদক ব্যবসায়ীদের কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আইনের কঠোর প্রয়োগই মাদকের ভয়াবহ বিস্তার রোধে সহায়ক হতে পারে।